চতুর্দশ
পঞ্চম গ্রহটি ছিল খুবই চমৎকার। সবচেয়ে ছোট। কোন রকমে একটা চেরাগ আর সেটা জ্বালানোর জন্য একটা লোকের যায়গা ছিল এগ্রহে। খোকা কিছুতেই বুঝতে পারল না। কোন বসতি নাই, আকাশের এমন একটা গ্রহে বাতির কি দরকার।
অথচ সেটা জ্বালানোর জন্য একটা লোকও রাখা হয়েছে।
হয়ত ভালই হল যদিও লোকটা একটু পাগলা ধরনের। কিন্তু রাজা, যাদুকর, ব্যাবসায়ী এবং মাতাল এদের মত এত পাগল সে নয়। তার কাজটার একটা অর্থ আছে। তার বাতির আলো জগৎ-এ একটা নতুন তারা বা একটা নতুন ফুল ফোটায়।
আলোটা নিভিয়ে দিলে তারা বা ফুলটা ঘুমিয়ে যায়। এটা অবশ্যই একটা সুন্দর কাজ। আর সুন্দর বলেই কাজটা খুব প্রয়োজনীয়।
গ্রহে এসেই খোকা লোকটাকে বিণীত ভাবে বলল:
নমস্কার! বাতিটা নেভালেন কেন?
নমস্কার! আমার উপর আদেশ আছে। জানাল লোকটা।
আদেশ মানে কি?
আদেশ? বাতি নেভানোর। শুভ সন্ধ্যা। এই বলে লোকটা আবার বাতি জ্বালাল।
এখন আবার বাতিটা জ্বালালে কেন?
এরকম আদেশই আছে আমার উপর। লোকটা জবাব দিল।
খোকা বলল: বুঝতে পাড়লাম না।
লোকটা বলল এটা বুঝার মত নয়। আদেশ মানে আদেশ। শুভদিন বলে লোকটা বাতিটা আবার নেভাল। আর লাল রং-এর একটা রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছল।
আমি খুব কঠিন একটা কাজ করছি। কাজটা আগে এত কঠিন ছিলনা। সকালে বাতি নেভাতাম আর রাতে জ্বেলে দিতাম। দিনের বাকি সময়টা আরাম করে, আর রাতটা ঘুমিয়ে কাটাতাম।
তা আদেশটা পাল্টাল কবে থেকে?
আদেশ পাল্টায়নি।
এটাইতো দুঃখের ব্যপার। গ্রহটা দিন দিন তার ঘুরার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে। আদেশ তো একই আছে। দুঃখ করে লোকটা বলল।
কিন্তু ? খোকা কিছু বলার আগেই লোকটা বলল:
কিন্তু এখন গ্রহটা মিনিটে একবার আন্বিক গতি শেষ করে।
এবং আমি বিশ্রামের জন্য এক মিনিট সময়ও পাই না। মিনিটে একবার বাতি জ্বালাই, মিনিটে একবার বাতি নেভাই।
মজার ব্যাপার! তোমার এখানে এক মিনিটে এক দিন।
ব্যাপারটা কোন ভাবেই মজার নয়। এভাবে হিসাব করলে একমাস যাবৎ তোমার সাথে কথা বলছি।
বলল লোকটা।
এক মাস! অবাক হল খোকা।
হ্যাঁ, তিরিশ মিনিট তোমার হিসাবে কিন্তু এখানে মিনিটে একদিন, তিরিশ মিনিট মানে তিরিশ দিন। বলেই লোকটা আবার বাতি জ্বালালো।
খোকা লোকটাকে পছন্দ করল।
অক্ষরে অক্ষরে আদেশ পালন করে, এমন মানুষ কদিচিৎ মেলে। তার সূর্য্যাস্তের কথা মনে পড়ল। যেগুলি দেখতে চেয়ারটা একটু এগিয়ে নিলেই হত। লোকটাকে সাহায্য কারর ইচ্ছায় খোকা বলল:
যান! আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি, যাতে তুমি একটু বিশ্রাম নিতে পার। অবশ্য যদি তুমি চাও।
আমার সব সময় একটু বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে। লোকটা জানাল।
বিস্বস্ততা এবং অলসতা একই সাথে সম্ভব। খোকা বলতে লাগল: তোমার গ্রহটি তিন লাফেই ঘুড়ে আসা যায়। তুমি এমন ভাবে যাবে যাতে সব সময় সূর্য্যের আলো তোমার উপর পড়ে।
বিশ্রাম নিতে চাওতো ধীরে ধীরে চলো। এবং দিনটি তোমার ইচ্চেমত ধীর্গ হবে।
মজা করনা, আমার জীবনে ঘুমের মত জরুরী প্রয়োজন আর কিছুর নেই।
তাহলে তোমার সমস্যার কোন সমাধান আমার যানা নেই।
সমাধান নেই! শুভ দিন।
লোকটা আলোটা আবার নেভাল।
যেতে যেতে খোকা ভাবল: সবাই লোকটাকে গাধা মনে করবে। রাজা, যাদুকর, মাতাল, ব্যাবসায়ী এরা সবাই। আমার কাছে একমাত্র এই বাতি জ্বালানোর লোকটাকেই হাস্যকর মনে হয়নি। করণ: সে নিজেকে নিয়ে নয়, অন্য কারো জন্য ব্যাস্ত।
দীর্ঘ নিস্বাষ ছেড়ে খোকা নিজে নিজে ভাবল: এই একটি মাত্র মানুষ পেলাম, যার সাথে আমার বন্ধুত্ব সম্ভব। কিন্তু তার গ্রহ সত্যিই খুব ছোট। দুজনার জায়গা সেখানে নেই। খোকার অজান্তেই এই গ্রহটির জন্য খুব মায়া হচ্ছিল। বিশেষ করে মাত্র চব্বিশ ঘন্টায় এক হাজার চারশ চল্লিশটা সূর্য্যাস্ত দেখার লোভে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।