চর্তুথ গ্রহটা ছিল একজন ব্যাবসায়ীর বাসস্থান। ব্যাবসায়ী লোকটা এত ব্যাস্ত ছিল যে, খোকার আগমনে হালখাতা থেকে মুখ তুলে চাওয়ারও সময় পায়নি।
নমস্কার! আপনার সিগারেট নিভে গেছে। খোকাই বলল।
তিন আর দুয়ে পাঁচ, পাঁচ আর সাত বার, বার আর তিনে পনর।
নমস্কার! পনর আর সাতে বাইশ, বাইশ ছয় আঠাশ। সিগারেট জ্বালানোর সময় নাই। ছাববিশ আর পাঁচে একত্রিশ। মোট পঞ্চাশ কোটি ছয় লক্ষ্য বাইশ হাজার সাতশ একত্রিশ।
পঞ্চাশ কোটি কি?
কি? তুমি এখনো যাওনি!
পঞ্চাশ কোটি কি মাল? খোকা আবর জিজ্ঞেস করল।
যানিনা... ভূলে গেছি। আমার অনেক কাজ। আমি খুব দায়ীত্বশীল মানুষ। বাচ্চাদের সাথে আমি কোন লেন দেন করি না। পাঁচ দুই সাত।
পঞ্চাশ কোটি কি? একবার কোন প্রশ্ন খোকা করলে, তার উত্তর না শুনে ছাড়তো না। তাই আবার জিজ্ঞেস করল।
ব্যাবসায়ী এবার হাল খাতা থেকে মাথা তুলল।
চুয়ান্ন বছর হল আমি এই গ্রহে আছি। গত চুয়ান্ন বছরে তিন বার আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে।
বাইশ বছর আগে প্রথম ব্যাঘাত ঘটে একটা মাছির কারনে। একমাত্র ভগবানই জানে মাছিটা কোথেকে এলো! তার বিকট শব্দে আমার মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায় আর আমি একটা হিসাবে চারটা ভূল করি। বার বছর আগে দ্বিতীয় বার বাতের ব্যাথায়। কারণ: সারা দিন একই ভাবে বসে হিসাব নিকাশ করি। নরা চড়া করার সময কৈ? দ্বায়ীত্ব বলে কথা।
আর এই এখন তৃতিয় বারের মত ব্যাঘাত ঘটালে তুমি। পঞ্চাশ কোটি।
পঞ্চাশ কোটি কি? খোকা আবার জিজ্ঞেস করল।
ব্যাবসায়ী বুঝল, শান্তির চেষ্টা বৃথা।
কোটি কোটি ছোট ছোট জিনিস।
যে গুলি আকাশে দেখা যায়।
খোকা বলল। মশা?
ছোট ছোট বস্তু, যে গোলি চ্ক চ্ক করে।
খোকা এবার ভাবল পেয়েছি। জোনাকি পোকা।
আরে না না ছোট ছোট সোনালী বস্তু। যে গুলি মানুষকে অলস স্বপ্নে বিভোর করে। স্বপ্ন দেখার সময় আমার নাই, আমি দায়ীত্ববান লোক।
ও বুঝেছি। আকাশের তারা।
হয়ত সে গুলি তারাই।
পঞ্চাশ কোটি তারা দিয়ে আপনি কি করবেন?
পঞ্চাশ কোটি ছয় লক্ষ্য বাইশ হাজার সাতশ একত্রিশ। আমি দায়ীত্বশীল মানুষ। আমার দায়ীত্ব আমি সঠিক ভাবে পালন করি।
এত গুলি তারা দিয়ে আপনি কি করবেন।
এত তারা দিয়ে আমি কি করব?
হ্যাঁ।
কিছুই করবনা এগুলি আমার সম্পত্তি।
তারা গুলি আপনার সম্পত্তি?
হ্যাঁ।
কিন্তু আমি একজন রাজাকে দেখেছি যিনি....
রাজার কোন সম্পত্তি নাই, তিনি শুধু শ্বাষন করেন সেটা সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার।
কিন্তু আপনার সম্পত্তি মানে তারা গুলি থাকাতে লাভ কি?
এগুলি আছে বলেইতো আমি ধনী।
ধনী হয়ে লাভ কি?
আরো তারা কেনা যাবে। যদি নতুন একটা তারা কেউ আবিস্কার করে সেটা আমি কিনতে পারব।
মানুষটার চিন্তাটা অনেকটা মাতাল লোকটার মত। মনে মনে বলল খোকা। তার মনে আরো প্রশ্ন জাগলো।
তারার মালিক মানুষ কি করে হয়?
তারা গুলি কার? ব্যাবসায়ী একটু রেগেই পাল্টা প্রশ্ন করল।
আমি জানিন, তবে মনে হয় কারই না।
তাহলে আমার, কারণ: আমিই সর্বপ্রথম এগুলি আমার ভেবেছি।
এতটুকুই যথেষ্ট?
নিশ্চই! তুমি যদি একটা হীরে কুড়িয়ে পাও যা আর কার নয়। তবে সেটা তোমার।
ধর তুমি একটা নতুন দ্বীপ আবিস্কার করলে, যা আর কারো নয়, তবে সেটার মালিক তুমিই। যদি তোমার মনে নতুন একটা বুদ্বি আসে, তুমি সেটা তোমার নামে নথিভূক্ত করে রাখতে পার। কারণ: তোমার আগে আর কেউ সেটা ভাবেনি। এভাবে তারা গুলিও আমার কারণ: আমার আগে কেউ সেগুলি নিজের মনে করেনি।
তা নাহয় হল! কিন্তু তারা দিয়ে তুমি করবে কি?
আমি তাদের গুনি, বার বার গুনি।
রক্ষনা বেক্ষন করি। কিন্তু সেটা খুব সহজ কাজ নয়। সবাই পারেনা। আমি দায়ীত্ব সচেতন মানুষ বলেই পারছি। বলল ব্যাবসায়ী।
আমার একটা কশ্মিরি সাল থাকলে, সেটা গায়ে দিয়ে যেখানে খূশী যেতে পারব। একটা ফুল থাকলে সেটা তুলে সাথে নিতে পারব। কিন্তু আকাশের তারা তো তুমি তুলে সাথে নিতে পারবে না।
তা হয়ত পারব না। কিন্তু আমি তাদের ব্যাংকে জমারাখতে পারব।
তার মানে কি?
তার মানে হল: আমার তারা গুলির সংখ্যা একটা কাগজে লিখে, সে কাগজটা কোন একটা দেরাজে তালা বদ্ব করে রাখব।
এটাই সব!
এতটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট।
মজার ব্যাপার, প্রায় কাব্যিক। কিন্তু কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়। খোকার কাছে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের মানে বড়দের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।
খোকা বলল: আমার একটা ফুল আছে। আমি সেটার গোড়ায় জল দেই। আমার তিনটি আগ্নেয়গিরি আছে। আমি সেগুলি পরিস্কার করি। তারা গুলির কোন প্রকার দেখাশোনাইতো আপনি করতে পারেননা।
ব্যাবসায়ী লোকটা মুখ খুললেও কোন জবাব খুজে পেলেন না।
খোকা যেতে যেতে ভাবল বড় মানুষ গুলি এত অদভূত হয় কেন!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।