আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোকাবাবু পঞ্চদশ মূল : আনটোয়ানী ডে সা এক্সউপেরী



ছ'নম্বর গ্রহটি অন্য গ্রহ গুলির প্রায় দশ গুন বড়। অদ্ভূত সব বই লেখে এমন একজন লেখক এই গ্রহের বাসিন্দা। দেখ, দেখ একজন গবেষক এসেছে। খোকাকে দেখেই লোকটা চেচিয়ে উঠল। খোকা টেবিলের ধারে বসে হাপাচ্ছিল।

দীর্ঘ ভ্রমনের ক্লান্তি। বৃদ্ব জিজ্ঞেস করল: বাড়ি কোথায়? এত মোটা বইটা কিসের? আপনি কি করেন? আমি ভৌগলিক। ভূগোল মানে কি? ভৌগলিক মানে হচ্ছে, একজন বিষেশ জ্ঞানী ব্যাক্তি যিনি, সাগর, জোয়ার-ভাটা, শহর, পাহাড়, মরুভূমি কোথায় আছে, তাদের অবস্থান জানেন। খুব ভাল। একটা সত্যিকারের শিক্ষা।

ভৌগলিকের গ্রহটা ভাল করে দেখে নিয়ে খোকা বলল: আপনার গ্রহটি বেশ চমৎকার। এখানে কি কোন সাগর আছে? সেটাতো জানিনা। হতাস ভাবে খোকা আবার বলল: পাহাড়? সেটাও আমার জানার কথা নয়। কিন্তু আপনি ভৌগলিক। নদী, পাহাড়, মরুভূমি? খোকার জিজ্ঞাসা।

সেটাও আমার জানার কথা নয়। কিন্তু আপনি ভৌগোলিক। তা বটে কিন্তু, আমি গবেষক নই। আমাদের গবেষকের খুব অভাব। নগর, বন্দর, পর্বত, সাগর, মহাসাগর, মরুভূমি প্রদক্ষিন করা ভৌগোরিকের কর্ম নয়।

ভৌগোলিক একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি। সে যত্র তত্র ঘুড়ে সময় নষ্ট করতে পারে না। পড়া-লেখার টেবিল ছেড়ে সে কোথাও যায় না। কিন্তু সে গবেষকদের সাথে কথা বলে এবং তাদের বর্ণনা লিপিবদ্ব করে। গবেষকদের কোন কথা গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে, ভৌগোলিক সে গবেষকের একটা চারিত্রিক সনদ পত্র প্রদানের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে লিখে পাঠায়।

চারিত্রিক সনদ পত্র কেন? এক জন মিথ্যুক বা মদ্যপ গবেষকের মিথ্যা বর্ণনায় ভূগোল মারাত্বক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। সেটা কি করে? মদ্যপরা যেকোন জিনিস দ্বিগুন করে দেখে। ভৌগোলিক তার কথা শুনে একটার জায়গায় দুটো পাহাড় আঁকবে। আমি একজন মদ্যপকে চিনি। কিন্তু গবেষক হিসাবে সে মোটেই ভাল করত না।

হ্যাঁ, তাইতো বলছি। যদি গবেষকের নীতি ভাল বলে মনে হয়, তাহলে তার আবিষ্কার পরিক্ষা নীরিক্ষা করে দেখা হয়। গবেষক কোন পাহাড় আবিষ্কার করলে, তা কি গিয়ে দেখে আসা হয়? না, সেটাতো খুব সমস্যা সংকুল। কিন্তু গবেষক তার আবিষ্কৃত বস্তুর পক্ষে প্রমান দেখাতে হয়। যেমন ধর, একজন গবেষক বড় একটা পাহাড় আবিষ্কার করেছে বলে দাবী করে, তবে তার পক্ষে প্রমান স্বরুপ বড় পাথর দেখাতে হয়।

ভৌগোলিক বিজ্ঞের মত একটু হাসলেন। তুমি কি অনেক দূর থেকে এসেছ? তুমি নিশ্চই একজন গবেষক। তোমার গ্রহের বর্ণনাটা দাও। গবেষক খাতা খুলে পেন্সিল চোখা করতে লাগলেন। প্রথমে গবেষকের বর্ণনা পেন্সিল দিয়ে লিখতে হয়।

গবেষকের আবিষ্কৃত বস্তুর প্রমান পাওয়া গেলেই কেবল তা কলম দিয়ে লেখার নিয়ম। হ্যাঁ, বল...! ভৌগোলিকের আগ্রহ অধীর। ওহ! আমার গ্রহে তেমন কিছু নেই। সেটা খুব ছোট। ওখানে তিনটা আগ্নয়গিরি আছে।

দুটি জীবন্ত, তৃতীয়টি নিভে গেছে। কিন্তু কে জানে, হয়ত কখনো জ্বলতেও পারে। ভৌগোলিক বলল: কেউ বলতে পারবেনা, হয়ত জ্বলতেও পারে! আমার একটা ফুলও আছে। ফুলের কথা না লিখলেও চলবে। জানালেন ভৌগোলিক।

কিন্তু কেন? ফুলইতো সব চেয়ে সুন্দর। কারন: ফুল ক্ষনস্থায়ী। খোকা: ক্ষনস্থায়ী? ভূগোল হচ্ছে সব চেয়ে মূল্যবান বই। যা কখনো পুরানো হয়না। পাহাড় হেটে এক জয়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় যায়না।

সাগরের জল কখনো শুকায়না। যা চিরস্থায়ী, আমরা ভূগোল বইয়ে শুধু তাই লিপিবদ্ব করি। কিন্তু মৃত আগ্নয়গিরি যখন তখন জ্বলে উঠতে পারে! তাহলে ক্ষনস্থায়ীর মানেটা দ্বাড়াল কি? প্রতিবাদ করল খোকা। আগ্নেয়গিরি মৃত কি জীবিত, তাতে আমাদের কিছু যায় আসেনা। আমরা শুধু পাহারের কথা লিখি।

পাহাড় কখনো ক্ষয় হয়না। কিন্তু ক্ষনস্থায়ী মানে কি? খোকা একবার কোন প্রশ্ন করলে তার জবাব তাকে দিতেই হবে। ক্ষনস্থায়ী মানে হল; যা অচিরেই বিনাশের সম্ভবনা। আমার ফুলটি অচিরেই ঝড়ে পঢ়বে? অবশ্যই। খোকা ভাবল: আমার ফুলটি ক্ষনস্থায়ী! এ বিশ্বে আত্ব রক্ষার জন্য তার মাত্র চারটি কাঁটা আছে।

আর আমি তাকে একা রেখে এসেছি! অভিমানের প্রথম অনুশোচনা জাগল খোকার মনে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল: আপনার কি পরার্মশ? আমি এখন কোথায় যাব? তুমি পৃথিবীতে যাও। গ্রহটির একটা সুনাম আছে। ফুলটির কথা ভাবতে ভাবতে খোকা পৃথিবীর পথে পথে পা বাড়াল।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.