কয়েকদিন ধরে স্কুলে যায় না ঐন্দ্রিলা। খেতে চায় না। নিজেকে গুটিয়ে রাখে। বারবার জানতে চাইলেও কিছু বলতে চাইতো না। মাঝে মাঝে কেবল পেটে ব্যথার কথা বলতো।
ডাক্তারকে একান্তে ঐন্দ্রিলা জানায় বড় ক্লাসের মেয়েরা তাকে নানাভাবে নির্যাতন করে। ডাক্তার ঐন্দ্রিলাকে একজন শল্যচিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাউন্সিলিংও প্রয়োজন বলে জানান। দমদমের এক নার্সিংহোমে ভর্তি করে শল্যচিকিৎসককে দেখানো হয়।
কিন্তু চিকিৎসক কোনো রোগ খুঁজে না পাওয়ায় মঙ্গলবার সকালে ঐন্দ্রিলাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় এক স্নায়ু ও মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে মেয়েকে নিয়ে যান ঐন্দ্রিলার বাবা। ঐন্দ্রিলার সঙ্গে কথা বলার পরে চিকিৎসক মেয়েটিকে উদ্বেগ কমানো এবং খিঁচুনি আটকানোর একটি ইঞ্জেকশন দেন। তারপর থেকেই ঐন্দ্রিলার শরীর আরও খারাপ হতে শুরু করে। গতকাল বুধবার সকালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বাড়ি থেকে এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ঐন্দ্রিলার মৃত্যুর পর স্কুলের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে, যে পদ্ধতিতে ওই বালিকার চিকিৎসা চলছিল, তা আদৌ যথাযথ ছিল কি না।
এ দিন দমদম থানায় স্কুলের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে ঐন্দ্রিলার পরিবার। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। ঐন্দ্রিলার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
ঐন্দ্রিলার বাবা শান্তনু বলেন, ডাক্তারের কাছে আমার মেয়ে জানায়, ক্লাস নাইনের কয়েকজন ছাত্রী ওকে হেনস্থা করত। একবার টয়লেটেও বন্ধ করে রেখেছিল। ওর টিফিন খেয়ে নিতো ওরা। ওকে ১০০ টাকা আনতে বলেছিল। না আনলে গলা টিপে মেরে ফেলবে বলেও হুমকি দিয়েছিল।
দমদমের ওই স্কুলের অধ্যক্ষা হেলেন সরকার দাবি করেছেন, তারা এই ঘটনার কিছুই জানতেন না। তিনি বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কিন্তু মেয়েটির বাড়ির পক্ষ থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
শিশু-রোগ চিকিৎসক এবং স্নায়ু ও মনোরোগ চিকিৎসক দায় এড়িয়েছেন। শিশু-রোগ চিকিৎসক দ্বৈপায়ন ঘটক বলেন, মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছিল, ও ট্রমার মধ্যে রয়েছে।
তাই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে বলেছিলাম। আর পেটের ব্যথার উৎস জানতে শল্যচিকিৎসকের পরামর্শও নিতে বলি। যে নার্সিংহোম থেকে শল্যচিকিৎসক দেখার পরে ঐন্দ্রিলাকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তার কর্তৃপক্ষ জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই বালিকাকে অন্যত্র রেফার করেছিলেন তারা।
স্নায়ু ও মনোরোগ চিকিৎসক পার্থসারথি বিশ্বাস বলেন, শুধু মানসিক চাপ তো নয়, মেয়েটির শরীরও খুব খারাপ ছিল। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়েছিল।
অনেক আগেই ওকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া প্রয়োজন ছিল। আমি সেটাই জানাই। মানসিক চাপে যাতে বাড়তি সমস্যা না হয়, তাই লোরাজিপাম গ্রুপের ওই ইঞ্জেকশনটি দিই। খুবই নিরাপদ ওষুধ ওটি। কোনও রকম খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার কথাই নয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।