মন'রে কৃষি কাজ জানো না, এমন মানব জমিন রইলো পতিত, আবাদ করলে ফলতো সোনা
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ত্রাণের টিন উদ্ধার এবং দূর্নীতিবাজ লোকজন ধরে ধরে জেলে পুরছেন কিছুদিন। সেই সুবাদে জেলখানার পরিবেশ ও উন্নত করা হচ্ছে, এটা খুবই ভালো সংবাদ। অন্তত কারো না কারো মঙ্গল হচ্ছে। বেচারা জেলখানা একটু পাবলিসিটি পাচ্ছে এই সুবাদে। অনেক স্টান্টবাজ কাজ হচ্ছে, কিছু ভালো কাজ এর মধ্যে হয়ে যাচ্ছে।
আমরা গরীব আম জনতা। আমাদের খায়েশ বরাবরই একটু বেশী। তাই এত লম্বা কাহন। উপদেষ্টা পরিষদে কাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই বেল্লিক তা জানেনা। কারণ আমাদের জাতীয় দৈনিকগুলি লালুর বাড়ী, ফালুর গাড়ী দেখাতে যত পছন্দ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস দেখাতে তারা তত পছন্দ করে না।
কথা সংক্ষিপ্তেই বয়ান করিবো, চুইংগামের মত টানিয়া আপনাদের বিরাগভাজন হইবো না।
প্রথমেই বলি প্রাথমিক শিক্ষার কথা। কিংবা বলা উচিত আমাদের শিক্ষার শ্রেনীবিভাগের কথা। দেশে সরকার প্রবর্তিত বাধ্যতামূলক শিক্ষার সীমা পর্যন্ত একটাই শিক্ষাব্যবস্থা হওয়া দরকার। সেটা অতিসত্ত্বর হওয়া দরকার।
বাংলা মিডিয়াম, ইংলিশ মিডিয়াম, আরবী মিডিয়াম, মাদ্রাসা মিডিয়াম এত কিছুর প্রয়োজন আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় নেই। আমাদের ডাঃ ইউনুস সাহেব সবাইকে ক্ষুদ্র ঋণের বটীকা গেলাতে চান, তেমনি আমিও দেশের সবাইকে একই পদ্ধতির শিক্ষা গেলাতে চাই।
মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় চালু করা হোক শতকরা পদ্ধতি, যেটা এখন কম বেশী সব উন্নত দেশেই চলে। একসময় স্ট্যান্ড নামক একটা ব্যবস্থা ছিল যেটাতে ঢাকা বোর্ডের বিংশতম স্থানকারী, কুমিল্লা বোর্ডে প্রথম স্থানকারীর চেয়ে বেশী নাম্বার পেত, এর পর আসল প্রশ্ন ব্যাংক, এখন আসছে জিপিএ। এরমধ্যে কতিপয় খচখচিবাজ গোল্ডেন জিপিএ নামে কিছু একটা বলবার চেষ্টা করছে।
এই সব চিরতবে বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য জ্ঞান আহরণ, বাস্তবভিত্তিক এবং প্রায়োগিক জ্ঞান আহরণ এবং সর্বোপরি আনন্দ লাভ। কোমলমতি শিশুদের যুদ্ধে নামানো শিক্ষার উদ্দেশ্য না।
উচচমাধ্যমিকের পর উচ্চশিক্ষার জন্য সারা দেশব্যাপী সার্বজনীন একটা পরীক্ষা নিতে হবে। সেটা নিতে হবে উচ্চ মাধ্যমিকের তিন মাসের মধ্যেই(পোলাপাইন সব কিছু ভুলে যাবার আগেই)।
এই ধরনের পরীক্ষা আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রচলিত আছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইনস্টিটিউটের আলাদা আলাদা পরীক্ষার কোন মানে নেই। এতে মেধার অপচয়, সময়ের অপচয় এবং অপ্রয়োজনীয় সময় নষ্ট হয়।
গণহারে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বন্ধ হোক, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যাদের নেই তাদের বাধ্য করা হোক কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একসাথে সংযুক্তিকরণের জন্য। দেশের উচ্চশিক্ষার মান রক্ষার্থে এটা অত্যন্ত জরুরী পদক্ষেপ সময়ের বিবেচনায়।
ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষায় বেসরকারী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। একঃ একটা নির্দিষ্ট পরিধির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। তাহলে বনানীর মত ভার্সিটি পাড়া আর তৈরি হবে না। দুইঃ অবকাঠামো নির্মাণের মত বিনিয়োগ করার যোগ্যতা বিনিয়োগকারীর আছে কি না। এপার্টমেন্ট বিক্রির মত মাছের তেলে মাছ ভাজার এই খেলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির সময় করা যাবে না।
তিনঃ একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাবার মত যোগ্য লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে কি না। গ্রুপ অফ কোম্পানীজ এর জেনারেল ম্যানেজার দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানো যায় না। চারঃ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত এবং প্রয়োজনে বাধ্য করতে হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদানের জন্য, ছাত্রাবস্থায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং এর জন্য। এতে শিক্ষার ব্যবহারিক দিক নিশ্চিত হয় এবং একটা দক্ষ জনশক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে আসে। কারণ আমাদের দেশের যেকোন ধরণের প্রতিষ্ঠানের উচচ এবং মধ্য পর্যায় শ্রীলংকা, পাকিস্তান এবং ইন্ডিয়ান লোকে ভর্তি হয়ে গেছে।
যেটা লজ্জার। সর্বোপরি আরিল্ডের মতন সাদা চামড়াতো আছেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যারা বৃত্তি প্রদান করছে ভালো, যাদের চর্ম চক্ষু নেই তাদের চোখের পাতার নীচে প্রয়োজনে গুড়ো মরিচ ঢেলে চোখ খুলাতে হবে। দেশে এই মূহুর্তে অন্তত বড় মাপের বিশটি টেলিকম কোম্পানী সক্রিয়, অথচ এই চশমখোরেরা সবাই মিলে একটা ব্যাবহারিক টেলিকম কোর্সের সিলেবাস দেয়নি। কিংবা যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের একনিষ্ঠভাবে কর্মী সরবরাহ করে যাচ্ছে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বা সেই সাবজেক্ট কে কৃতজ্ঞতা স্বরুপ একটা ল্যাব তৈরি করে দেয়নি।
এইসব বদমাশ বেনিয়াদের পাছায় লাথি দিলে হয় না, বিচী থেতলে দিতে হবে, তবেই এদের চোখ খুলবে।
আজকে এইটুকুতেই শেষ করছি। বেশী বললে আবার গায়ে লাগে না পাবলিকের। জনাব তত্ত্বাবধায়ক সরকার এর পুকুরে জাল মেরে টিন ধরছেন, এর বাড়ীতে ওর গাড়ী ধরছেন; দূর্নীতিগ্রস্ত মানুষ, গরু,ছাগল, হাঁস, মুরগী, আম, কাঁঠাল সব ধরে ফেললেন। পত্রিকার পাতা আপনাদের নায়কোচিত ঠাঁট-বাট এবং হম্বিতম্বিতে ভেসে গেলো।
কিন্তু আপনারা এখনো একটি বারের জন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে নজর দিতে পারেন নাই। দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার নামে অনাথ শিশুদের জীবন ধ্বংসের একটি চমৎকার প্রক্রিয়া আপনাদের মাইক্রোভিশনে ন্যানোসাইজ হয়ে গেল।
জনাব তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটু কামে নামেন। এই ডিজিএফআই আর এনএসআইরে দুইজন এস আই, তিনজন কনস্টেবল, চারজন তহশীলদার ধরবার রুটিন হিরোইজম অনেক করলেন। পত্রিকাগুলি এবং সেইসাথে আমরা আবাল আমজনতা অনেক তালি দিছি, এইবার একটু নইড়া চইড়া কিছু কামের কাম করেন।
আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম শিক্ষাব্যবস্থার গিনিপিগ হওয়া হইতে রক্ষা পাক। এই কামনা করিয়া আজিকার মাহফিল শেষ করিতেছি।
* এই ব্লগের সবচেয়ে সরব সর্বাপেক্ষা প্রতিবাদী "মুখফোড়" কে স্মরণ করিলাম এই লিখার সময়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।