গার্মেন্ট শিল্পে আবারও অসন্তোষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। মালিকপক্ষের একাংশের অনুদার মনোভাব এ শিল্পের স্বাভাবিক পরিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। রাজধানীতে বস্তির এক রুমের একটি ছোট ঘরের ভাড়াও যখন দুই হাজার টাকার কম নয় তখন মালিকপক্ষের সংগঠন বিজিএমইএর সভায় শ্রমিকদের মাসিক মজুরি মাত্র ৬০০ টাকা বৃদ্ধির করে ৩৬০০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি দুনিয়ার যে কোনো দেশের চেয়ে কম। এমনকি এ দেশের কৃষি শ্রমিকদের মজুরিও গার্মেন্ট শ্রমিকদের চেয়ে বেশি। অথচ কৃষি শ্রমিকদের বাড়ি ভাড়া দিতে হয় না। যাতায়াত খাতেও অর্থ ব্যয় হয় না। শ্রমিকরা তাদের নূ্যনতম মাসিক মজুরি ৮০০০ টাকা দাবি করেছিল। এ দাবির বিপরীতে মালিকপক্ষ সর্বনিম্ন মজুরি ৩৬০০ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দিলে শ্রমিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তার পরিণতিতে রাজধানী ও গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো গার্মেন্টে ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনাও ঘটে। গার্মেন্ট শিল্প দেশের ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ আয় আসে এ শিল্প থেকে। ঈদুল আজহার প্রাক্কালে গার্মেন্ট শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় বহু প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সময়মতো বেতন ও বোনাস দেওয়া সম্ভব হবে কিনা সে আশঙ্কাও দানা বেঁধে উঠেছে। আমরা মনে করি শ্রমিকদের স্পর্শকাতরতার কথা বিবেচনা করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি প্রস্তাব দেওয়া উচিত ছিল। এ কথা ঠিক মজুরি নির্ধারণ একটি দরকষাকষির বিষয়। মালিক ও শ্রমিকপক্ষের বাইরে সরকার পক্ষও এই দরকষাকষিতে ভূমিকা রাখে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়ার ব্যাপারে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে আগ্রহ দেখানো হয়েছে। ফলে এই ক্রান্তিলগ্নে গার্মেন্ট শিল্পে অস্থিরতার সৃষ্টি হয় এমন ঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে হবে। বিশেষত শ্রমিকদের বুঝতে হবে গার্মেন্ট শিল্পের সঙ্গে তাদের জীবন-জীবিকার সম্পর্ক। এ শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি, ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ তাদের স্বার্থকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমরা মনে করি গার্মেন্ট শিল্পে স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির স্বার্থে সব পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এড়াতে হবে হঠকারিতার পথ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।