আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াতের সহিংস ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, বিএনপি অস্ত্রের ভাষায় কথা বলতে পারে, শান্তির ভাষায় নয়। তিনি বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, হরতাল দিয়ে কী অর্জন করলেন? নিরপরাধ মানুষকে মেরে, গাড়ি পুড়িয়ে হরতাল করে কী লাভ আপনার? বিএনপি আসে ধ্বংসের রাজনীতি নিয়ে, আর বিএনপি নেত্রী শান্তি চান না, অশান্তি চান। হরতাল দিয়ে উনি (খালেদা জিয়া) তো ঘরে বসে বেশ আরামেই কাটান, ভোগান্তির শিকার হয় তো সাধারণ মানুষ।
গতকাল বিকালে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়াম মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে জনতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিকাল সোয়া ৪টায় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্য শুরু করলে স্টেডিয়ামের মাঠজুড়ে ছিল স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের ঢল। বিএনপি-জামায়াত ঘোষিত হরতাল কর্মসূচি ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের হুমকি উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ সমাবেশে মানুষের ঢল নামতে থাকে দুপুর থেকেই। খাগড়াছড়ির সেনানিবাসসংলগ্ন হেলিপ্যাড এলাকা থেকে সমাবেশস্থলের প্রায় চার কিলোমিটার দূরত্বের সড়কপথের দুই পাশে আওয়ামী লীগের বিশাল কর্মী-সমর্থক ছাড়াও সাধারণ মানুষের উৎসব আয়োজনে নৌকার পক্ষে ছিল মুহুর্মুহু স্লোগান। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে একনজর দেখার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে আসে অসংখ্য শিশু, গৃহবধূ এবং স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েরা। প্রধানমন্ত্রীকে তারা দুই হাত নেড়ে বিপুল সংবর্ধনা জানায়। প্রধানমন্ত্রীও হাসিমুখে তাদের আবেগ-উচ্ছ্বাসের জবাব দেন। সমাবেশ মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে পার্বত্য এলাকার 'মা' উপাধিতে ভূষিত করা হয় পার্বত্যবাসীর পক্ষ থেকে। এ সময় সমাবেশস্থলেই এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য এলাকা একসময়ে দুর্গম ছিল, সন্ত্রাস ও সংঘর্ষ লেগেই থাকত, অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে, রক্তাক্ত ছিল এখানকার জনপদ। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর অশান্ত পাাহাড়ি এলাকা শান্তির জনপদে পরিণত করতে আমরাই সাহসী উদ্যোগ নিয়েছিলাম। '৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তি করে এখানে পাহাড়ি-বাঙালি সবার অধিকার নিশ্চিত করা হয়। বিশ্বের কোথাও শান্তিচুক্তির পর অস্ত্র সমর্পণ হয়নি, আমরা এ জেলার মাটিতেই অস্ত্রসমর্পণ করিয়েছি। পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন করে চলেছি। অথচ বিএনপি আমলে চুক্তির বাস্তবায়ন তো হয়ইনি বরং পদে পদে বাধাগ্রস্ত করেছিল। আগামী দিনে এখানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তির মধ্যে ৭৭টি ধারার ৫৫টিরই বাস্তবায়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ আগামীতে আবার ক্ষমতায় এলে ইনশা আল্লাহ পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে। খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্রু লাল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পার্বত্যবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে কিছু দিতে আসে, নিতে আসে না। তিনি বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে যতই হরতাল করুন না কেন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। হরতাল দিয়ে বিচার ঠেকানো যাবে না। নির্বাচন যথাসময়ে হবে। ভোট মানুষের অধিকার। আগামী নির্বাচনেও ভোটাররা ভোটের মাধ্যমে তাদের পছন্দের সরকার গঠন করবে। গতকালের সমাবেশে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাধা ও হুমকি দেওয়ার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হুমকিদাতারা কত বড় শক্তিশালী ইনশা আল্লাহ আমিও দেখে নেব। এ সময় তিনি বলেন, বিএনপির তো বড় গুণ দুর্নীতি আর মানুষ খুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিচুক্তির মধ্য দিয়ে ভারতের মাটিতে থাকা ৬২ হাজার শরণার্থীকে ফিরিয়ে এনে আমরা পুনর্বাসন করেছি। অস্ত্রসমর্পণকারী ভাইদের চাকরি দিয়েছি বিভিন্ন বাহিনীতে। পাহাড়ি-বাঙালি সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, পর্যটন, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে দেড় হাজার কোটি টাকার কাজ করেছি। ভবিষ্যতে এ চলমান উন্নয়ন ও শান্তির ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী দিনেও পার্বত্যবাসীকে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। পাহাড়ের ভূমি সমস্যা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ভূমি আইন সংশোধন করে আগামী দিনে তা চিরতরে সমাধান করার ব্যবস্থা নেবেন। রাঙামাটিতে বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আগামীতে আবার ক্ষমতায় এলে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজকেও পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করা হবে। সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার আগমুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ফলক উন্মোচন করেন। স্টেডিয়ামে তৈরি করা হয় এক বিশাল নৌকা মঞ্চ। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশকে ঘিরে যে কোনো প্রকার নাশকতা এড়াতে শহরজুড়ে নেওয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। জেলার আট উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা হরতাল ও অবরোধ উপেক্ষা করে সমাবেশে যোগ দেন।
আজ শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ যাচ্ছেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জে যাচ্ছেন। শরীয়তপুরে পদ্মা সেতুর প্রাথমিক পর্যায়ের উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন ছাড়াও আওয়ামী লীগ আয়োজিত পৃথক সমাবেশে ভাষণ দেবেন তিনি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।