আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উৎকণ্ঠা ক্রিকেটেও

উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, শঙ্কা -শব্দগুলো দেশের ক্রিকেটের সঙ্গে একেবারেই বেমানান। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশ যখন বিভক্ত তখনও তো সবার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে ক্রিকেট। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণী -নির্বিশেষে সবাইকে এক সুতোয় বাঁধা এই ক্রিকেট। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটায় ক্রিকেট। সর্বোপরি ক্রিকেট বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশ্বের দরবারে বাড়িয়ে দিয়েছে।

ক্রিকেট তো আসলে শান্তির দূত। কিন্তু দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে ক্রিকেটাঙ্গনে বিরাজ করছে অশান্তি! দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফরে আসার কথা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত এশিয়া কাপ। ১৬ মার্চ থেকে শুরু হবে টি-২০ বিশ্ব কাপ।

পর পর তিনটি ইভেন্ট। কিন্তু দেশের চলমান অস্থিরতার কারণে ইভেন্টগুলো আদৌ সফলতার মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে ক্রিকেটামোদীদের মনে। চলতি মাসে চট্টগ্রামে হোটেলের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূধর্্ব-১৯ দল সফর বাতিল করে দেশে ফিরে যাওয়ার পর আশঙ্কা বেড়ে গেছে। তাছাড়া যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় পাকিস্তানও আসতে চাচ্ছে না বাংলাদেশে। এই সুযোগে প্রতিবেশী দেশ ভারতের মিডিয়া অপপ্রচারে মেতেছে।

ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসি এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি, অথচ ভারতীয় মিডিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে এশিয়া কাপ কিংবা টি-২০ বিশ্ব কাপ হবে কিনা!

ভারতীয় মিডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারা নাকি টি-২০ বিশ্ব কাপ আয়োজনে প্রস্তুত। বড়ই হাস্যকর চিন্তাভাবনা। আইসিসি যেখানে কিছু বলছে না, সেখানে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে ভারতের মিডিয়া। ভারতে কি কখনো রাজনৈতিক অস্থিরতার তৈরি হয়নি? ১৯৮৪ সালের অক্টোবরে ইন্দিরা গান্ধী আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর পুরো ভারতে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। ভারত জুড়ে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।

অথচ মাস খানেক পরেই, সে বছর নভেম্বরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে খেলেছে ভারত। ১৯৮৭ সালে বিশ্ব কাপের আয়োজকও হয়েছে তারা। শুধু তাই নয়, মুম্বাইয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরও কি ভারতে ক্রিকেট নির্বাসিত হয়েছে! অথচ বাংলাদেশের টি-২০ বিশ্ব কাপ নিয়ে তাদের কতই না মাথাব্যথা! আর পাকিস্তানের আশঙ্কার কথা তো রীতিমতো হাস্যকর। যে দেশে হর-হামেশা যেখানে-সেখানে জঙ্গী হামলা হচ্ছে, মানুষ মারা যাচ্ছে। তারাই কিনা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কিত!

রাজনৈতিক অস্থিরতা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

গণতান্ত্রিক দেশে অগণতান্ত্রিকপন্থার কারণে বিশ্বজুড়েই বিরাজ করছে অশান্তি। ব্রাজিলেও তো চলছে সরকার বিরোধী আন্দোলন। কিন্তু কেউ তো বলছে না ২০১৪ সালের বিশ্ব কাপটা ব্রাজিলে নাও হতে পারে। এটাও ঠিক যে, সংঘর্ষ চলতে থাকলে কোনো দল বাংলাদেশে হয়তো আসবে না! তাই ক্রিকেটের কথা চিন্তা করে বড় দুই রাজনৈতিক দলকে হতে হবে সহনশীল। ক্রিকেটের শিডিউলের কথা চিন্তা করে হলেও সমঝোতার বিকল্প নেই।

উভয় দলকেই বুঝতে হবে ক্রিকেট আমাদেরকে কোথায় নিয়ে গেছে। তাই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে যদি কোনো একটা টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, তবে তার চড়া মূল্য দিতে হবে এদেশের ক্রিকেটপাগল মানুষকে। কেননা ক্যারিবীয় সফর বাতিল করে চলে যাওয়ায় এমনিতেই এক কালো দাগ পড়েছে। যদি এখন নিরাপত্তার কারণে শ্রীলঙ্কাও সফর বাতিল করে তাহলে দুই বড় ইভেন্ট 'এশিয়া কাপ' ও 'টি-২০ বিশ্ব কাপে'র আয়োজন করাও কঠিন হয়ে যাবে। ভারত এমনই টি-২০ বিশ্ব কাপ আয়োজনের ব্যাপারে আগ্রহী।

পাকিস্তানও বাংলাদেশে না আসার ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে অশান্তি বেড়ে গেলে অন্য দলগুলোও আগ্রহ হারাতে পারে। তখন হয়তো আইসিসি বাধ্য হয়ে খারাপ কোনো সিদ্ধান্তও নিতে পারে। তবে এশিয়া কাপ হবে কি হবে না তা পরিষ্কার জানা যাবে ৪ জানুয়ারি কলম্বোতে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সভার পর। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর আগেই বিসিবি সভাপতির উচিৎ প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সমাধানের পথ বের করা।

কেননা যদি কোনো কারণে এশিয়া কাপ না হয়, তখন বিশ্ব কাপ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাবে। আর তা হলে দেশের ক্রিকেটে সুদূরপ্রসারী একটা প্রভাব পড়তে পারে -যা কারোরই কাম্য নয়।

 

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.