রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতায় রাজধানীতে বেড়ে গেছে খুন, ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজি। সহিংসতা দমাতে বিরোধী দল ঠেকাতে ব্যস্ত পুলিশ। এ সুযোগে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পেশাদার সন্ত্রাসীরা। ফলে একের পর এক বাড়ছে খুনের ঘটনা। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ সারা দেশে খুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জনজীবনে উদ্বেগ বাড়ছে। এর চেয়েও বড় কথা, রহস্যময় এ খুনের আসামিদের ধরা এবং প্রকৃত কার্যকারণ উদঘাটন করার বেলায়ও 'রহস্যময়' ব্যর্থতা। সরকারের শেষ সময়ে খুনি-সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক কারণেও এ সময় পেশাদার খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যেও দেখা দিয়েছে শিথিলতা। এ ছাড়া রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও প্রতিপক্ষকে সামাল দেওয়ার কাজে র্যাব ও পুলিশ বাহিনীকে অতিরিক্ত ব্যস্ত রাখার কারণেও, সাধারণ ফৌজদারি অপরাধ দমনে ভাটা পড়েছে। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটছে পেশাদার সন্ত্রাসীরা। নগরজুড়ে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, পরিবহন মালিক বা ধনাঢ্য ব্যক্তিসহ সব জায়গায় চাঁদাবাজির মহোৎসব চালছে। চাঁদা না দিলে হত্যা, গুম, হুমকিসহ নানা ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। চলতি মাসে রাজধানীতে চাঁদা না পেয়ে চারজনকে খুন করেছে সন্ত্রাসীরা। এ ছাড়া গোপীবাগে বাড়িতে ঢুকে কথিত পীর লুৎফর রহমানসহ ছয়জনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এর পাঁচ দিনের মাথায় একুশে পদকপ্রাপ্ত ফটো সাংবাদিক আফতাব আহমেদকে তার নিজের বাসায় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এর পরও টনক নড়ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিরোধী দল ঠেকাতে। এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দ্রব্যমূল্যের মতো চাঁদার পরিমাণও বর্তমানে তিন থেকে চার গুণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। চাঁদা দাবির প্রথম দিন থেকে ওই ব্যবসায়ী বা ব্যক্তির বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের চারপাশে প্রকাশ্যে চালানো হচ্ছে সশস্ত্র মহড়া। এরপর চাঁদা পরিশোধের দিন পার হয়ে গেলেই ঘটছে দুর্ঘটনা। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে বাড়ি বা অফিসের সামনে গুলি ও বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। ভুক্তভোগীদের মতে, আগে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদা আদায় করা হলেও বর্তমানে নতুন প্রজন্মের সন্ত্রাসীদের নাম করে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। এসব সন্ত্রাসী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসীতে পরিণত হচ্ছে। তারাও এখন আগের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মতো প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এদের সঙ্গে রয়েছে পুলিশের ঘনিষ্ঠ সখ্য। চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী ও খুনিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন পুলিশের ঊধর্্বতন কর্মকর্তারা। ১৭ ডিসেম্বর সকালে মধ্যবাড্ডার ৩৩/২ ময়নারটেক হোসেন মার্কেট এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের মালিকের কাছে চাঁদা না পেয়ে ফারুক পাটোয়ারী (২৫) ও মিলন (৩০) নামে দুই শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় মাহমুদ নামে অন্য একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদিকে চাঁদার দাবিতে ১ ডিসেম্বর অপহরণ করা হয় মোহাম্মদপুরের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সৈয়দ নাইম আহমেদকে। এর চার দিন পর অর্থাৎ ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে মেহাম্মদপুরে তুরাগ নদের পাড় থেকে তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা গেছে, নাইমের কাছেও মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছিল স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। কিন্তু তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় প্রথমে তাকে অপহরণ করা হয়। এরপর হত্যা করে নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনার ঠিক এক দিন পর বাবার কাছে চাঁদা না পেয়ে ছেলেকে গুলি করে হত্যা করে চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা। ৬ ডিসেম্বর নিহত কামরুজ্জামান সুমন (২৪) রাজধানীর পল্লবীতে নিজেদের নির্মাণাধীন ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উল্লেখযোগ্য কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে ২১ ডিসেম্বর রামকৃষ্ণ মিশন রোডের ৬৪/৬ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় কথিত পীরসহ ছয়জনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ বলছে, হত্যাকারীরা মুরিদ সেজে ওই বাসায় ঢোকে এবং কথিত পীর লুৎফর রহমান ফারুক, তার ছেলে সারোয়ার ইসলাম ফারুক ওরফে মণি, পীরের খাদেম মঞ্জুর আলম মঞ্জু, মুরিদ শাহিন, রাসেল ও মুজিবুল সরকারকে গলা কেটে হত্যা করে। এ ঘটনার ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো খুনি গ্রেফতার হয়নি। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে পেশাদার খুনিরাই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করেছে বলে অনেকটাই নিশ্চিত তারা। এর ঠিক চার দিন পরে পশ্চিম রামপুরার ওয়াপদা রোডের ৬৩ নম্বর বাড়িতে একুশে পদকপ্রাপ্ত ফটোসাংবাদিক আফতাব আহমেদকে শ্বাসরোধে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ২৫ ডিসেম্বর সকালে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মুখে স্কচটেপ লাগানো আফতাব আহমেদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। তারা আফতাব আহমেদের শয়নকক্ষে বিভিন্ন আসবাবপত্র, আলমিরা ও কাগজপত্র তছনছ করে ফেলে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হত্যা করে খুনিরা টাকা-পয়সা লুট করতেই কক্ষে মালামাল তছনছ করেছে। কে বা কারা কী কারণে আফতাব আহমেদকে হত্যা করেছে এ ব্যাপারে পরিবার ও পুলিশের পক্ষ থেকে কেউ নিশ্চিত না হলেও এ ঘটনায় প্রাথমিক সন্দেহের তালিকায় রয়েছে তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ও এক রাজমিস্ত্রি। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে দুজন গাঢাকা দিয়েছেন বলে পুলিশ জানায়। এ ব্যাপারে পুলিশের ঊধর্্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তবে বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।