আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইউক্রেনের সোভিয়েত বলয়ে প্রত্যাবর্তন নাকি ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান ?

স্বাধীনতা, সে তো আমার প্রিয় মানুষের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে কেনা

সংঘর্ষে উত্তাল ইউক্রেন ! মার্কিন যুক্তরাস্ট্র, ইউরোপ ও রাশিয়ার মধ্যে ইউক্রেন নিয়ে জমছে খেলা । বলা যায় এক প্রকার স্নায়ু যুদ্ধ চলছে এদের মধ্যে। প্রায় ২২ বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা পেলেও দেশটি বরাবরই সোভিয়েত উত্তরসুরী রাশিয়ার নিয়ন্ত্রনের মধ্যেই ছিল ও এখনো আছে তবে গত বছরের নভেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের নিমিত্তে প্রস্তাবিত চুক্তি সই না করে ও তা বাতিল করে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন প্রেসিডেন্ট ইয়ানুকোভিচ। এতেই ক্ষেপে যায় বিরোধী দল। সম্ভবত ঐ চুক্তিটি ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভক্তির প্রাথমিক পদক্ষেপ ছিল বিধায় রাশিয়া ঐ চুক্তির ব্যপারে উৎকণ্ঠিত আর এক্ষেত্রে রাশিয়ার উৎকণ্ঠিত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।

জার্মানিতে একটি সম্মেলনে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট হারম্যান ভ্যান রম্পুয়ে বলেছেন, ইউক্রেনের ভবিষ্যত ইইউ’র সঙ্গে সম্পৃক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, ইউক্রেনের গণতন্ত্রের লড়াইকে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে রাশিয়া বলেছে যারা সহিংস বিক্ষোভের সাফাই গাইছে তারা দু’মুখো।

বিরোধী দলের প্রধান অভিযোগ প্রেসিডেন্ট তাদের অন্ধকারের মধ্যে রেখে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছেন যা তাদের আশংকা হলো হয়তো অদুর ভবিষ্যতে রাশিয়ার নতুন করে কোনো ফেডারেল ব্যবস্থায় ইউক্রেন অন্তভুক্ত হতে পারে-হয়তো তা সোভিয়েত ইউনিয়নের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। একসময় এই ইউক্রেনই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা পাঁচটি প্রজাতন্ত্রের মধ্যে একটি, তবে বিরোধীদের আশংকা কতটুকু সত্য সেটা কোনো বিষয় নয়, বিষয় হলো এই চুক্তিকে উপলক্ষ্য করে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে যুক্তরাস্ট্র ।

যুক্তরাস্ট্র কোনোমতেই চায় না সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলো আবার রাশিয়ান বৃত্তে আবর্তন করুক, কিন্তু রাশিয়াও কাচা খেলোয়াড় নয়। এর আগে জর্জিয়া ও ওশেটিয়ার ব্যপারে আমরা রাশিয়ার দৃড় অবস্থান লক্ষ্য করেছি। রাশিয়া সেখানে তড়িৎ সেনা হস্তক্ষেপেও করেছিল যা রীতিমত ভড়কে দিয়েছিল যুক্তরাস্ট্রকে!

আন্দোলন শুরুর তিন মাস ধরে হাজার হাজার ইউক্রেন বাসী হাড় কাঁপানো ঠান্ডা উপেক্ষা করে তাবু খাটিয়েছিল রাজধানী কিয়েভের প্রাণকেন্দ্র ইন্ডিপেনডেন্স স্কোয়ার। গত কয়েক মাসে পুলিশের সঙ্গে একাধিক বার সংঘর্ষ হয়েছে তাঁদের। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করে সরকারী ঘোষনা আসে সন্ধার মধ্যেই ইন্ডিপেডেন্স স্কয়ার ছেড়ে দিতে হবে।

নির্ধারিত সময়ের পর শুরু হয়ে পুলিশি আক্রমন আর পুলিশের উপর চড়াও হয় বিরোধীরাও । বেঁধে যায় সংঘর্ষ ! নিহত ৬০ ! আহত ২৫০ এর অধিক ! এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে আহবান জানিয়েছে অবিলম্বে রক্তপাত বন্ধের ও সরকার ব্যর্থ হলে ইউক্রেনের উপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ হতে পারে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে, আর বিরোধী নেতা আরসেনি ইয়াতসেনুক বলেছেন,’আমরা পাশ্চাত্যের পক্ষ থেকে কেবল ঘোষণা নয় বরং অত্যন্ত স্পষ্ট অ্যাকশন প্ল্যান চাই’ কিন্তু রাশিয়া সেখানে দৃড় অবস্থান নেওয়াতে যুক্তরাস্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পদক্ষেপ কতটুকু কার্যকর হবে তা দেখার বিষয়। অবশ্য রাশিয়া ইতিমধ্যেই সব দোষ বিরোধীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে।

তবে বিরোধীরাও দমাবার পাত্র নয়। সরকারপক্ষ বিরোধীদের সহিংসতা ত্যাগ করে আলোচনার আহবান জানালেও জবাবে বিরোধীরাও পুলিশি অ্যকশন ও ইন্ডিপেপেন্স স্কয়ার থেকে পুলিশি পাহারা তুলে নিতে বলেছে।

সরকারপক্ষ অবশ্য প্রধান বিরোধী নেতাকে উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও আন্দোলন না থামায় প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করেন। এতে সংকট আরো ঘনিভুত হয়েছে যদিও ইউক্রেনে রাস্ট্রপতি শাসিত সরকার বিদ্যমান ! বিরোধীরা বলেছে তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ত্যাগ করবে না । সমস্যা হলো যুক্তরাস্ট্র সহজেই পিছু ছাড়ে না -যুক্তরাস্ট্রের ইন্ধনে সহিংসতা চলে অবিরত কারণ যুক্তরাস্ট্রের থাবা অনেক বড় আর এই দানবের সঙ্গে আছে মোসাহেব ইউরোপীয় ইউনিয়ন যারা একবাক্যে যুক্তরাস্ট্রের অধিপত্য মেনে নিয়েছে যদিও যুক্তরাস্ট্র এখন আগের চেয়ে অনেক দুর্বল। এখন দেখার বিষয় সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র নিয়ে নতুন করে কোল্ড ওয়ারে কোনপক্ষ জয়ী হয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.