প্রজাপতির মত ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় আমার ভাবনা গুলো, মাঝে মাঝে ওদের ছুঁতে পারি, মাঝে মাঝে হারিয়ে ফেলি...
রেশমা বউ সেজে বসে আছে। ভয়,শঙ্কা আর খানিকটা কৌতুহল নিয়ে অপেক্ষা করছে মানুষটির জন্য। নিজেকে আয়নায় দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। বউ সাজার পর তাকে নিশ্চয়ই আরো সুন্দর লাগছে। এমনিতেই সে বড্ড বেশি সুন্দর, আদর করে তাই তার দাদি তাকে লাইলি ডাকে।
লাইলি নামটা তার একটুও পছন্দ না, দাদির উপর খুব-ই বিরক্ত লাগে। আলতো করে সে তার নাকে হাত দেয়। নাকফুলটি ছুঁতেই তার মনটা খুশিতে ভরে যায়। এই হঠাৎ করে বিয়ে হয়ে যাওয়া সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। কিন্তু সবাই যখন হীরার নাকফুলটির প্রশংসা করছিল, তাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারে বিয়েতে হীরার নাকফুল দেয়া চাট্টিখানি কথা না, তখন যেন নিজের ভেতর সে একটা খুশির হিল্লোল টের পায়।
রেশমার মত সুন্দরীর এমন সাদামাটা মধ্যবিত্ত পরিবারে বিয়ে মেজ খালা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না, সারাদিন বিরক্ত মুখে গজগজ করছিলেন, তিনিই নাকফুলটি নাকে পরিয়ে দিয়ে রেশমাকে চুমু খেয়ে বললেন, “মা, তোকে অনেক সুন্দর লাগছে। তুই সুখি হবি”। কথাটা শুনে রেশমার চোখে পানি চলে আসে।
২৭ বছর পর...
রেশমা আজ বারডেম হাসপাতালের ICU তে, বেড নং-৯ এর রোগীর বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ছে আর রোগীর বুকে ফুঁ দিচ্ছে। রোগীর শারীরিক অবস্থা ভাল না, তিনি আজ ২১দিন ICU তে, ডাক্তাররা তাঁর জন্য বোর্ড মিটিং করেছেন , কোন আশার কথা শুনাতে পারেননি, বরং আশা ছেড়ে দিতে বলেছেন।
এই ২১ দিন রেশমাকে অনেক বলেও বাসায় পাঠানো যায় নি। দিনরাত সে হাসপাতালে থাকে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে যে তাঁর শুচিবায়ু আছে, হাসপাতালে কাটানো তাঁর বর্তমান জীবন দেখলে কে বলবে? সে এখানেই খাবার খায়, হাসপাতালের মেঝেতে ঘুমায়, সে যেন একটা ঘোরের মাঝে আছে। আজ সকালে ডাক্তাররা রোগীর শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হচ্ছে দেখে রেশমাকে ডেকেছেন। সে ডাক্তারদের কথা কিছুই বুঝতে পারছে না।
সে বেডের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তার নার্স তাকে অনেকবার বের করে দিতে চেয়েছেন। তিনি বার বার মিনতি করে বলছেন, “ আমি একটুও শব্দ করবো না, আমাকে একটু দাঁড়িয়ে থাকতে দিন”।
রিমি ICU তে গিয়ে তার মায়ের কাঁধে আলতো হাত রাখে। বাবার মাথার নিচ থেকে বালিশটা সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
খুব ধীরে ধীরে শ্বাস নিচ্ছেন বাবা, মনিটর গুলোর দিকে তাকিয়ে ও যেন বুঝতে পারে আর সময় নেই...। মায়ের মুখের দিকে তাকাতেই সে আঁতকে উঠে, “ মা, তোমার নাকফুল কোথায়”? রেশমা হতভম্ব হয়ে মেয়ের দিকে তাকায়। তারপর নাকফুলটি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু হীরার এই ছোট্ট নাকফুল কি খুঁজে পাওয়া যাবে? বাসর রাতে মানুষটি জানিয়েছিল, খুব শখ করে তিনি বহুদিন ধরে টাকা জমিয়ে এই নাকফুল কিনেছেন, রেশমা যেন কোনোদিন এই নাকফুলটি না খোলে। কি আশ্চর্য!! নাকফুলটি সাদা চাদরের উপর মানুষটির হাতের পাশে পরে আছে।
মনে হচ্ছে মানুষটি যেন নিজে নাকফুলটি পরিয়ে দিতে চায়। রেশমা তার মেয়েকে বললেন ভাঙ্গা নাকফুলটি তার নাকে পরিয়ে দিতে।
আজ শুক্রবার। মসজিদে জুমআর নামাজ শুরু হয়ে গেছে। লাইফ সাপোর্ট গুলো ডাক্তাররা খুলে ফেলতে চাইছেন।
তাদের মতে “ মানুষটি মারা যাচ্ছে, লাইফ সাপোর্ট থাকাতে তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। যন্ত্রপাতি গুলো তাঁর শরীর থেকে এখন খুলে ফেললে রোগীর কষ্ট কম হবে”। ডাক্তার নার্স সবাই মিলে রেশমাকে মানুষটির কাছ থেকে সরিয়ে দেন।
কিছুক্ষন পর...। রেশমার দু’ ছেলেমেয়ে চিৎকার করে কাঁদছে।
রেশমা নিজের অজান্তেই নাকে হাত দিলেন। তাঁর হীরার নাকফুলটি নাকে নেই... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।