কমনসেন্স সৃষ্টিকর্তার দেয়া একটা উপহার, সকলে ইহা নিয়ে পৃথিবীতে জন্মায় না মুভিটা দেখে অসাধারণ রকমের ভালো লাগলো, সেই ভালালাগাকেই প্রকাশ করারই একটি চেষ্টা।
Catch Me If You Can
IMDb: 7.9
User Rating: 7.8
Release Date: 25 December 2002 (USA)
বুঝলা ভায়া- চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা, যদি না পরো ধরা।
এই মুভিটি মূলত একটি আত্মজীবনী। আত্মজীবনীটি হলো Frank Abagnale Jr এর, যে কিনা ৬০ এর দশকের আমেরিকার সবচেয়ে বড় "ধাপ্পাবাজ" এর শিরোপা অর্জন করেছিল, সে Pan American World Airways এর একজন কো পাইলটের বেশে এই কোম্পানির চেক জালিয়াতি করে প্রায় তিরিশটি দেশের শাখা হতে শুধুমাত্র ব্লাফ দিয়ে পাঁচ বছরের মাথায়ে অলমোস্ট সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার হাত করে নেয়। এবং তার বয়স তখনও উনিশ পার হয় নি।
। । (কি তামশা)
মুভিটি দেখা শেষ হওয়ার পরে বেশ কিছুক্ষণ প্রায় টাসকি লেগে বসে থাকলাম, মাথায়ে খালি একটাই প্রশ্ন ঘুরতে থাকলো, "কেমনে সম্ভব?" ঘটনাটা বাংলাদেশে হলে বিশ্বাসযোগ্য হতো কারণ এই দেশের পচানব্বই ভাগ কাজই হয় পুরা হাওয়ার উপরে। কিন্তু আমেরিকার মত একটা সাফিস্টিকেটেড দেশে এরকম একটা ঘটনা ঘটবে এই ধারণা পুরাই আমার রাডারের অনেক উপরে দিয়ে গেছে। সাচিবিক কাজে কিছু দক্ষতা, গলার জোর আর বুকে সাহস, এই তিনটা এলিমেন্ট নিয়ে ফ্র্যান্ক তার এই অদ্ভুত জীবনে পা দেয়।
একটা ব্যক্তি কয়েকটা কারণে অপরাধ করে, যখন সে অভাবে থাকে, আর যখন সে অপরাধ করার নেশায়ে পরে যায়। পেটের দায়ে ছোটখাটো ব্লাফ দিতে দিতে ফ্র্যাঙ্কের রুচি পাল্টাতে থাকে। সে উঠতে থাকে বড় বড় মাছ ধরার জন্য। কাজ আগের থেকে আরও বিপদজনক হয়ে দাড়াতে থাকে। কিন্তু এইভাবে কতদূর?
মুভিতে মেইন চরিত্র বলতে ছিল দুইজন।
একজন হলো এই ফ্র্যান্ক, আচরণ পুরা ভিজা বিলাইয়ের মত, কিন্তু সুযোগে খামচি দিতে ছাড়ে না। দেখে বোঝাই যাবে না যে মাসুম একটা চেহারার ভিতরে লুকিয়ে আছে দুনিয়ার সকল ফাজলামি। এই চরিত্রটিকে ক্যামেরা লেন্সের সামনে দেহ দান করেছেন ট্রিপল টাইম অস্কার নমিনেটেড আমার দেখা প্রথম মুভি "টাইটানিক" এর হিরো Leonardo DiCaprio। ক্যাপ্রিওর ছটফটে আচরণ ও চেহারার কিশোর কিশোর ভাবের কারণেই মনে হয় এই ফ্র্যাঙ্কের চরিত্রটি অনেক ভালো মানিয়েছে, অতি দক্ষতার সাথে পার্টটি চুকিয়েছেন এই আটত্রিশ বছর বয়েসী অভিনেতা। ফ্র্যান্ক এর "দক্ষতা" কে চ্যালেঞ্জ করার জন্য রয়েছে আরেকটি চরিত্র।
FBI Agent Carl Hanratty, যে কিনা ডিপার্টমেন্ট এর একজন সিনিয়র পারসন। কিন্তু ফ্র্যাঙ্কের মত একটি চ্যাংরা ছেলের নাকানি চুবানি যেন গলার মধ্যে বিধছিল। ফ্র্যন্ককে না ধরা পর্যন্ত শান্তি নেই তার। নাওয়া খাওয়া সব হারাম করে ছুটল নিজের ছেলের বয়েসী একজন চেক জালিয়াতকে ধরার জন্য। আর এই অভিজ্ঞ এজেন্টের ভুমিকায়ে ছিলেন অভিজ্ঞ অভিনেতা পাঁচবারের অস্কার মনোনীত ও দুবারের বিজয়ী Tom Hanks।
যাকে এরকম FBI চরিত্রেই মানায়। একে যেন দৌড়াতে নয় দৌড়ানি দিতে দেখলে ভালো লাগে।
মুভিটির বেশ কিছু অংশ ছিল টম এন্ড জেরি কার্টুনের মত । কার্ল ফ্র্যন্ককে ধাওয়াতে ধাওয়াতে ক্লান্ত হয়। ফ্র্যান্ক আবার তাকে উস্কানি দেয়, উস্কানি পেয়ে কার্ল আবার নতুন করে ধাওয়া দিতে থাকে।
এভাবেই মূলত চলতে থাকে। মুভিটি দেখে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পাবেন যে কিভাবে একটা মানুষ অল্প কষ্টের ভিতর দিয়ে বাঘা বাঘা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুড়ো কাঁচকলা দেখিয়ে ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে যেতে বারে বারে সফল হয়। বাস্তবের সাথে মুভির মিল থাকলে বলব অন্যান্য মুভিতে দেখানো FBI এর দক্ষতা আর এই মুভির FBI এর দক্ষতার মধ্যে আকাশ পাতাল অমিল। তীরে এসে যে তরী কয়বার ডুবেছে তার হিসাব আমি হারিয়ে ফেলেছি। সারমর্মে বলতে গেলে, বাস্তব ইভেন্টের উপরে নির্মিত মুভি দেখে নিজেকে এতটা ইনজয় কখনো করি নি।
আর ইনজয় করবই না কেন? অভিনেতাদের পাশাপাশি মুভির ডিরেক্টর ছিল বাঘা। তার কর্ম নিয়ে আমার বলার কিছুই নেই। তেরোবার অস্কারের জন্য মনোনীত ও তিনবারের বিজয়ী আমার সবচেয়ে ফেভারিট ডিরেক্টর ও প্রডিউসার, দি কিং অফ ক্রিয়েটিভিটি Steven Spielberg।
বিজ্ঞাপনের জ্বালায়ে যদি টিভিতে ঈদের প্রোগ্রাম দেখতে বমি লাগে তাহলে এই মুভিটি নিঃসন্দেহে দেখে ফেলতে পারেন। চরম এন্টারটেইনমেন্ট।
আর যাই হবে না হবে বিনোদন মিস হবে না।
মুভিটা আপনারা ডাউনলোড করতে পারেন এইখান থেকে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।