আমি ফ্রা ঙ্কে স্টা ই ন......... আমার নিশিত রাতেরও বাদল ও ধারা
এশো হে গোপনে, আমার স্বপন লোকের দ্বী সাহারা...
অনেক দূর থেকে রবি ঠাকুরের এই গান বেজে চলছে।
রাতুল ঘরে একা। মাত্র তার স্টকে থাকা শেষ সিগেরেট টা শেষ হয়েছে। আরো সিগেরেট খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পকেট সাঁয় দিচ্ছে না। এর উপর বাইরে ভর দুপুরেই ঘুটঘুটে অন্ধকার।
মাঝ বর্ষা চলছে এখন। ঢাকার এই গলি গুলোতে সামান্য বৃষ্টিতেই পানি উঠে ঘরের দুয়ারে। রাতুল মেসে থাকে না একা থাকে। কপাল ভালো এ দিক টায় মানুষ খুব কম আসে। তাই বাড়িওয়ালা দয়া করে থাকতে দিয়েছেন ব্যাচেলার হওয়া স্বত্ত্বেও।
রাতুল একটু ইন্টোভার্ট মানুষ তাই মানুষের সাথে খুব একটা মিলে উঠতে পারে না সে। তার জীবনের এক মাত্র সঙ্গী সিগেরেট। বারবনিতার ঘরে রাতুলের জন্ম। তার বাবা কে সে জানে না। জানতেও চায় না।
কারণ সে বাবা কোন দিন তাকে স্বীকার করে নেবে না। কেনই বা করবে হয়তো তার একটা সংসার আছে। কোথায় কোন পতিতালয়ে এক নারীর দেহে সামান্য বীর্য রস ঢেলে দিয়ে এসেছিলো তাতে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু জন্মায় তাতে তার কিছুই করার নেই। হাজার হোক আনন্দ করার জন্য সে দু’ চারশো টাকা খরচ করেছিলো।
রাতুল বড় হয়েছে এক মিশনারি সিস্টারের কাছে।
সে পরিচয় গোপন করে মানুষ করেছে রাতুল কে। সমাজ তো পতিতার গর্ভের অবৈধ স্বন্তান কে মেনে নেয় না, যি হোক সেই মহিলা রাতুলের কাছে মায়ের চেয়ে কম কিছু না। তার পতিতা মা ছিলেন মুসলিম আর আরেকজন খ্রিস্টান, অবাক করা বিষয় হলো সে মহিলা রাতুল কে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা দেন নি। এমন কি কোন ধর্মাচারণ ও শেখান নি। সে হিসেবে কে রাতুল কে নাস্তিক বলা যায় না।
কারণ সে ধর্মের কুৎসিত দিক টা জানে না হয়তোবা দেখে নি কোন দিন। সে জানে তার ধর্ম হলো বেঁচে থাকা।
রাতুল ঢাকা কলোজিয়েট স্কুল থেকে A+ পেয়ে এস এস সি পাস করেছে। এইচ এস সি করেছে নটরডেম কলেজ থেকে সেই মিশনারির সাহায্যে পাস করেছে এইচ এস সি। এবার ও ভালো রেজাল্ট।
কাগজ পত্রে রাতুলের নাম তা খুব অদ্ধুত। রাতুল হক গোমেজ। তার কোন ধর্ম নেই।
রাতুল যখন ঢাকা ভার্সিটিতে ভাইবা দিতে গিয়েছিলো তখন ভাইবা বোর্ডের লোক টি তাকে প্রশ্ন করেছিলো তার বাবার নাম। রাতুল বলেছিলো যীশু।
লোক টি হয়তো খেয়াল করে নি তাই আর তাকে ঘাটায় নি। এখন রাতুল দর্শনের শেষ বর্ষের ছাত্র। ধর্ম তার মনে দাগ কেটে যেতে পারে নি। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব তার কাছে হাস্যকর লেগেছে। দ্বান্দিক বস্তুবাদ কে সে বিশ্বাস করে।
আন্দোলন করে মানুষের অধিকারের জন্য। মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির বেশ জনপ্রিয় নেতা এখন সে।
বৃষ্টি থামছে না। এমন সময় ঘরের দরওয়াজায় বেশ জোড়েই করাঘাত পরলো। সুনিতা এসেছে।
সুনিতা রানী, রাতুলের কমরেড, ব্রাক্ষণ পরিবারের স্বন্তান। ধর্ম তার কাছে অভিশাপ। রাতুলের প্রেমিকাও বলা চলে। সে যাই হোক সামান্য সময়ের জন্য বৃষ্টি, সিগেরেট, ধোয়া আর পারিপার্শিকতাকে ভুলিয়ে দেয় সুনিতা। অবাধ এবং বিবাহ বহির্ভুত দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে কোন বাধা দেখে না সুনিতা।
রাতুলের আগে আরো অনেকের সাথেই তার সম্পর্ক ছিলো। তার এই জীবন বোধ দিয়েছে তার ই বাবার সমান পিশো মশাই। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ধর্ষিতা হবার পর সে জীবন কে পজিটিভ ভাবেই নিয়েছিলো। আর জীবন তাকে শিখিয়েছে পুরুষের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। কিন্তু এই শিক্ষাই একের পর এক ভুল করায় সুনিতাকে।
মৃত্যু দর্শন, জীবন প্রথা কে সে নিজের মতো করে শিখে নিয়েছে। নিজের মতো করে নিয়েছে।
যাই হোক সময় বয়ে চলে সময়ের স্রোতে। আমাদের সমাজের রাতুল সুনিতারাও বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকার জন্যই হয়তো বেঁচে থাকে।
মরিতে চাহি না এই সুন্দর ভুবনে...
সুনিতা চলে যায়, চায়ের ক্ষুধা সিগেরেটের উন্মাতাল ধোয়া আবার ডাকে রাতুল কে। বাইরে এসে দেখে রাস্তায় মানুষ নেই। কিছু আলো জ্বলছে শহরের কোনায় ল্যাম্প পোষ্ট গুলুতে। শহরে কারফিউ জারি হয়েছে। রাতুল গ্রেপ্তার হলো মাউবাদী বিদ্রোহী কমিউনিস্ট গেরিলাদের হাতে।
সে তার পলিটি বুর্যোনর ও নাম বলেছিলো কাজ হয় নি। টর্চার সেলে একজন গেরিলা প্রশ্ন করেছিলো তার বাবার নাম কি। রাতুল আঘাতে জর্জরিত দেহ নিয়ে বিস্ফোরিত চোখে উত্তর দিয়েছিলো যীশু। আর তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজোন বোধ করে নি। কমান্ডার রা।
হাজার হোক সে ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজের পথে বাঁধা একজন ধার্মিক। বেয়োনেট যখন রাতুল কে এফেড় ওফেড় করে দেয় তখন তার মুখে একটা শব্দই বের হয়ে ছিলো। মা!
সুনিতার সাথে সে দিন দেখা হলো সে এখন শিল্প মন্ত্রীর একান্ত সচিব। গায়ে হাজার টাকার পারফিউমের গন্ধ। হঠকারী সমাজতন্ত্রের দোহাই শুধু রাতুলের মতো কিছু প্রাণ ই নিয়ে গেছে কিন্তু কিছুই দিয়ে যায় নি শুধু হাহাকার ছাড়া।
রাতুল মারা গেছে খবর টা জানে কি না সুনীতা সেটা আমার জানা নেই। ঘৃণা আর লজ্জ্বায় শুধুই মুখ লুকিয়েছি। আর মনে মনে বলেছি যীশু। তুমি তো জগৎ পিতা নাস্তিকের পিতা কি তুমি হতে পারো না। তুমি কি বিক্রি হয়ে গেছো ধর্মের নামে দ্বীনের নামে কাউমের নামে...!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।