আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তোমারই নাম...

আগামীকাল পঁচিশে বৈশাখ। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্মে ব্যবহূত বাংলা নামগুলো এখনো আধুনিক। সেই নামগুলো এখনো মা-বাবারা বেছে নিচ্ছেন সন্তানের জন্য

সেই ১২৯৮ (বাংলা) সালে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘দেনা পাওনা’ গল্পটি। সে গল্পে একটি চরিত্রের নাম ছিল ‘নিরুপমা’।

নিরুপমা! এ যে আধুনিক নাম! তখন কি এ ধরনের নামের প্রচলন ছিল? আমরা তো এই সময়টিতে লেখা রবীন্দ্রনাথের অন্য গল্পগুলোয় দেখি রামকানাই, বরদাসুন্দরী, হিমাংশুমালী, বনমালী, শশীভূষণ, গিরিবালা ধরনের নাম। তাহলে কি রবীন্দ্রনাথ গল্প লেখার সময় নতুন বাংলা নাম নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেছিলেন? এ প্রশ্নের জবাব এখন আর পাওয়া যাবে না, তবে সেই গল্পটিতেই রবীন্দ্রনাথ স্পষ্ট করেছেন এভাবে, ‘এ গোষ্ঠীতে এমন শৌখিন নাম ইতিপূর্বে কখনো শোনা যায় নাই। প্রায় ঠাকুর-দেবতার নামই প্রচলিত ছিল—গণেশ, কার্তিক, পার্বতী তাহার উদাহরণ। ’ রবীন্দ্রনাথের কাছে অনেকেই আসতেন, যাঁরা সন্তানদের নাম রাখার ঝামেলাটা রবীন্দ্রনাথকে দিয়েই মেটাতেন। অন্তত চারটি নাম এ মুহূর্তে বলা যায়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার ‘প্রিয়দর্শিনী’ নামটি রবীন্দ্রনাথেরই দেওয়া। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের নামটিও। আর আর্জেন্টিনার ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে ‘বিজয়া’ বলে ডাকতেন তিনি ভিক্টোরিয়াকেই অনুবাদ করে। রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী শান্তিময়ের নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন শান্তিদেব ঘোষ।
কে না জানেন, রবীন্দ্রনাথের স্ত্রীর নাম ছিল ভবতারিণী।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাম পাল্টে রাখেন মৃণালিনী দেবী। নিজের পাঁচ সন্তানের নাম তিনি রেখেছিলেন রথীন্দ্রনাথ, শমীন্দ্রনাথ, মাধুরীলতা, রেণুকা আর মীরা।
রবীন্দ্রনাথ আরও পরে যে গল্প, উপন্যাসগুলো লিখেছেন, তাতে নামের ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। যেমন ‘নামঞ্জুর গল্প’-এর (১৩৩২) একটি চরিত্রের নাম অমিয়া, ‘সংস্কার’ গল্পে কলিকা, ‘চোরাই ধন’ গল্পে অরুণা, সুনেত্রা। শেষের কবিতার অমিত-লাবণ্যের কথা তো সবাই জানেন।

গোরার বিনয়, ললিতা, সুচরিতা। এখানেও দেওয়ার মতো একটি তথ্য হচ্ছে, সুচরিতার মাসির নাম আবার হরিমোহিনী। এলা, সোহিনী, নীলা—ধরনের নামও তো রবীন্দ্রনাথে খুঁজে পাওয়া যাবে বিস্তর।
রবীন্দ্রনাথের রচনা থেকে কত মানুষ যে রেখেছেন তাঁর শিশুর নাম। যেমন, প্রকৃতি।

চণ্ডালিকা নৃত্যনাট্যের প্রধান চরিত্র এই প্রকৃতি। রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী লাইসা আহমেদ লিসা নিজের মেয়ের নাম রেখেছেন প্রকৃতি। সেই উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় প্রকৃতি চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছিলেন লিসা। সেই থেকে নামটার প্রতি ছিল দুর্বলতা। তাই মেয়ে হওয়ার পর এই নামটিকেই বেছে নিয়েছেন।

প্রকৃতির পুরো নাম প্রকৃতি মনোলীনা, যার অর্থ প্রকৃতি মনের মাঝে লীন।
এবার বলি শিল্পী কৃষ্ণকলির কথা। তাঁর নাম ছিল কাজী শ্রাবন্তী ইসলাম। তখন তিনি খুব ছোট। এ অবস্থায় খুলনায় একবার রবীন্দ্রজয়ন্তী হলো।

সেখানে গান করতে এলেন শান্তিদেব ঘোষ। গভীর রাতে ‘কৃষ্ণকলি আমি তারে বলি’ গানটা যখন করছিলেন, তখন কাজী শ্রাবন্তী ইসলামের মা মেহেরুননেসার মনে তা গেঁথে গেল। পরদিনই স্কুলে গিয়ে তিনি মেয়েটির আগের নাম বদলে রাখলেন কাজী কৃষ্ণকলি ইসলাম। সেই থেকে শ্রাবন্তী হয়ে গেল কৃষ্ণকলি। সন্ধ্যামালতী ফুলটিই যে কৃষ্ণকলি, সে কথাও ছোট মেয়েটি জেনে নিল মায়ের কাছ থেকে।


বৈচিত্র্যপিয়াসী রবীন্দ্রনাথ কতদিকেই না মেলেছিলেন তাঁর ভাবনার ডানা। আমরা শুধু নাম নিয়েই থাকলাম। তাঁর রচনা থেকে নাম বেছে নেওয়ার তৃষ্ণা তো এখনো বর্তমান। তা ছাড়া বাংলা নামের প্রতি ভালোবাসার অনেকটাই তো তাঁরই কাছ থেকেই পাওয়া। মা ও মাটির কাছাকাছি যে নাম, তা কি সুন্দর না হয়ে পারে?

রবীন্দ্ররচনায় ব্যবহূত কিছু নাম
উপন্যাস
ঘরে বাইরে—নিখিল (নিখিলেশ), সন্দ্বীপ, অমূল্য, বিমলা
যোগাযোগ—আনন্দ, কুমুদিনী, সুবেধ, নবীন, শ্যামা
শেষের কবিতা—অমিত, লাবণ্য
দুই বোন—শর্মিলা, নীরদ, ঊর্মিমালা
মালঞ্চ—সরলা, নীরজা
চার অধ্যায়—এলা, অতীন
চতুরঙ্গ—শচীশ, দামিনী

গল্প
দিদি—শশী, নীলমণি
অতিথি—অন্নপূর্ণা, চারু
ডিটেকটিভ—মন্মথ
ল্যাবরেটরি—নন্দন, সোহিনী, রেবতী
সমাপ্তি—মৃন্ময়ী, অপূর্ব
নষ্টনীড়—চারুলতা, অমল

নাটক ও নৃত্যনাট্য
চণ্ডালিকা—প্রকৃতি, আনন্দ
মায়ার খেলা—শান্তা, মধুশ্রী, শচী, কমলিকা
রক্তকরবী—নন্দিনী, রঞ্জন।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।