জন্মের পর থেকে পল্টনে বড় হয়েছি, কিন্তু কিছুটা অর্থ সংকটে পরেই ভাড়া বাসা ছেড়ে স্বপরিবারে উঠতে হয়েছে ডেমরার নিজেদের বাড়িতে। (ঠিক অনার্সের দ্বিতিয় বর্ষেই) লোকে শুনলেই বলে -"আহা কি সৌভাগ্য/ আজকাল কতজন লোক নিজের বাড়িতে থাকতে পারে"? আমি বলি অভিষপ্ত।
ভার্সিটি ধানমন্ডিতে হওয়ায় বাস ই একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু সেটা পাওয়া যাবে যাত্রাবাড়িতে যাবার পর। এর আগে আছে ডেমরার মানুষের একমাত্র অন্ধের জ্যোতি লেগুনা (কম খরচ ও সহজলভ্য)।
বাসের সম্পর্কে বেশি কিছু বলব না কারন ওখনে কিছু সংরক্ষিত মহিলা আসন জাত বাচিয়ে দেয়। কিন্তু লেগুনা (?!) আহা আহা সে কি জিনিষ আর তার পুরুষ যাত্রীরা(?!)। দু হাত শরীরের দু পাশে এমন ভাবে সেট করে বসেন যেন কনুইটা পাশে বসা মহিলার গোপন অঙ্গ বরাবর থাকে (একটু ব্রেক কষলেই হল, কেল্লাফতে)। অথবা এমন আরাম আয়েশে বসবেন যেন ব্রেক করলেই নিজের ভর পাশের মহিলার গায়ের উপর দেয়া যায়। আর তো আছেই দুখানা রয়েল ঠ্যং।
এমনভাবে চেগিয়ে বসে যেন পাশের মহিলার পায়ের সাথে লেগে লেগে থাকে।
এমতাবস্থায় যদি কন্ঠে কয়েক কেজি মধু ঢেলেও বলেন - "ভাইয়া বা আঙ্কেল একটু দেখেন না ঐদিকে চেপে বসা যায় কি?" ব্যস হয়ে গেল আগ্ন্যোৎপাত। চিৎকার করে বলবে (পারলে মারতে আসত)-" দেখায় দেন কই সরব?/আপনাদের নিয়েই সব সমস্যা, যত্তসব/প্রাইভেটে করে আসা যাওয়া করতে পারেন না?/ ওই গাড়ী থামা আপারে একটা রিকশা কইরা দে, আরাম কইরা যাক"। সবচেয়ে মজার ব্যপার অন্য পুরুষ যাত্রীরা এই মুহূর্তে 'বোবা' ভূমিকায় থাকেন (সম্ভবত নীরবতায় স্বজাতীয়কে স্বমর্থন করে যায়)।
তবে কয়েকটা কথা না বললেই নয়।
কিছু মানুষ আছেন যারা আসলেই মহিলাদের সমস্যা বোঝেন। তারা নিজের হাত পা নিজের শরীর বরাবরই রাখেন এবং তাদের কষ্ট হলেও চেষ্টা করেন পাশের মহিলাকে কোনভাবেই স্পর্ষ না করার। তবে এই জাতীয় লোকের সংখ্যা খুবই কম।
এখন যেহেতু আমার পক্ষে সম্ভব নয় জনে জনে শিক্ষা দেয়া যে ভাই পাবলিক প্লেস এ চলতে হলে নিজের শরীরকে নিজের মধ্যেই রাখতে হয় এভাবে অন্যের উপর এলিয়ে দিতে হয় না, তাই একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে সব মেনে নেই।
এই দেশে জন্মে এর চেয়ে বেশী আমার আর কী বা করার আছে? যে দেশের লোকেরা ঘটি বাটি লোটা বিক্রী করে দেয় বিদেশের একটা ঝাড়ু মারা ভিসা পাবার আশায় কিন্তু নিজের ঘরে পরে থাকা ময়লায় হাত দেয় না প্রেস্টিজ যাবার ভয়ে।
যে দেশে ধার করে হলেও ফেইসবুক চালিয়ে প্রমান করে দিবে সে কত্ত সামাজিক কিন্তু পাবলিক প্লেসে উনিশ থেকে বিশ হলে মারামারি বাধিয়ে রক্তারক্তি করে বসে থাকে। তাদের কাছে এরচেয়ে বেশী কিইবা প্রত্যাশা করব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।