'জীবন' হলো এক কাপ গরম চা আর একটা জ্বলন্ত বেনসনের মতো। গরম চা একসময় জুড়িয়ে যাবে, বেনসনের তামাকও পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।
কেলাস ফাইভে যখন পড়ি, ইংরাজি ছ্যারে একবার রচনা লিখবার দিছিল: "এ জার্নি বাই বাস"। যদ্দুর মুনে পড়ে, আমি শুরুতে লিখছিলাম, "বাছের সামনে দুই চাক্কা, পিছে ভি দুইখান। সামনে আছে হেড লাইট, আর পিছে দিয়া সিগারেটের ধুঁয়ার মুতো কালা ধুমা বাইর হয়।
" -- এদ্দুর পইড়াই ছ্যারে আমারে ডাইক্কা কইছিল, "ব্যাটা, এই কেলাসে তুই একমাত্র 'বাছ' কি জিনিস, হেইডা জানস। তাই, তুই ভবিস্যতে বড় বাছ ডেরাইভার হ, এই দুয়া কইরা দিতাছি। "
তখন তো ছুডো ছিলাম, বুঝি নাইক্কা যে, ছ্যারে বামে দিয়া চামে কাইট্টা আমারে গাইল পারছে। ছ্যারে আমারে চিনবার পারে নাই। কিন্তু হেই বাছ জার্নির কথা না, একটা হাছাই বাছে উঠনের অভিজ্ঞতা কইতাছি।
মেলা দিন হইল আমি বাছে উডিনা। হেইদিন হইছে কি, ঢাকা থেইক্কা গেসলাম সাভারে একটা কামে। ফিরনের পথে কি মনে কইল, আল্লার নাম নিয়া একটা লুকাল বাছে উইঠা পড়লাম। উইঠা তো পইড়া গেলাম এক্কেরে মাইনকার চিপায়। কুনো ছিট খালি নাই।
এদিক-ওদিক চায়া আমি পিছের দিকে একটু আগানির টেরাই মারলাম। এক মাস্তান চেহারার লুকে আমারে কয়: "ভাই, ভুলেও পিছের দিকে আসার চেষ্টা কইরেননা, তাইলে দেখবেন আপনে নাই, কিন্তু, বাস আছে"। আমি কই, "না ভাই, ইয়ে মানে..." মানে মানে লোহার রড ধইরা যেইহানে খাড়ায়া ছিলাম, ওই হানেই থাকলাম। বাছ চলতাছে। গাদাগাদি কইরা আমি কুনো মতে লোহার রড ধইরা খাড়ায়া আছি, আর চিন্তা করতাছি, কুন দুখখে যে এইহানে মরতে আইছিলাম!
কিছুক্ষণ পরে কন্ডাক্টর আইলো ভাড়া নিতে।
"শ্যামলী পর্যন্ত কত ভাড়া?" এক যাত্রী জিগাইলো। "ত্রিশ টেকা দেন। " কন্ডাক্টর সাফ জানায়া দিলো। তারপরেই ঘটলো অঘটন:
যাত্রী: ফাইজলামি পাইসস? ত্রিশ টেয়া দিয়া তো গুলিস্থান যাওন যাইব। এই ল দশ টেয়া।
কন্ডাক্টর: ওই মিয়া, বেশি কথা কইয়েন না, ত্রিশ টেকার কমে যাওন যাইবনা।
যাত্রী: আরে শালায় কয় কি? এইডা কি তর বাপের গাড়ি নাকি?
কন্ডাক্টর: ওই মিয়া, বাপ তুইলা কথা কইবেননা কয়া দিতাসি।
যাত্রী: কইলে কি করবি?
কন্ডাক্টর: বাস থেইকা নামায়া দিমু।
"কি? এতবড় কথা?" এইডা কইয়াই হেই যাত্রী ভাই কন্ডাক্টররে কইশা একখান চড় দিয়া দিল। কন্ডাক্টরেও মারতে আইসিল।
লেকিন, বাছের অন্য যাত্রীরা আটকায় দিছে। এইডা নিয়া মেলা টাইম কেচাল হইল।
আবার বাছ চলতাছে। আমি লোহার রড ধইরা খাড়ায়া আছি। এমনে একটু ঝিমানির মত আইলো।
হঠাৎ শুনি ছিটে বইয়া আছে এমুন এক যাত্রী খাড়ায় আছে এমুন আরেক জনরে কইতাছে: "ভাই, পাছাডা একটু সাইডে লন, এক্কেরে মুখের ভিতরে হানদায়া দিছেন। " এইডা হুইনা খাড়ায় যে ছিল, হ্যয় কয়: "ওই মিয়া, বেশি চিল্লায়েননা, এমনে তো সিট দখলে রাখছেন, নোয়াবের মতন যাইবার চাইলে আলেদা গাড়ী ভাড়া কইরা যান। " আবার শুরু হয়া গেল দুই জনের মইধ্যে চিল্লা-চিল্লি।
এর মইধ্যে বাছে কোইথেইকা এক ক্যানভাছারে উঠছে। ওয় দেখি কি একখান মলম ব্যাচতাছে।
কয়: " ....হ্যাঁ ভাই, যেসকল ভাইদের গোপন অঙ্গে সমইস্যা, স্বামী-স্ত্রীর মিলনে অক্ষমতা, পাইলস এবং ডায়েবেটিস, ব্লাডপ্রেসার সহ আরও নানা রোগের জইন্য আমার এই পাগলা মলম। এই মলম জাগাত লাগাইলে একদিনের মইধ্যে অসুখ সাইরা যাবে ইনশাল্লা। বিফলে মূল্য ফেরত। বাজারে কিনতে গ্যালে এই মলম প্রতি পিসের দাম পড়ব দশ টাকা, দশ টাকা, দশ টাকা। কিন্তু আজকে আপনাদের জন্য ইসপিশাল ডিসকাউন্ট পাঁচ টাকা।
অর্থাৎ, প্রতি পিস মলমের দাম মাত্র পাঁচ টাকা, পাঁচ টাকা, পাঁচ টাকা। আছেন নাকি কোন ভাই, কোন বোইন? শুধু আওয়াজ দিবেন, জায়গায় মলম পোঁছায়া যাবে। ... আছেন নাকি কোন ভাই...."
পরের ইস্টিশনে বাছ থামলে দেখি একখান ছিট খালি হইছে। লাপ মাইরা বইলাম। আহ্! কি আরাম।
খাড়ায় থাকতে থাকতে পা দুইডা এক্কেরে ধইরা গ্যাছে। এ্যারপর হালকা এট্টু ঝিমানি আইলো। হঠাৎ এক বেডায় দেহি ঠেলা দিতাছে: "বাই, গুলিস্থান তো আয়া পড়ছে। অহনে বাড়িত গিয়া ঘুমান। " আমি তো কই, ইয়া আল্লা, ঘটনা তো খারাপ।
নামোনের কথা শ্যমলী, আয়া পরছি গুলিস্থান। সর্বনাশ হইছে। তাড়াতাড়ি নাইমা একটা সিগারেট কিনতে গিয়া পকেটে হাত দিয়া দেহি, আমার মানিব্যাগ, নাই, মোবাইলডাও নাই। আমি তো পুরাই বেকুব! রাস্তার মইধ্যে মেলা টাইম হুদাই খাড়ায়া থাকলাম। এর পর মনের দু:খে দুই পা দিয়া হাইটা শ্যামলীর দিকে রওনা হইলাম।
...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।