আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্নি টু বেলজিয়াম...

আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই, আমায় কতটা ভালবাসো সেই কথাটা জানতে চাই..
হঠাৎ করে ব্রাসেলস যাবার প্রস্তাব!!! প্রবাসীদের জন্য কাজ করছে এমন একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি পেলাম। প‌্যারিস থেকে বেলজিয়াম সবচেয়ে কাছের দেশ। বলে ফেললাম- ইয়েস... যেহেতু মিডিয়া প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করছি তাই নিউজ করাটাই আমার মূখ্য উদ্দেশ্য। এরপর নিদ্রিষ্ট দিনে আমরা ৩ টিভি চ্যানেলের রিপোর্টার, একজন ফটো জার্নালিষ্ট এবং অন্যজন আমাদের গাইড যিনি অনেক বৎসর ধরেই ফ্রান্সে থাকেন। পাঁচজন ফোর্ড কার নিয়ে ভোরে যাত্রা শুরু।

একসময় ফ্রান্স বর্ডার ছেড়ে বেলজিয়ামে প্রবেশ করলাম। বর্ডারে কোন পুলিশ, ইমিগ্রেশন কিছুই নেই। বুঝাই গেলনা যে, একটি দেশ ছেড়ে অন্য দেশে ইন করেছি... মজার বিষয় হচ্ছে ফ্রান্স এবং বেলজিয়ামের ভাষা এক তাই রাস্তায় যেসব লেখা দেখলাম সবই আমাদের কাছে অভিন্ন। কিছুক্ষন পর মোবাইলে ম্যাসেজ পেলাম- বেলজিয়াম থেকে ফোন ইনকামিং/ আউটগোয়িং এ কত ইউরো করে কাঁটবে। অর্থাৎ ফোন অটো রোমিং হয়ে গেল।

আগেরবার যখন বাই রোডে স্পেন গিয়েছিলাম তখনও মোবাইল লাইন কোম্পানী বিষয়টি জানান দিয়েছিল। যাত্রাপথে আমরা ৪ জন প‌্রথমবারের মতো বেলজিয়াম যাচ্ছি। আমি রাতে মাত্র কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়েছি। ভীষন ঘুম পাচ্ছিল, যেহেতু নতুন একটা দেশে যাচ্ছি তাই সাইট সিয়িং এর লোভ সামলাতে পারছিলামনা। কিন্তু বেলজিয়াম প্রবেশ করে আকর্ষন হারালাম।

তেমন সুন্দর বা নতুনত্ব পেলামনা!!! আসলে প‌্যারিস লাইফে আমরা অভ্যস্থ হয়ে গেছি। মাঝপথে কয়েকবার যাত্রা বিরতি করে কফি, ব্রেড ইত্যাদি খেয়ে নিলাম। এভাবে ৩ ঘন্টা পর ব্রাসেলস পৌছলাম। ইউরোপে প্রধানত যে ভাষাগত সমস্যা বেলজিয়ামে এসে ফরাসী ভাষা হওয়াতে বেলজিয়ামকে ফ্রান্সের রাজ্য বলেই মনে হচ্ছিল। এবার গন্তব্য শেরাটন হোটেল, আমাদের কনফারেন্স সেখানেই।

হোটেলের সামনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত এবং বেলজিয়ামে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশীর সাথে দেখা। প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে কিছু ছোট ছেলে-মেয়েও এসেছে যারা ইউরোপেই থাকে। সবাই সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে গেল, মাঝখানে লাল কার্পেট। একসময় সাইরেন বাজিয়ে সামনে-পিছনে মোটর শোভাযাত্রা সহ কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহর এসে গেল। বেলজিয়াম সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের গরীব একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে এমন 'গার্ড অব অনার' দিয়ে হোটেলে নিয়ে এলো যেটি না বললেই নয়।

প্রধানমন্ত্রীকে রিসেপশনের পর ৫ টায় আমাদের মিটিং ঠিক হলো। লাঞ্চের জন্য ব্রাসেলসের এক বাঙালী ভাইয়ের রেস্টুরেন্টে সবার দাওয়াতের কথা বলা হলো। আমরা যেহেতু ব্রাসেলস চিনিনা এক লোক গাইড করে আমাদের ১৫-২০ জনকে হেঁটে সেই রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাচ্ছে। তার পিছনে চলতে-চলতে একসময় মনে হল সেই লোকই বোধহয় ব্রাসেলস চিনেনা!!! বলেছিল দশ-পনের মিনিট হেঁটে গেলেই রেস্টুরেন্টে পৌছা যাবে। কিন্তু একি !!! পথ যেন শেষ হয়না।

সাথে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলাও ছিল যিনি ইংল্যান্ড থেকে এসেছেন। ক্ষিধায় সবার নাড়ী-ভূড়ি জ্বলছিল। আমার সাথে ক্যামেরা, ট্রাইপড, ল্যাপটপ, ব্যাগ সহ আর কত হাঁটা যায়? প্রত্যেকবারই মনে হচ্ছিল এই রাস্তার পরের রাস্থায় বুঝি সেই রেস্টুরেন্ট! এভাবে দুই ঘন্টা চলার পর যেখানে পৌছলাম সেটিকে রেষ্টুরেন্ট বলা যায়না। বাঙালীর ফাষ্ট ফুডের দোকান, যেখানে কাষ্টমার এবং কর্মচারী প্রায় সবাই নিগ্রো। অপরিষ্কার আফ্রিকান এবং দোকানের অবস্থা দেখে সবার মেজাজ চরম খারাপ।

কয়েকজন বলে উঠল- এত কষ্ট দিয়ে যে নিয়ে এসেছে তাকে ধোলাই দেয়ার জন্য। যাইহোক, আমরা সাথে-সাথে সেখান থেকে ব্যাক করলাম। এরপর জনপ্রতি ১০ ইউরো দিয়ে এক পাকিস্থানী রেস্টুরেন্টে যে 'বুফে' খেলাম তা ভুলার মত নয়। লাভের মধ্যে যা হয়েছে- আমরা যেখান দিয়ে যাচ্ছিলাম সেটি ছিল একেবারে 'হার্ট অব ব্রাসেলস'। এত সুন্দর হতে পারে ব্রাসেলস, আমার কাছে অকল্পনীয় ছিল।

হাঁটতে হাঁটতে ব্রাসেলস দেখা হয়ে গেল... বেলজিয়াম আসাটা সার্থক মনে হয়েছিল তখন... বিকালে আবার শেরাটনে ফিরলাম। এবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পালা। হোটেল কতৃপক্ষ আমাদের বললো- কনফারেন্সে মিডিয়া এলাউ নেই। মেজাজ গেল আবার বিগড়ে। জানালাম আমার এপয়নমেন্ট বাংলাদেশ থেকে নেয়া আছে।

প্রধানমন্ত্রীর ডিপিএস মাহবুবুল হক শাকিল এ বিষয়ে অবগত। কতৃপক্ষ শাকিলকে খবর প‌ৌছালো। ভদ্রলোক চলে আসলেন এবং পরিচয় দেয়ার পর বললো- হ্যাঁ, আপনার কথা আমাকে ঢাকা থেকে বলা হয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী মিডিয়াকে সৌজন্য সাক্ষাত দিলেন। বেলজিয়াম সফর যেহেতু সরকারী ট্যুর নয় তাই মিঃ শাকিল অনুরোধ করলো নিউজে প্রধানমন্ত্রীর কোন ভয়েস থাকবেনা।

কাজ শেষ, এবার ফেরার পালা। আসার সময় রাস্থা ভুল করে ৩ ঘন্টার জার্নি ৫ ঘন্টায় গড়াল। রাত ২ টায় বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আবার কম্পিউটার নিয়ে বসে গেলাম নিউজ এডিটিং করতে। সকাল ৬ টা পর্যন্ত কাজ করে নিউজ পাঠিয়ে ঘুমাতে গেলাম... জীবনে নতুন কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হল। ব্রাসেলসে আবার যাওয়ার ইচ্ছা আছে, তবে এর মধ্যে এখনো যেখানে যাওয়া হয়নি সেসব দেশে যেতে চাই।

সবার জন্য শুভকামনা...
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।