আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ জার্নি বাই বাস

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ভার্সিটিতে পড়ার জন্য ঢাকায় আসার পর থেকে যে কোন ধরণের ছুটির জন্যসব সময় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি। স্কুল কলেজে পড়ার দিন গুলোতে বাড়ি ফেরার তাড়না জিনিসটা কথনো বুঝিনি। এখন কিছুটা বুঝতে পারি। থাকি যেহেতু বাংলাদেশে তাই বাস ট্রেনের টিকিট করার জন্য ঝামেলায় পড়তে হবে এটা এক ধরণের অলিখিত সত্য বলেই ধরে নিয়েছি। গত সেমিস্টারে ট্রেনের টিকেট কাটা নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল।

দশ দিন আগে ট্রেনের টিকেট কেটে ফেলতে হয় টিকেট পাওয়া যাবেনা বলে। পরে টিকেট কাটা হয়ে গেলে শুনি ক্লাস বন্ধ হয়ে গেলেও একটা কোর্সের ভাইভা হবে। পরে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল স্যারকে আমাদের সমস্যাটা বোঝাতে। তবে এই পূজোর ছুটিতে ভাগ্যটা আরো খারাপ। ২৪ তারিখ কমলাপুর গিয়ে ২ তারিখের ট্রেনের কোন টিকেট পেলাম না।

ব্ল্যাকাররা হাতে টিকেট নিয়ে ঘুরছে কিন্তু ৩০০/৩৫০ টাকা খরচ করে ব্ল্যাকে যাবার চাইতে বাসে যাওয়াটাই ভালো মনে করলাম। হাতে কিছু টাকা বেশী ছিল তাই সোহাগের এয়ার কনের টিকেটই করে ফেললাম। এর আগ পর্যন্ত আমার একচেটিয়া ধারণা ছিল যে, শুধু সরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোই বোধহংয় বাজে সার্ভিস এবং মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু আমার ধারণা ভূল ছিল। বাস ছাড়ার কথা রাত সোয়া বারোটায় পান্থপথ থেকে।

১২.২০ এ জানানো হর বড় বাস আসবেনা, কোস্টারে করে মালিবাগ যেতে হবে। আমার সাথে জিনিসপত্র কম ছিল। তাই বাচোয়া। কিন্তু পান্থপথেই এক ইন্ডিয়ান ফ্যামিলি দেখলাম কাউন্টারের লোকজনের সাথে ঝগড়ায় লেগে গেছে। মালিবাগে গিয়ে দেখলাম অবস্থা আরো খারাপ।

কলকাতার বাসও লেইট করেছে। অনেক বিদেশীই সোহাগের সার্ভিস নিচ্ছে। বেশীরভাগই ইন্ডিয়ান। ওদের একটা ফ্যামিলি বসেছে আমার ঠিক পাশে। কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে পুরো বাংলাদেশের ওপরেই তারা বিরক্ত।

১ টার দিকে কলকাতার বাসে তারা চলে গেল। আমার ১২.১৫'র বাসে উঠতে পারলাম সোয়া ১টার দিকে। কিন্তু গাড়ি তখনো ছাড়ছেনা, কারণ, কারো সিটের ওপর থেকে পানি ঝরছে, কারো সিট হেলে গিয়ে পেছনের যাত্রীর পায়ে পড়ছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশী খারাপ লাগলো এক ইরানের লোককে দেখে যে তার বউ বাচ্চাকে নিয়ে বাসে উঠেছে। বাচ্চাটার বয়স দুই তিন বছর হবে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তার সিটের এয়ার কুলার বাড়ানো কমানো যাচ্ছেনা, সেই সাথে আবার পানিও পড়ছে। বেচারা এটা নিয়ে ড্রাইভারের সাথে ভাঙা ভাঙা বাংলায় তর্ক করে যাচ্ছে। পরে ঐ সিটের এয়ারকুলারের সাথে গামছা বেধে দিয়ে ডিজিটাল সমস্যা এনালগ উপায়ে সলভ্ করা হলো। বাঙালীর সমস্যা দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু এই দেশে এসে কিছু বিদেশীকে সমস্যায় পড়তে দেখে বাংলাদেশী হিসেবে নিজেরই কেমন লজ্জা লাগছিলো।

ফরেইনারদেরকে যারা সার্ভিস দেয় তাদের তো অন্তত একটু সচেতন হওয়া দরকার। চিন্তা করতেই খারাপ লাগছে এই বিদেশীরাই হয়তো নিজ দেশে গিয়ে প্রিয়জনের সাথে গল্প শুরু করবে "গিয়েছিলাম এক মরার দেশ বাংলাদেশে......" বলে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।