আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ জার্নি বাই ট্রেন - ১



আমাদের দেশে মনে হয় ট্রেন ভ্রমন সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকে এর অব্যবস্থাপনা আর দূর্নিতীর জন্য। নিয়মিত ট্রেন ভ্রমনকারী হিসাবে আমি আমার কিছু অভিজ্ঞতা এখানে তুলে ধরতে চাইছি গল্পের আকারে। আজকে ১ম পর্ব লিখলাম। আজকের গল্পটি লেখা হয়েছিল আওয়ামী নেতা কিবরিয়া সাহেবের উপর বোমা হামলার কয়েকদিন পর। তাই কাহিনীটিতে তার কথাও এসেছে।

নানা রকম তর্ক কথা ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জগামী আন্তঃনগর ট্রেন এগারসিন্ধুর। ট্রেনটি তার নির্ধারিত সময়ে কতদিন যাত্রা শুরু করেছে এবং কতদিন নির্ধারিত সময়ে তার গন্তব্যে পৌছেছে তা কেবল রেলের কর্মকর্তারাই বলতে পারবেন। তাই আমরা যারা নিয়মিত এ ট্রেনে যাত্রা করি তারা সে ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই ট্রেনে উঠি। এমনই একদিন কোন এক কারনে গ্রামে যাওয়ার প্রয়োজনে ট্রেনে উঠে বসলাম। সঙ্গে অন্যান্য মালপত্রের সাথে দুটো ম্যাগাজিন।

কিন্তু এ মুহুর্তে এগুলো দেখতে ইচ্ছে করছে না। আমার সামনের আসনে দুজন যাত্রী বসেছেন, যাদের একজন নিজেকে একটি হাই স্কুলের বাংলার শিক্ষক বলে দাবি করেছেন। আরেকজন নিজেকে দাবি করেছেন কোন এক কলেজের বাংলার প্রভাষক বলে। তবে তাদের কেউ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নাম বলতে রাজি হননি। তাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হল।

ভাবলাম তাদের আলোচনায় শিক্ষনীয় কিছু বের হয়ে আসতে পারে। তাই কান দুটো খাড়া করে দিলাম। তবে আমি হতাশ হলাম কারন তাদের মধ্যে কোন আলোচনাই হচ্ছে না, হচ্ছে যুক্তিহীন তর্ক বিতর্ক। এর মধ্যে হঠাৎ করেই হাই স্কুলের শিক্ষক একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন প্রভাষক সাহেবকে, - ‘বঙ্কিমচন্দ্র সম্পর্কে আপনি কি জানেন বলুন। ’ - ‘বঙ্কিমচন্দ্র খুব চটপট ধরনের মানুষ ছিলেন, সারাক্ষন শুধু চটপট করতেন।

তিনি স্থির হয়ে কোথাও এক মিনিটের জন্য বসতে পারতেন না। তিনি একজন বড় মাপের কবি ছিলেন। ’ - ‘আরে রাখেন, আপনি তো ভাই কিছুই জানেন না। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কোন দিনই কবিতা লিখেননি, তিনি ছিলেন একজন নাট্যকার। আর তিনি যে চটপট ধরনের মানুষ ছিলেন তা আপনি কি করে জানলেন?’ প্রতিবাদ করে উঠেন হাই স্কুলের শিক্ষক।

- ‘আরে ভাই আপনি আবার কি জানেন? তিনি একজন বিখ্যাত কবি ছিলেন। আমি তার অনেক কবিতাই পড়েছি। আর তিনি যে চটপট ধরনের মানুষ ছিলেন তা উনার নামের শেষের শব্দ দেখলেই বুঝা যায়। চট+পট মিলে হয় চট্টোপাধ্যায়। তখনকার দিনে বাবা-মায়েরা তাদের চটপট স্বভাবের সন্তানদের নামের শেষে চট্টোপাধ্যায় লাগিয়ে দিত।

’ - ‘শুনেন, অশিক্ষিতের মতো কথা বলবেন না। তবুও তো ভাল আপনি বলেননি যে সে চট করে পাদ (মানুষ যে গ্যাস ত্যাগ করে তাই পাদ) দিত। কারন চট+পাদায় মিলে হয় চট্টোপাধ্যায়’। এ সময় আমার পাশে বসা হুজুর টাইপের এক ভদ্রলোক হতাশ হয়ে বলে উঠেন, ‘বঙ্কিমচন্দ্র আজ যদি এখানে থাকতো ... ...। ’ অবশ্য তার কথা ওরা শুনতে পায়নি কারন তারা তখন ব্যস্ত তাদের নিজেদের তর্ক নিয়ে।

- আপনি আমাকে অশিক্ষিত বলেন! তাহলে তো আপনি একটা মূর্খ। বলেন তো ভাই উনার কয়টা নাটক আপনি দেখেছেন? - দেখুন, গালাগালি করবেন না, আমি কিন্তু ... ... শিক্ষক সাহেব প্রভাষকের উপর খুব চটে উঠেন। কিন্তু তৃতীয় একজনের হস্তক্ষেপে তাদের মধ্যে ঝগড়াটা আর শুরু হয়নি। কিন্তু তাদের আলোচনাও বন্ধ হয়নি। - বঙ্কিমচন্দ্র চট্ট্রোপাধ্যায় এর লেখা একটি নাটক ক্লিনটনের সময় হোয়াইট হাউজে মঞ্চস্থ হয়েছে।

বাংলাদেশের সব পত্রিকায় তা এসেছে। - ক্লিনটন আর বুশ সম্পর্কে কিছু বলবেন না। ওরা কি কখনো সত্য কথা বলে নাকি যে পত্রিকায় সত্য খবর আসবে? জঙ্গলে জন্ম হয়েছে, তারা সব জঙ্গলী। - সব জঙ্গলী? - অবশ্যই! আপনি তো দেখি আমেরিকা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আমেরিকা পুরোটাই জঙ্গল।

আজকাল কিছু জঙ্গল পরিস্কার করে কয়েকটা ভাল শহর তৈরী করেছে। আর ওদের রাজনীতি মানে মানুষ মারার রাজনীতি। - রাজনীতির কথা আর বলবেন না ভাই। ওদের রাজনীতি আমাদের তুলনায় অনেক ভালো। দেখেন না, একের পর এক বোমা মারছে আর মানুষ মরছে।

কোন সভ্য দেশে কি এমন হয় নাকি? কিবরিয়া সাহেবের মতো লোককেও তারা মেরে ফেলল ... ... - রাজনীতি করলে এমন মরতে হয় আর মারতে হয়। যুগ যুগ ধরে তা চলে আসছে। এতে আমাদের কোন দোষ নেই, সরকারেরও কোন দোষ নেই। মরতে ভয় পেলে রাজনীতি ছেড়ে দিলেই হয়। - আমাদের কোন দোষ নেই বুঝলাম, সরকারের কি কোন দায়িত্ব নেই? - আরে ভাই, সরকারের লোকজন কি হবিগঞ্জে গিয়ে বোমা মেরে এসেছে নাকি? - বুঝলাম যে সরকারের কেউ হবিগঞ্জে গিয়ে বোমা মেরে আসেনি, কিন্তু বিরোধী দলের জনসভায় তারা কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়নি? বোমা হামলার পর হাসপাতালে ডাক্তার ছিল না।

কেন হাসপাতালে ডাক্তার ছিল না, এ ব্যাপারে তারা কি বলবে? কর্তব্যে অবহেলা নাকি অন্য কিছূ? এমন গুরুত্বপূর্ন সেবাখাতে কেউ যদি কর্তব্যে অবহেলা করে আর এজন্য কোন শাস্তি দেয়া না হয়, সেটি কি সরকারের ব্যর্থতা নয়? আর যদি অন্যকিছু হয় তবে আমরা সবাই বুঝতে পারি সেটি কি! এছাড়া এমন একজন নেতার জন্য হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করেনি কেন? এম্বুলেন্সে কেন পর্যাপ্ত জ্বালানী ছিল না? নাকি এটিও দায়িত্বে অবহেলা ... ... রাজনীতির আলাপ আলোচনা আমার ভাল লাগে না। চোখে ঘুম আসছিল। তাই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। তার আগে আমি আমার পাশে বসা হুজুর টাইপের লোকটির কথা অস্পষ্টভাবে শুনলাম, ‘বঙ্কিমচন্দ্র যেমন তেমন, রাজনীতি তো ভালই বুঝে। ’ সর্বশেষঃ হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।

দেখি বাজিতপুর স্টেশনে ট্রেন প্রবেশ করছে। সবাই নামার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমিও উঠে দাড়ালাম এবং ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। দুই তর্কবাগীশ বাজিতপুর নামবেন বলেই জানিয়েছিলেন। পিছন ফিরে দেখি তাদের তর্ক-বির্তক চলছেই।

এবারের বিষয়, আফ্রিকার জঙ্গলে পানি আছে কি নেই। আস্তে আস্তে ট্রেন চলতে শুরু করল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।