বাংলাদেশের খেলা দেখতেছিলাম মনে হয়, নাহলে মহিলা ফুটবল। দেরি হয়ে গেল। কোনমতে খাওয়া শেষ করে ব্যাগ কাধে নিয়ে রাস্তায়। জসীম উদ্দিন রোড থেকে কমলাপুর স্টেশন। বেশি দূরে না।
সিট খুজে পেতেই মন খারাপ হয়ে গেল। সিঙ্গেল কেবিন, মেঝে ভিজা। ট্রেন ছাড়ে না,দশ মিনিট, বিশ মিনিট, আধা ঘন্টা। জানালা দিয়ে অনেক ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। আগুন ধরে গেল নাকি কোন বস্তিতে? আবার এমনও হতে পারে কোথাও আবর্জনা পোড়ানো হচ্ছে।
ঘন কালো কুন্ডলী পাকানো ধোঁয়া।
সিঙ্গেল কেবিন। আরো দুইজনের সিট আছে, কিন্তু কেউ উঠে নাই। যন্ত্রণায় পড়লাম। উটকো লোক দরজা খুলে দেখে খালি আছে কিনা।
মেজাজ খারাপ হয়ে যাইতেছে। বাকি দুইজন মনে হয় বিমানবন্দর স্টেশন থেকে উঠবে। চিপস নিয়ে আসছে। তিনটা নিলাম। মেরিডিয়ান, রিং চিপস, আর একটা মনে হয় হ্যান্ডমেড।
ছোটবেলায় রিং চিপসের ভক্ত ছিলাম। পাঁচ আঙ্গুলে আংটির মত পরে পরে খাইতাম। পনের বছর পরে আবার আঙ্গুলে ঢুকায়ে মজা করে খাব। আপাতত প্যাকেটগুলা ব্যাগে ঢুকানো দরকার। তিনটা একসাথে নিলাম, কারন ব্যাটা আবার কখন চিপস নিয়া আসে কে জানে।
একা একা যাইতেছি যখন চাবাইতে চাবাইতে যাই।
ট্রেন ছাড়ল এক ঘন্টা লেটে। একজন পারমিশন নিয়ে রুমে এসে বসে গেল। পারমিশন চাওয়ার দরকার ছিল না। চাইলই যখন, আমিও চান্সে একটু ভাব নিয়ে নিলাম(ঃ)।
হুজুর মানুষ, এসেই মহা ব্যাস্ত হয়ে মোবাইল ফোন টিপাটিপি শুরু করলেন। আমার সাধের রিং চিপস কি শেয়ার করতে হবে নাকি ? আমি পারব না। যাই হোক, একটা বুদ্ধি বের করলাম। প্যাকেট খুলে সাধলাম, ভাবখানা এমন যা নেবার প্রথম বারেই নিয়া নেন, পরে আর নিতে পারবেন না। হুজুর তো নিতেই চায় না।
পরে জোরাজুরি করায় একটা নিল। যাক, আমারা ভদ্রতা করার দরকার ছিল, করছি। উমম... সেই আগের স্বাদ! নিমিষেই শেষ হয়ে গেল। আমি কি হুজুরকে বলছি নাকি একটা নিতে? সে একটা নিলে আমি কি করব?
এতক্ষন যদি ভনিতা করে থাকি, তাহলে ঘটনা এখান থেকে শুরু হল। ট্রেন বিমানবন্দর স্টেশন ছেড়ে গেছে, কিন্তূ নতুন যাত্রী কেউ উঠে নাই।
টিটির ব্যাবসাও মনে হয় খারাপ যাইতেছে। মাঝখানে আইসা হুজুরকে দুইবার হুমকি দিয়া গেছে, নেহায়ত হুজুর বলেই বের করে দেয় নাই। হুজুরের স্ট্যান্ডিং টিকেট। যাই হোক, বিমানবন্দর পার হয়ে যাবার পরে ঝামেলা এড়ানোর জন্য দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। হঠাৎ কেউ একজন দরজা ফাটায়ে ফেলার মত ধাক্কাধাক্কি শুরু করল।
ভয়ই পাইলাম। একটু ফাঁক করলাম। লোকটা সুবিধার মনে হল না। খুলতে বলল। জিগেস করলাম টিকেট আছে কিনা।
বলল আছে। দরজা খুলার সাথে সাথেই হুড়মুড় করে ঢুকে জানালা দিয়ে কি যেন দেখতে লাগল। বুঝলাম টাউট বাটপার। তারপর জানালার পাশে সিটে বসে গেল। জিগেস করলাম সিট নম্বর কত।
ব্যাটায় দুইজন দুই পাশে দেখে দেখে দুয়ে দুয়ে চার মিলায়ে নিল। বলল তার সিট নম্বর দুই। তারপর দরজা ভাল করে লাগায়ে উপরের সিটে শুয়ে পড়ল। সাথে কোন ব্যাগ ছিলনা, স্যান্ডেল নিচে রেখে গেছে, ওইটা দেখে বুঝার চেষ্টা করলাম ব্যাটা কি টাইপের সন্ত্রাসী।
হুজুর এইদিকে শুধু তাকায়ে তাকায়ে দেখতেছে।
ভয় সেও পাইছে, চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম। তার নিজেরই টিকেট নাই, আরেকজনকে কিভাবে চার্জ করব? তাও ভাগ্য ভাল, হুজুরকে আগে ঢুকতে দিছিলাম, নাইলে .........
কিছু একটা করা দরকার। দরজা খুলে দিয়ে আসলাম।
এইযে ভাই, দরজা লাগান ।
কেন ?
দুনিয়ার লোক ঢুকে পড়বে।
ঢুকতে পারবেনা, আমরা আটকাবো।
পারবেন না।
কেন পারবনা ? আমি, আপনি, হুজুর, আমাদের তো টিকেট আছে, কেউ ঢুকলে আমরা ভাগায়ে দিব।
লোকটা আর কিছু বলল না।
কিছুক্ষণ পর ২০-২২ বছর বয়সী একটা ছেলে এসে বসল।
হাতে একটা চটের ব্যাগ। ব্যাগ ভর্তি বড় বড় স্ক্রু ডাইভারের মত যন্ত্রপাতি। উপরের সিটের পান্ডা সাহেব নড়েচডে বসলেন।
হই মিয়া হই। আপনার ব্যাগের মধ্যে কি এগুলা ?
ছেলেটা উপরে তাকালো এবং ভয় পাইল।
চিনে নাকি ? মিনমিন করে কি বলল ঠিক বুঝা গেল না। কিন্তু সুড় সুড় করে বের হয়ে গেল।
সামনে আশুগঞ্জ। হুজুর নেমে যাবে। ব্যাটা মনে হয় আশুগঞ্জেওর পরেই ঝামেলা পাকাবে।
ব্যাগের ভিতরে পাসপোর্ট আছে। ওটা ছাড়া বাকি সব দিয়ে দিব চুপচাপ। ঝামেলা করে লাভ নেই।
ছোটবেলায় আলিফ লায়লায় দেখতাম এমন এক জায়গায় শেষ করত, যে পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করতাম কখন পরের পর্ব আসবে। পরের পর্ব আসছে শিগগিরই।
অনেকক্ষণ লিখলাম। একটু ফেসবুক দেখে আসি। বাকি অংশ আজকেই লিখে ফেলব। তবে যারা পুরোটা পড়তে আগ্রহী হন নাই, তাদেরকে বলছি, বেঁচে আছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।