আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ জার্নি বাই ট্রেন – ২



আমাদের দেশে মনে হয় ট্রেন ভ্রমন সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকে এর অব্যবস্থাপনা আর দূর্নিতীর জন্য। নিয়মিত ট্রেন ভ্রমনকারী হিসাবে আমি আমার কিছু অভিজ্ঞতা এখানে তুলে ধরতে চাইছি গল্পের আকারে। ২য় পর্বটি লিখলাম অনেক দিন পর। (আজকের গল্পটি লেখা হয়েছিল ২/৩ বছর আগে। ) ১ম লেখাটির লিংকঃ Click This Link এগারসিন্ধুর ট্রেনে অনেকদিনের একদিন বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি ঐতিহাসিক ট্রেন হচ্ছে এগারসিন্ধুর এক্সপ্রেস।

ঐতিহাসিক স্থানের নামে যেহেতু ট্রেনের নাম সেহেতু ট্রেনটিও ঐতিহাসিক। আর ট্রেনটিকে নিয়ে রেলওয়ের কর্মকান্ডগুলোও কিন্তু ঐতিহাসিক, মানে ইতিহাসে লিখে রাখার মতো। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ প্রতিদিন দুইবার চলাচল করে এগারসিন্ধুর প্রভাতি এবং এগারসিন্ধুর গোধুলী নাম নিয়ে। আমি নিয়মিত একজন যাত্রী এই ট্রেনের। এই ট্রেনে ভ্রমনকারী প্রতিটি যাত্রীর প্রতিটি ভ্রমনই ইতিহাসে লিখে রাখার মতো, কিন্তু ইতিহাসের বইয়ে এত পাতা কোথায় যে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীর ইতিহাস লিখে রাখবে! এমনিতেই আজকাল নামে বেনামে এত ইতিহাস তৈরী হচ্ছে যে, এগুলোর নাম ইতিহাসের তালিকায় তুলতে সময় পাচ্ছেন না ইতিহাসজীবিগণ (বুদ্ধি বিক্রি করে আজকাল অনেকে বুদ্ধিজীবি, সুতরাং ইতিহাস বিক্রি করে ইতিহাসজীবি!)।

যাক্ সে কথা। আমরা ট্রেনের কথা বলছিলাম। তো এগারসিন্ধুর ট্রেনে আমার প্রতিদিনের যাত্রাও ইতিহাসে লিখে রাখার মতো। তবে আমার মতো ক্ষুদ্র মানুয়ের কথা তো আর ইতিহাসে লিখতে চাইবেন না ইতিহাসজীবিগন, তাই আমি আপনাদের বলেই না হয় দুধের সাধ ঘোলে মেটালাম। আমি সাধারণত এগারসিন্ধুর গোধুলি ট্রেনেই ভ্রমন করে থাকি।

প্রতিদিন সন্ধা ৬টা ২০মিনিটে ঢাকা থেকে এই ট্রেন ছাড়ার কথা। তবে গত কয়েক বছরে এই ট্রেন কতবার নির্ধারিত সময়ে ছেড়েছে তা রেল কতৃর্পক্ষ নিজেও বলতে পারবেন কিনা আমার সন্দেহ। আমি যেদিনের কথা বলছি সেদিন কিন্তু ট্রেন ঠিক সময়েই ছেড়েছিল। মনে মনে ভেবেছিলাম আজ আমি সহ এই ট্রেনের সকল যাত্রীই সৌভাগ্যবান এবং সৌভাগ্যবতী। তবে আমরা যে কতটুকু সৌভাগ্যবান এবং সৌভাগ্যবতী তা বুঝতে পেরেছিলাম তেজগাঁও স্টেশনে এসে যখন ট্রেন থামল।

যদিও এ স্টেশনে ট্রেনটি থামার কথা নয় তবুও কেউ একটুও অবাক হয়নি, কারন তারা জানে এমন করে আরো অনেক স্টেশনেই এ ট্রেনটি থামবে কোন ধরনের ঘোষনা ছাড়াই। তবে আজকের থামাটি যে স্বাভাবিক নয় আমরা তা বুঝতে পেরেছি আরো অনেক পরে। ট্রেনের পাইলট সাহেব পাথরের ঢিল খেয়েছেন। ফলে ট্রেন থেমে আছে। কখন ছাড়বে তা কেউ জানে না।

এর আগেও এ ট্রেনের কোন না কোন যাত্রী রেল লাইনের পাশের বস্তি বা আশেপাশের বাচ্ছাদের ছুড়ে দেয়া পাথরের ঢিল প্রায় প্রতিদিনই খেয়েছে। তবে তখন কিন্তু ট্রেন থেমে থাকেনি বা কেউ খোজও নেয়নি। তখন ট্রেন চলেছে তার আপন গতিতে। এতে আমরা অবশ্য কিছু মনে করি না কারন এক সরকারকে কতকিছু সামলাতে হয়! দলের লোকদের দেখে রাখতে হয়, তাদের সামলাতে হয়, বিরোধী দলকে পিটাতে হয়, মাঝে মাঝে চাপাবাজি করতে হয়, রেল দেখার সময় কোথায় তাদের! আর রেলের লোকজন যারা আছে তারা তো ঘুষ, দুর্নিতী আর তেল মারারই সময় পান না। তারা আবার এসব দেখবে কখন।

আর কাদের জন্যইবা দেখবে। বাংলাদেশে মানুষই আছেন কজন! যেমন আজ ট্রেন থেমে আছে কারন একজন মানুষ পাথরের ঢিল খেয়েছে যিনি কতগুলো পশুকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আর যেহেতু একজন মানুষ ঢিল খেয়েছে সেহেতু ট্রেন কতক্ষন বন্ধ থাকতেই পারে এবং প্রতিবাদ হতেই পারে। ট্রেনের যাত্রীরা যদি মানূষ হত তাহলে তো আরো আগেই এর কোন একটা ব্যবস্থা হতো। যাই হোক, এক সময় ট্রেন ছাড়ল।

এরপর ট্রেন আরো অনেক জায়গায় থেমে থেমে অন্যান্য ট্রেনকে যাওয়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছে। কতবার আমাদের ট্রেন থেমেছে আমরা তার হিসাবও রাখিনি। যদিও আমাদের ট্রেনটি ইন্টারসিটি, তবুও লোকাল বা তার চেয়েও কম গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলো তাকে থামিয়ে বীরদর্পে কেন চলে যায় তা আমরা আজও বুঝতে পারিনি। অবশ্য আমরা আজকাল এসব নিয়ে চিন্তা ভাবনাও করিনা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।