লোকটাকে আমি ঠিকমত চিনিই না বলতে গেলে। বয়স ত্রিশ পঁয়ত্রিশ হবে। একদিন আমার অফিসে এসে দীর্ঘক্ষণ বসে ছিল। হঠাৎ আমার সাথে তার চোখাচোখি হয়ে গেলে ভদ্রতা করে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তার কি সমস্যা। তখনই জানতে পেরেছিলাম যে তার একটা ফাইল দীর্ঘদিন ধরে আটকে রয়েছে, কিছুতেই পাস হচ্ছে না।
অফিসে আমার মোটামুটি একটা প্রভাব রয়েছে, তার ওপর লোকটার অসহায় চোখমুখ দেখে নিজ উদ্যোগে ফাইলটা পাস করানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। ব্যস। এই-ই তার সাথে পরিচয়ের সূত্র। তবে আশা করিনি যে তার সাথে আমার আর কোনদিন দেখা হবে। কারণ আমি থাকি ঢাকায় আর সে এসেছিল রাজবাড়ির কোন একটা গ্রাম থেকে।
তাছাড়া এম্নিতেও লোকটাকে আমার খুব একটা সুবিধার মনে হয় নি। গ্রামের সুযোগসন্ধানী, সুবিধাবাদী শ্রেণির মধ্যে যে তরল বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তার ভিতরেও সেটা লক্ষ্য করেছিলাম।
কিন্তু আমার ধারণা সেদিন ভুল হয়ে গেল। ঝিকাতলা দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ পেছন থেকে নিজের নামে চিৎকার শুনে পেছন ফিরে দেখি সেই লোকটা।
আমাকে ডাকছে। প্রথমে তো তাকে চিনতেই পারছিলাম না। তখন লোকটা আহত ভঙ্গিতে তার সাথে আমার পরিচয়ের ইতিহাস মনে করিয়ে দিল। আমিও তারপর তাকে চিনতে পেরে দু'একটা ভদ্রতাসূচক কথা বলতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সে সেইসবের ধার ধারল না।
উত্তেজিত স্বরে বলল, 'মিয়া ভাই, জবর একটা খবর আছে!'
আমি তো যারপরনাই অবাক। যে লোকটার সাথে মাত্র একদিনের আলাপ, তার কাছ থেকে আমার কি এমন খবর পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে? আমি জন্মগতভাবে কম কৌতূহলের মানুষ। তবু মুখে যথাসম্ভব আগ্রহ ফুটিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'কি খবর ভাই? সবকিছু ঠিক আছে তো? আপনার যে ফাইলটা পাস করিয়ে দিয়েছিলাম, সে ব্যাপারে কিছু না তো?'
তখন লোকটা একগাল হেসে দিয়ে বলল, 'না, মিয়া ভাই। অন্য বিষয়। '
'কি বিষয় সেটাই তো জানতে চাচ্ছি।
'
'সেইদিন আপনার অফিসে যখন আপনি আমার সাথে কথা বলছিলেন, তখনই বুঝেছিলাম যে আপনার স্বভাবটা বেয়াড়া ধরণের। সব বিষয়ে যেন আপনার কেমন একটা অনাগ্রহ, অনীহা কাজ করে। তাই ভেবে রেখেছিলাম আপনার সাথে আর কোনদিন যদি দেখা হয়, তবে আপনাকে পুরো চমকে দেব। '
আমি বুঝতে পারছিলাম না কি বলব। যে লোকটা অন্যের মুখের উপর বলে বসতে পারে যে তার স্বভাব বেয়াড়া ধরণের, সে লোকের কাছ থেকে দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয়।
তবে ব্যাপারটার মধ্যে একটা আলাদা মজা এবং রসও আছে। সেটাকেই আমার মন বেশি প্রাধান্য দিল। তাই আমি হেসে ফেলে বললাম, 'আচ্ছা! তা কিভাবে চমকে দিবেন, দেন তো। '
লোকটা বলল, 'সেইটা তো মিয়া ভাই এই রাস্তার ওপর দাঁড়ায়ে তা দেখানো যাবে না। আপনাকে আমাদের গ্রামে নিয়ে যাব।
ওইখানে একটা লোকের দেখা পাবেন, যে আপনার কপালে হাত রেখেই অতীত, ভবিষ্যৎ সব কিছু বলে দেবে। '
আমি অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে নির্বিকার ভঙ্গিতে বললাম, 'তা হলে আর বর্তমানটা বাদ দিবে কেন? ওইটাও বলতে পারলে ষোলকলা পূর্ণ হত না?'
সে তখন তার মুখটা স্বভাবসুলভ আহত হবার ভঙ্গি করে বলল, 'কি ভাই, বিশ্বাস করলেন না আমার কথা?
'জি না। এসব হাস্যকর এবং ছেলেমানুষি কথায় আমি কান দেই না। '
'আমি কিন্তু আপনাকে প্রমাণ দেখায় দিতে পারি। দরকার হলে এখনই চলেন, রওনা দেই আমরা।
আজকে আমি আপনার অবিশ্বাস ভাঙ্গিয়ে দিতে চাই। '
'মহা মুশকিলে পড়লাম তো! আপনি এখন বিদায় হন। আমি আমার অবিশ্বাস নিয়েই থাকতে চাই। ফালতু একটা লোককে দেখতে এখন অতদুর যাব, অত পাগল এখনো আমি হয়ে যাই নি। '
লোকটা আমার অভদ্র ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছিল কিনা জানি না কিন্তু মুখ কাল করে সামনে থেকে চলে গেল।
আমারও মনে হচ্ছিল যে লোকটার সাথে অতটা 'রুড' না হলেই চলত। কিন্তু কি আর করা? সারাদিন অফিসে কাজ করে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরার পথে কার ভাল লাগে এসব অর্থহীন ক্যাচাল শুনতে?
#####
লোকটা বোধ হয় খুবই নির্লজ্জ টাইপ। আবার এমনও হতে পারে যে তার 'ভূত-ভবিষ্যৎ বলা' ব্যাপারটায় অত্যধিক আগ্রহ। এমনটা আমার মনে হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ সেদিনের ঘটনার সপ্তাখানেকের মধ্যে তার সাথে আমার আবার দেখা।
এবার সাক্ষাতস্থল নিউমার্কেট। সাথে ছিল আমার স্ত্রী, টুকটাক কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম দুজনে। হঠাৎ করে যেন আসমান থেকে নেমে এসে লোকটা পড়ল আমাদের সামনে। আমাদের চমকে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, 'কি মিয়া ভাই ভাল আছেন?'
তার ভাবসাব দেখে মনে হতে লাগল যে সে সেদিনকার আমার আচরণের কথা ভুলে গেছে। তবু মনের মধ্যে কেমন খচখচ করছিল।
তাই বিব্রতমুখে বললাম, 'এই তো আর কি! আপনার কি খবর?'
'আর বলবেন না ভাই। সেই পীরবাবাকে নিয়ে তো বেকায়দা ঝামেলায় আছি। '
'কোন পীরবাবা?'
'কেন, আপনাকে যার কথা বলেছিলাম। সে চায় নতুন নতুন মানুষের আমদানি। নতুন মানুষের অতীত ভবিষ্যৎ বলতে চাচ্ছে সে।
'
'তা বেশ তো! তা আপনার বেকায়দায় পড়ার কি আছে? আপনি কি লোকটার দায়িত্বে আছেন নাকি?'
'ঠিক ধরেছেন ভাই! গ্রামের লোকের এত সময় কই? সবাই নিজেদের ধান্দায় ব্যস্ত। তাই আমিই এই ব্যাপারটাকে 'ট্যাকল' দিচ্ছি। '
'কিন্তু নতুন মানুষের এত অভাব কেন? আপনার মুখে যেরকম বিবরণ শুনলাম, তাতে তো সেই লোকের অনেক ভক্ত হয়ে যাওয়ার কথা। এরকম ঘটনায় তো চারিদিকে সাড়া পড়ে যাওয়ার কথা। দূরদূরান্ত থেকে মানুষের তার কাছে ছুটে আসার কথা।
'
'আর বলবেন না ভাই! জগত কি আর সেই আগের জগত আছে! লোকের মনে এখন খালি অবিশ্বাসের বীজ। কেউ ব্যাপারটাকে আমলে নিচ্ছে না। বলে কিনা সব নাকি ভুয়া! সেজন্যই তো গ্রাম ছেড়ে বারবার ঢাকা শহরে এসে লোককে তার কাছে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে হচ্ছে!'
আমি আর কিছু বললাম না। আমি যা বলতে চাই, সে কথা তো লোকটা অন্যের মুখে এমনকি আমার মুখেও আগে শুনেছে এবং শুনছে। নতুন করে তার পুনরাবৃত্তি করে কি লাভ? তার উপর লোকটার যেরকম আগ্রহ দেখলাম, কোন কিছু সেটিকে দমিয়ে রাখতে পারবে বলে মনে হয় না।
যাইহোক, আমার স্ত্রী এতক্ষণ একবার আমার দিকে আরেকবার লোকটির দিকে হাঁ হয়ে তাকিয়ে সব কথা শুনছিল। কিন্তু কিছুই বুঝছিল না যে আমরা কি বিষয় নিয়ে কথা বলছি। আসলে আমি তাকে এই পাগলাটে স্বভাবের লোকটার কথা কখনো বলিনি। এবার সে আমায় জিজ্ঞেস করল, 'অ্যাই তোমরা কার কথা বলছ?'
লোকটা তখন 'ভাবি আপনি জানেন না?' বলে উৎসাহের সাথে পুরো বিষয়টা তাকে বলতে লাগল। আমার স্ত্রীর মধ্যেও পাগলামি ভাব প্রবল।
যদিও সে এসব অতিপ্রাকৃত বিষয়ে বিশ্বাস করে না, তবু ঘটনাটা চাক্ষুষ দেখতে আগ্রহী হয়ে উঠল। লোকটাকে কথা দিল যে আমি না গেলেও সে অবশ্যই যাবে। অনেকে ভাবতে পারেন এটা স্রেফ পাগলামি কিন্তু সত্যি সত্যিই আমার স্ত্রী লোকটার সাথে সেই গ্রামে গিয়ে ঘুরে এলো।
ফিরবার পরও তার পাগলামি যায় না। আমি বারকয়েক তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে সে কেমন কি দেখল, পীরবাবা লোকটার আসলেই কোন ক্ষমতা আছে কিনা ইত্যাদি।
কিন্তু সে কিছুতেই কিছু বলল না আমাকে। শুধু বলতে লাগল আমার যদি জানতে ইচ্ছা হয় তবে যেন নিজে গিয়ে দেখে আসি। তবে আমার তো তখন কোনমতেই যাওয়া সম্ভব না, অফিসে বড় ঝামেলা।
তবু এত কিছুর পরও, প্রত্যক্ষভাবে সেই পীরবাবাকে দেখতে না পেলেও আমার জীবনের সাথে সেই পীরবাবা বড় করে জড়িয়ে গেল। ঐ গ্রাম থেকে ফিরবার পর থেকেই আমার স্ত্রী কেমন যেন 'মহিলা পীর' ধরণের হয়ে গেল।
যে মেয়ে সবসময় বান্ধবী, পার্টি এসব নিয়ে পড়ে থাকত, সে এখন কেমন যেন ধার্মিক হয়ে গেল। নামাজ-রোজা শুরু করল এবং তাই নিয়েই রাতদিন পড়ে থাকতে লাগল। শুধু অতিমাত্রায় ধার্মিক হলে ব্যাপারটা ঠিকই ছিল, আমিও তো পাছ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। কিন্তু দেখা গেল, ক্রমেই তার মধ্যে জিন ভুতের প্রতি চরম বিশ্বাস জন্মাল। যেকন ঘটনাকে গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাব বলেও উল্লেখ করতে থাকল।
আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না তার এরকম আকস্মিক পরিবর্তন কি করে সম্ভব হল। এমন নয় যে আমার মনে কখনো আসে নি যে গ্রামের ঐ পীরবাবার সান্নিধ্যে এসে তার এমনটা হয়েছে। কিন্তু কখনো সেই মনে হওয়াকে গুরুত্ব দেই নি। কারণ শহুরে এবং শিক্ষিত হওয়ায় আমার এইটুক বিশ্বাস আছে যে কারো ছোঁয়ায়, অভিশাপে বা আশীর্বাদে- যেভাবেই হোক না কেন- কেউ এমন হয়ে যেতে পারে না।
ওদিকে আমার স্ত্রীকে গ্রামে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই সেই লোকটা যাকে নিয়ে গল্পের শুরু, তার সাথে আমাদের একটা পারিবারিক বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।
বিশেষ করে আমার পীর বউয়ের সে খুবই ভক্ত হয়ে উঠল। আমার তো মাঝে মধ্যে মনে হয় যে লোকটা বোধ হয় এমনই নির্বোধ। যাকে দেখে তারই ভক্ত বনে যায়!
সে যাইহোক, লোকটা মাঝেসাঝেই আমাদের বাড়িতে আসতে লাগল। তাকে যতবারই জিজ্ঞেস করলাম যে তোমার ভাবির এমন পরিবর্তন হল কিভাবে, সে হাসতে হাসতে বলল, 'বুঝলেন মিয়া ভাই, সবই আমাদের ঐ পীরবাবার ছোঁয়ায়!'
সব শুনে আমার মাথায় রাগ চড়ে যেতে লাগল। এম্নিতেই বাড়ি পীর বউয়ের সাথে বাস করছি, এখন তাকে নিয়ে যদি এত রহস্য দানা বাঁধে তবে কি আর মাথা ঠিক রাখা যায়? শেষপর্যন্ত মনস্থির করে ফেললাম যে; যাই, একবার সেই পীরবাবাকে দেখেই আসি।
দেখে আসি তার কি এমন মহিমা।
আমি যাওয়ার দিনক্ষণও ঠিক করে ফেললাম। যেদিন যাওয়ার দিন, তার আগের দিন রাতে আমার পীর বউ হঠাৎই বলল, 'তুমি যাচ্ছ, তা তো ঠিকই আছে। কিন্তু আমার মনে হয় না তুমি তাঁর দেখা পাবে। অযথা তোমার মূল্যবান সময় নষ্ট করা হবে।
'
আমি হেসে বললাম, 'বাহ! তুমিও তো দেখছি পীরবাবার মতন ভবিষ্যৎবক্তা হয়ে গেছো। তা কি কারণে তোমার এমন মনে হচ্ছে শুনি!'
এবার যা শুনলাম তাতে আমার তো হার্ট ফেল করার মত অবস্থা! সে বলে কিনা, 'একটু আগে আমি চোখ বন্ধ করতেই স্পষ্ট দেখতে পেলাম যে পীরবাবা আজ সন্ধ্যায় মারা গেছেন!'
আমি বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, 'আচ্ছা যাও। গ্রামে যাচ্ছি তো। ওখান থেকে ভণ্ড পীরবাবাকে এনে পুলিসে ধরিয়ে দেব। আর তোমাকেও তো দেখছি পাগলের ডাক্তারের কাছে নিতে হবে!'
#####
পরদিন সকালেই রওনা দিলাম।
বিকেলের মধ্যে সেই গ্রামে পৌঁছেও গেলাম। গিয়ে দেখি একজায়গায় প্রচণ্ড ভিড়। এক লোককে জিজ্ঞেস করলাম, 'কি ব্যাপার ভাই, কি হয়েছে?'
সে বলল, 'আর বলবেন না। আমাদের এই গ্রামে এক পীরবাবা ছিল যে অন্যের কপালে হাত দিয়েই তার অতীত ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারত- সে গতকাল সন্ধ্যায় মারা গেছে। তার জানাজায় এসেছিলাম আমরা।
দেখছেন না মাথায় টুপি!'
আমি তার কথা শুনে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কি ভয়ানক কথা, আমার স্ত্রী যা বলেছিল সবই হুবহু মিলে গেল!
গ্রামে পীরবাবাকে যে 'ট্যাকল' করত, সেই লোকের সাথেও দেখা হল। সে বলল, 'কি মিয়া ভাই, চমকায় দিতে পারলাম তো?'
আমি তাকে গতরাতের সব খুলে বলে তার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলল, 'সবই পীরবাবার মহিমা! সেই তো মারা যাবার আগে ভাবিকে (আমার স্ত্রীকে) তার সব ক্ষমতা দিয়ে গেছেন। এখন থেকে তাই ভাবির মধ্যে বাবার সব গুণ দেখতে পারবেন!'
লোকটার কথার সত্যতা যাচাইয়ের মত মানসিক অবস্থা তখন আমার নেই। সে যা বলছে, তা যে যৌক্তিক নয়, এ বোধও আমার হল না।
যেসব ঘটনা গত কিছুদিন প্রত্যক্ষ করলাম, তারপরে এসব পার্থিব যুক্তিবোধ আমার থাকার কথাও নয়। অনেকক্ষণ ধরে আমি পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার যেন পা নাড়াবার শক্তি নেই। আসলেই এই গ্রামে আমার জন্য বড় চমক অপেক্ষা করেছিল! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।