আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অতিপ্রাকৃত অনুভূতি/ ২ (ভৌতিক অভিজ্ঞতা)

ভাল লাগে ফুল, কিছু কিছু ভুল

নানান ধরনের ভৌতিক গল্প পড়ার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি বেশীরভাগ ভৌতিক গল্পই আসলে আজগুবী ধরনের। লেখকের প্রসাদগুণে অনেকসময় সেগুলো এক ধরণের রিফ্রেশমেন্ট হিসেবে কাজ করে বটে, কিন্তু ভূতের গল্পের সত্যিকারের মজাটা অধরাই থেকে যায়। তাছাড়া এ লাইনে এত বেশী কাজ হয়ে গেছে যে একদম নতুন কিছু লেখা কঠিনও বটে। সচরাচর আড্ডায় যে সব ভূতের গল্প শুনি তার অধিকাংশই আপন মামাতো ভাইয়ের আপন খালু শ্বশুরের আপন বোন জামাইয়ের গল্প হয়ে থাকে। আজকে যে গল্পটা শোনাবো সেটাও আড্ডায় শোনা এবং ভূতের গল্প বলা যায় কিনা কিংবা সত্যিকারের ভূতের গল্প বাস্তবে ঘটে কিনা আমি জানি না।

তবে গল্প কথক এটাকে নিজের অভিজ্ঞতা বলে দাবী করেছেন। এ গল্পটা আমার এক বন্ধুর স্ত্রীর গল্প। বন্ধুটি অত্যন্ত হ্যান্ডসাম-একেবারে মেয়েদের মত টোবা টোবা গাল- দুধে আলতা গায়ের রং। চাকরীসূত্রে একটা ছোট্ট জেলাশহরে থাকি- সেখানেই পরিচয়। সদা হাসিমুখ প্রাণবন্ত ধরনের ছেলে, একটা কলেজের লেকচারার।

অত্যন্ত ভদ্র, মার্জিত। সে যে বিয়ে করে ফেলেছে এই বিষয়টাই প্রথমে জানতাম না। ঘটনাক্রমে একদিন ওদের বাসায় (সে শ্বশুর বাড়িতেই থাকত) গিয়ে ওর স্ত্রীর সংগে পরিচয়। সত্যি বলতে কি প্রথম দেখায় মনে করেছিলাম মাতৃস্থানীয়া কেউ। কিন্তু যাদের সংগে গেছি তারা অবলীলায় ভাবি ভাবি করে ডাকছিল।

তিনিও বেশ স্বচ্ছন্দে ওদের সংগে তাল মেলাচ্ছেন। শুধু যে আমার বন্ধুটি অপেক্ষা পর্যাপ্ত বয়স্কা তাই নয়- কালো ভদ্রমহিলার গ্লামারের শেষ সলতেটুকুও নিভু নিভু। চাপা টাপাও ভেঙে একসা। তবে মুখের গড়নটা বেশ ভালো। ভদ্রতার খাতিরেই মুখের অবাক ভাবটুকু লুকিয়ে সবার সংগে প্রাণবন্ত আড্ডায় সামিল হয়ে গেলাম।

পৃথিবীতে কত যে অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। যাই হোক ও বাসায় আড্ডার ব্যাপারটা এরপর প্রায় নিয়মিত হয়ে গেল আমার বন্ধু শিহাবের কল্যাণে। সে তখন ভাবির এক ভাইঝির সংগে মন বিনিময়ের চেষ্টায় রত। ও পক্ষ থেকেও বেশ প্রশ্রয়ের আভাষ পাওয়া গেল। ভাবি বুদ্ধিমতি- আমি যে জসিমের সংগে তার ব্যাপারটা মেনে নিতে ইতস্তত করছিলাম সেটা ঠিকই বুঝে ফেলেছিলেন।

তাই একদিন নিয়মিত আড্ডার এক ফাঁকে হঠাৎ করেই তার পূর্বতন ইতিহাস শুরু করলেন। ডিসক্লেইমার জাতীয় কিছু ভেবে প্রথম দিকে মনোযোগ দিচ্ছিলাম না। কারণ তিনি আসলে বলছিলেন তার চেহারা ভেঙে যাবার ইতিহাস। একটু এগোতেই বুঝলাম এটা একটা প্রায় ভূতের গল্প। গল্পটা ছোট, গল্প না বলে ঘটনা বলাই উচিত।

একদিন অনেক রাতে ভাবি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘুম থেকে উঠলেন। যখনকার কথা তখন এ শহরটি অনেকাংশে গ্রামের মত ছিল। তাদের বাড়িটি টিনের ঘর- বাথরুম বাইরে। তিনি উঠে দরজা খুলে বাসার পিছন দিকের ডোবার পাশে বসলেন। ডোবার পরপরই বিশাল একটা মাঠ ছিল।

(আমরা যখন দেখেছি তখন সেই মাঠ জুড়ে নতুন নতুন ঘরবাড়ি উঠে গেছে। ) সেই মাঠের অন্য মাথায় চাঁদের আলোয় এক বুড়ি শাক তুলছেন। এত রাতে বুড়ি শাক তুলতে উঠল কেন সে রহস্য তো আছেই। তাছাড়া বুড়ির আকার আকৃতি দেখে তিনি দূর থেকেই চিনে ফেললেন- সে হল মাঠের ঐ মাথারই এক ভদ্রলোকের মা। সমস্যা হল ভদ্রমহিলা মাত্র কিছুদিন আগেই দেহ রেখেছেন।

হয়ত চোখের ভুল, অন্য কাউকে দেখে গুলিয়েছেন ভেবে ভাবি ঘরে শুতে এলেন। পরদিন ঠিক একই সময় তার আবারো ঘুম ভাঙল। আবারো দরজা খুলে বাইরে গেলেন। সেই একই ডোবার পাশে বসলেন। আজও বুড়িকে দেখলেন।

তবে আগের মত দূরে নয়- এবার মাঠের মাঝামাঝি এসে একমনে শাক তুলছেন। যথারীতি ভাবি ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়লেন। পরদিন আবারো ঠিক একই সময়ে ঘুম ভাঙলো। দরজা খুলে বাইরে এলেন। ডোবার পাশে বসলেন।

মাঠের দিকে চোখ চলে গেল, নিজের অজান্তেই বুড়িকে খুঁজছেন। নেই কোত্থাও। কাজ সেরে উঠে দাঁড়াবেন এমন সময় চোখে পড়ল। সেই একই ভংগীতে আপনমনে শাক তুলছেন বুড়ি। তবে এবার একেবারে ডোবার ঐ পারেই।

চিৎকার করেই বাসায় ঢুকতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন ভাবি। বাসার লোকজন টের পেয়ে ধরাধরি করে তুলে নিয়ে আসল। তারপর থেকেই টানা জ্বরে মাস তিনেক শয্যাশায়ী। গল্পটা শোনার পরে আমরা তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন বলে সন্দেহ করায় ভাবি তার ভাইকে স্বাক্ষী মেনে বসলেন। আমরা যুক্তিবাদী আধুনিক মানুষ।

এরকম একটা গল্প হজম করা মুশকিল হয়ে গেলেও অনেক চিন্তা-ভাবনা করেও কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলাম না। হতে পারে কোন বুড়ি সত্যি সত্যিই রাতের বেলা শাক তুলতে বের হন। (একটু কষ্টকল্পনাই হয়ে যায় বই কি?) হতে পারে ভাবি মিথ্যে বলেছেন। কিন্তু অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন সে স্বাক্ষী তো প্রস্তুত। পরে শিহাব একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করালো।

আমরা উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও- সেটাই ছিল আমাদের সবার দেয়া ব্যাখ্যাগুলোর মধ্যে সবচাইতে গ্রহণযোগ্য। তবে সেটা বেশ জটিল ব্যাখ্যা, এবং সেজন্য অনেকখানি ঘুরিয়ে চিন্তা করা দরকার। তাই সেটা না হয় পরেই বলি- আগে শুনি পাঠক কি ভাবছেন?

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.