মানুষে মানুষে সমানাধিকারে বিশ্বাস করি
লন্ডন থেকে প্রকাশিত বিশ্বখ্যাত দ্য ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিন নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশকে নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি। নতুন এ প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করে ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ঠিক উল্টো পথে চলছে’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজনীতি রয়ে গেছে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং বিষাক্ত আকারে।
‘দ্য পয়জনাস পলিটিক্স অব বাংলাদেশ : রিভারসন টু টাইপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি কাল শনিবার ইকোনমিস্টের মূল পত্রিকায় ছাপা হবে। তবে বৃহস্পতিবার রাতেই নিবন্ধটি পত্রিকার ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির কড়া সমালোচনা করা হলেও প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতি বেশ সবল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অর্থনীতি ক্রমেই সবল হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল বাংলাদেশের জন্য এক যুগসন্ধিক্ষণ। নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে। ওই বিজয়ের পেছনে ছিল জাতির এক বুক আশা।
প্রত্যাশা ছিল শেখ হাসিনা তার দলের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করবেন, জাতীয় ঐক্য গড়বেন, আওয়ামী লীগ ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল বিএনপির মধ্যকার ‘উইনার টেকস অল’ (বিজয়ীরাই সব পাবে) চক্রাকার রাজনীতির অবসান ঘটাবেন। ”
পত্রিকাটি লিখেছে, “তবে আশঙ্কাও ছিল যে, তিনি ওই বিপুল ম্যান্ডেটকে দলীয় সুবিধার কাজে লাগাবেন। ”
ইকোনমিস্ট লিখেছে, “নির্বাচনের আড়াই বছরের শেষে আশাবাদ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চুরমার হলো। মোটামুটি প্রতিফলন ঘটল আশঙ্কারই। এ সপ্তাহে শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরো দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
তার নির্বাসিত ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জারি করা হয়েছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। ”
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, “২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দিয়েছেন একটি দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের। শেখ হাসিনাও চাঁদাবাজি ও হত্যার ষড়যন্ত্রসহ ১৩টি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছিলেন। ”
প্রতিবেদনে বলা হয়, “কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা প্রত্যাহার আর খালেদা জিয়াদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো সচল রাখা হয়েছে। ” ইকোনমিস্টের ভাষায়, “এটাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাভাবিক ঘটনা।
দ্বিদলীয় ব্যবস্থায় পারিবারিক কলহ-বিবাদই হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল কথা। ”
ইকোনমিস্ট প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, “শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালে নিহত বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীর শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। মিসেস জিয়া ১৯৮১ সালে নিহত আরেক রাষ্ট্রপতির বিধবা স্ত্রী। প্রধান দুটি দল তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের সীমাহীন পারস্পরিক কলহকে মেনে নিয়েছে। ”
বিএনপি সংসদ বর্জন করে রাজপথকে বেছে নিয়েছে।
আর আওয়ামী লীগের মহানুভবতার সব প্রতিশ্রুতি শাসনকে দৃঢ় করার নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে ধূসর হয়ে পড়েছে।
ইকোনমিস্ট’র বিশ্লেষণে “বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারির ঘটনা সংবিধান সংশোধন। গত বছর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজপাকসে যেমনটা করেছেন। সংসদীয় গণতন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনাও তেমনটাই করেছেন। ”
পত্রিকাটি লিখেছে, “অন্যসব পরিবর্তনের মধ্যে এ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে।
যে সরকার অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচনের তত্ত্বাবধান করত। বিএনপি নতুন ব্যবস্থায় নির্বাচনে যাবে কি-না সেটা বলা মুশকিল। ” রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতার কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ শেখ মুজিবকে ঘিরে শেখ হাসিনা যে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করছেন সে ব্যাপারে পাবলিক ডিবেট বা বিতর্কও সীমিত। এ সপ্তাহে ইস্যু করা ব্যাংক নোটসহ তার (শেখ মুজিবের) ছবি সর্বব্যাপী।
ইকোনমিস্ট’র এ বিষয়ে মন্তব্য, “কোনো এক দলের নিজেকে জাতির এত ঘনিষ্ঠ হিসেবে চিহ্নিত করা সুস্থ স্বাভাবিক লক্ষণ নয়। ”
বলা হয়েছে, “একই সঙ্গে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতার সময় সংঘটিত নৃশংসতার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। ঝুঁকির বিষয় হচ্ছে এ বিচারকে দেখা হচ্ছে দলীয় ভিত্তিতে। এ মাসে আসামিপক্ষের একজন নেতৃস্থানীয় বৃটিশ আইনজীবীকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ”
ইকোনমিস্ট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “বাংলাদেশ যখন বিশাল প্রতিশ্রুতির সামনে দাঁড়িয়ে তখন দেশটির রাজনীতি রয়ে গেছে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং বিষাক্ত আকারে।
”
বলা হয়েছে, “১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর দেশটির বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র। সরকারের জনপ্রিয়তা এখনও অক্ষুণ্ন আছে। অর্থনীতি ভালোই চলছে। তৈরি পোশাক রফতানির ব্যবসা নিয়ে অর্থনীতি মোটামুটি সবল। চীন এবং বিশেষ করে ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো পথেই এগুচ্ছে।
”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে যেতে পারেন। সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে ওই সফরে স্বাক্ষর হতে পারে কয়েকটি চুক্তি। এ সফর সম্পর্বে ইকোনমিস্ট’র বক্তব্য, “তিনি (মনমোহন সিং) এবং বাংলাদেশের অন্য বিদেশী বন্ধুরা যদি তাদের বন্ধুত্বকে শুধু একটি দলের সঙ্গে নয়, দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব হিসেবে দেখেন তবেই ভালো। ”
সম্পূর্ণ নিউজটি -বার্তা২৪ ডটনেট এর সৌজন্যে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।