গণমাধ্যমকর্মী, চেয়ারম্যান - উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান, সদস্য সচিব - সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন।
বর্জ্য : আপদ না সম্পদ
শিল্প ও অন্যান্য বর্জ্যরে কারণে প্রতিনিয়ত নদী ও জলাভূমি দূষিত হচ্ছে, ভরাট হচ্ছে এবং তীব্রভাবে জনস্বাস্থ্য বিপন্ন হচ্ছে। বলা যায়-বর্জ্য পরিশোধনের অভাবে রাজধানীর সার্বিক পরিবেশই দিনদিন হয়ে উঠছে ভয়াবহ দূষিত। দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্যরে পরিশোধন নিয়ে নানা পর্যায়ে কথাবার্তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাসহ আশু করণীয়ও নির্ধারিত হয়েছে কিন্তু কার্যকর কোনো পদপে এখনো নেয়া হয়নি।
অথচ বর্জ্য সংরণ, নিষ্কাশন ও পুনঃব্যবহার উপযোগী করে রাজধানীকে একদিকে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রা করা সম্ভব-অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পচনশীল বর্জ্যকে জৈব সার, গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদ হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
এর ফলে একদিকে যেমন দেশের সম্পদের ওপর চাপ কমবে, অন্যদিকে বিভিন্ন েেত্র বিকল্প সম্পদ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। ওয়েস্ট কনসার্ন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা থেকে জানা যায়Ñ ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার টন বর্জ্য ফেলা হয়। এ থেকে সিটি করপোরেশন মাত্র ৪২% অপসারণ করে। এই আবর্জনার ৮০% জৈব, যা মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
অন্যদিকে শিল্পকারখানা থেকেও ব্যাপক বর্জ্য তৈরি হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে মোট বর্জ্যরে ৬০ ভাগই হলো শিল্পকারখানার। কলকারখানা থেকে নির্গত এসব বর্জ্য ড্রেন-নালা গলিয়ে গিয়ে পড়ে খাল ও নদীতে এবং তা সরাসরি দূষিত করে পরিবেশকে। কিছু বর্জ্য দীর্ঘদিন বৃষ্টির পানিতে পচে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ হিসেবে মাটি চুইয়ে ভূ-অভ্যন্তরে পৌঁছে অণুজীব ধ্বংসসহ অভ্যন্তরে পানির সঙ্গে মিশে গিয়ে মাটি ও পানি বিষাক্ত করছে। আবাসিক এলাকায় বর্জ্য ও হাসপাতালের বর্জ্যরে সঙ্গে ট্যানারির বর্জ্য, কলকারখানার বর্জ্য ও পশু জবাইয়ের বর্জ্যও জমা হয়। শুধু ট্যানারিগুলো থেকেই প্রতিদিন ১৫ হাজার ঘন মিটার শিল্প বর্জ্য ফেলা হয় নদীতে।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য অনুযায়ী এটি খুবই আশাপ্রদ বিষয় যে- ঢাকা মহানগরীর ৩ হাজার টন আবর্জনা থেকেই ৬০ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো জ্বালানির প্রয়োজন হবে না। এছাড়া রাজধানীর প্রতিদিনের আবর্জনা থেকে ২৪০ টন জৈব সার এবং ৬০ হাজার ঘন মিটার বায়োগ্যাস উৎপাদন সম্ভব। বিপুল সংখ্যক জৈব সারের চাহিদা মেটানো ছাড়াও এতে অন্তত ২৫ হাজার লোকের জ্বালানি চাহিদা পূরণ হবে। খাদ্য বর্জ্যরে সঙ্গে হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ও গরুর গোবর কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে সহজেই বায়োগ্যাস উৎপাদন করা যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে সাভারে ও গাজীপুরে পরীামূলকভাবে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনও করা হয়েছে। সেখানে কাঁচামাল হিসেবে এসব বর্জ্য ব্যবহার করে জৈবসার উৎপাদন করে কৃষি জমিতে তা ব্যবহারও করা হচ্ছে।
বলাবাহুল্য, বর্জ্য আবর্জনাকে এভাবে কাজে লাগাতে পারলে একে সম্পদে পরিণত করা ছাড়াও এর দুঃসহ দুর্গন্ধ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বর্জ্য আবর্জনার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পেতে এমন এক সময় আসবে যখন বর্জ্য রাখার জায়গা পাওয়া যাবে না; তখন আরো বেশি করে পরিবেশ দূষিত হবে। বিশেষ করে কলকারখানার বর্জ্য পরিবেশকে দুঃসহ করে তুলবে।
এখন থেকে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলে সচেতন না হলে অদূর ভবিষ্যতে দারুণ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হবে আমাদের। আবর্জনাকে সম্পদে রূপান্তর করে উন্নত দেশগুলো ছাড়াও আমাদের পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতসহ চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ইতিমধ্যে নানা অগ্রগতি সাধন করছে। কিন্তু দুঃখজনক যে- বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমাদের দেশে আইন থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না। সরকারকে এ ব্যাপারে অনতিবিলম্বে কার্যকর পদপে নিতে হবে।
আমরা মনে করি-বর্জ্যকে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না।
বিশেষ করে বর্তমানে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে যখন রাজধানীসহ সারা দেশ নাকাল হচ্ছে- তখন বর্জ্য থেকে গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভবনাকে কাজে লাগাতেই হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে আর কালপেণ করা উচিত নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।