জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে 'রেড অ্যালার্ট' চলছে। যে কোনো মূল্যে জঙ্গিদের তৎপরতা রোধে পুলিশ ও র্যাবকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। গোয়েন্দারাও তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। জঙ্গিবাদ দমনে জিরো টলারেন্স দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জঙ্গি দমনে নেওয়া নানা উদ্যোগ মনিটর করছে। এ ছাড়া শীঘ্রই মাঠে নামানো হচ্ছে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত 'ন্যাশনাল পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজম' (এনপিবিসিটি)।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, হঠাৎ করেই জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা বেড়ে গেছে। তারা দেশে ভয়াবহ নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা অাঁটছে। বিশেষ করে নতুন উগ্রপন্থি জঙ্গিবাদী সংগঠন 'আনসারুল্লাহ বাংলা টিম'-এর ভয়াবহ নাশকতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের হত্যার পরিকল্পনায় সরকারকেও নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। এ অবস্থায় জঙ্গি দমনে সরকার কঠোর পথ অনুসরণ করতে যাচ্ছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দাদের সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলায় পুলিশ সুপারদের এ বিষয়ে বিশেষ নোট পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে, ভিন্ন নামে জঙ্গি সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে এখন মাঠে। জামিনে মুক্ত দুই শতাধিক জঙ্গি সদস্যের কোনো খোঁজ নেই। গোয়েন্দাদের ধারণা, এরাই এখন সংগঠিত হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনের নামে। এদের সঙ্গে রয়েছে আফগানফেরত মুজাহিদ। অস্ত্র চালনায় অত্যন্ত দক্ষ এই জঙ্গি সদস্যরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
উল্লেখ্য, গত তিন দিনে পুলিশ জঙ্গি সংগঠনের ৪১ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে সোমবার দুপুরে বরগুনা শহরের উপকণ্ঠে দক্ষিণ খাজুরতলার জলিল মাস্টারের বাড়ি থেকে গোপন বৈঠক চলাকালে 'আনসারুল্লাহ বাংলা টিম'-এর প্রধান মুফতি জসিমউদ্দীন রহমানীসহ ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গতকাল ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার একটি কওমি মাদ্রাসা থেকে প্রশিক্ষণের সময় জঙ্গি সংগঠনের ৯ সদস্যকে গ্রেনেডসহ গ্রেফতার করা হয়।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু জানান, জঙ্গিবাদ দমনে সর্বাত্দক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় ডিসি-এসপিসহ প্রশাসনের সর্বস্তরের লোকজনের সমন্বয়ে জঙ্গি দমনের নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার জানান, জঙ্গি সদস্যদের গ্রেফতার ও জঙ্গিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। যে কারণে তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। তারা যেন কোনোভাবেই মাথাচাড়া দিতে না পারে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদের মতো সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ হওয়ার পর ওইসব সংগঠনের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনের নামে সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা বিভিন্ন জেলায় অবস্থান নিয়ে নেতাদের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকে। নির্দেশ পাওয়া মাত্র দুর্ধর্ষ জঙ্গি সদস্যরা তাদের মিশন সাকসেস করতে কাজ করে।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও তরুণরা নতুন করে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে জানিয়ে মহানগর পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের মতো নিজেদের সংগঠিত করা বা তাদের পথে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের টেনে আনার বদলে তারা যাদের ইসলামবিরোধী মনে করে তাদের হত্যার পরিকল্পনা করছে। আর এ কারণেই ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে ওই গ্রুপের সদস্যরা হত্যা করেছে। তাদের সবাই নতুন উগ্রপন্থি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সঙ্গে জড়িত বলে জানান তিনি।
গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, জামিনে মুক্ত দুই শতাধিক জঙ্গি এখনো লাপাত্তা। জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর, হিজবুত তাওহীদ ও জেএমবির এসব সদস্যের অধিকাংশের জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও কোনো হদিস নেই তাদের। অল্প কয়েকজন আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিলেও বাকিরা ঠিকানা বদল করে চলে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। বদলে ফেলেছে ঠিকানা। পুরনো ঠিকানায় এখন আর তাদের যাতায়াত নেই। যোগাযোগ নেই নিজ গ্রামের সঙ্গেও। এই পরিস্থিতিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও একরকম অসহায় সরকারের সংশ্লিষ্টরা। এমনকি তাদের গতিবিধি ও কার্যক্রম সম্পর্কে নূ্যনতম ধারণা নেই পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার।
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গিদের কার্যক্রমে সর্বক্ষণ নজরদারির দাবি করলেও বাস্তবে তা একেবারেই নিষ্ক্রিয়। এ কারণেই জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গিরা সহজে লাপাত্তা হয়ে যায়। কেউ কেউ পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে চলে যায় বিদেশে। আবার কেউ কেউ জামিনে মুক্তির পরেও চালিয়ে যাচ্ছে সাংগঠনিক কার্যক্রম।
জামিনে মুক্ত পলাতক জঙ্গি সদস্যদের হদিস না মেলায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা। তাদের ধারণা, এই জঙ্গি সদস্যরা একত্রিত হয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা আরও জোরদার করছে। সম্মিলিতভাবে আবারও যে কোনো সময় দেশে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাদের কেউ কেউ। সূত্র জানায়, এদের গ্রেফতারে পুলিশ ও গোয়েন্দারা এখন ব্যাপক তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে জঙ্গি দমনে গঠিত 'ন্যাশনাল পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজম' (এনপিবিসিটি)-কে শীঘ্রই মাঠে নামানো হচ্ছে। এই ইউনিটের মূল লক্ষ্য হবে দেশ থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটন। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ফোর্স এবং যুক্তরাজ্যের এমআই ফাইভ নামের বিশেষ বাহিনীর আদলে গঠিত এনপিবিসিটির কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। কিন্তু জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় এই বিশেষ বাহিনীকে মাঠে নামানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই ইউনিটের প্রধান কাজ হবে সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রমের পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা এবং বাস্তবায়নকারীদের দ্রুত প্রতিরোধ ও আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রম প্রতিরোধে এনপিবিসিটিই হবে পুলিশের সবচেয়ে হাইপাওয়ার ইউনিট। এই ইউনিটের সদস্যরা সজ্জিত থাকবেন অত্যাধুনিক সাজসরঞ্জামে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।