আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্ণী টু চায়নাঃ(বেজিং)-১১

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

জার্ণী টু চায়নাঃ(বেজিং)-১১ সকাল আটটায় হংকং থেকে আমাদের বেজিং ফ্লাইট। আবার সেই ড্রাগন এয়ার। হংকং থেকে এই ফ্লাইটের ৮০% যাত্রীই বিদেশী। অর্থাৎ বেশীর ভাগ যাত্রীই ট্যুরিস্ট। যাচ্ছেন চায়না দেখতে।

সোয়াতিন ঘন্টায় আমরা পৌছি বেজিং এয়ারপোর্ট। আমরা বেজিং এসেছি Beijing Wandong Medical Equipment Co., Ltd. এর সৌজন্যে। Beijing Wandong Medical Equipment Co., Ltd কোম্পানী বৃটিশ-চায়না জয়নভেঞ্চার মেডিক্যাল মেশিনারীজ/ ইকুইপমেন্ট তৈরীর বিশ্বখ্যাত কম্পানী। গত ১০ বছর যাবত এই কোম্পানীর সাথে আমার ব্যাবসা। আমরা এদের ইমেজিং প্রডাক্ট(এম আর আই মেশিন, সিটি স্কান, এক্স-রে মেশিন, কালার ডপ্লার, ই সি জি) সহ অনেক মেডিক্যাল মেশিনারীজ বাংলাদেশে ইম্পোর্ট/ বিক্রি করি সোল ডিস্টিবিউটর হিসেবে।

গত দুই বছর আমাদের বিক্রয়ের পরিমান ছিলো সার্ক দেশভুক্ত(মার্কেট জোন-২) দেশের মধ্যে সর্বাধিক। এতো বেশী বিক্রির অন্যতম কারন Wandong কোম্পানীর উন্নত কোয়ালিটি, তুলনামুলক স্বল্প দাম এবং চায়নায় ট্রেইনিং করা টেকনিশিয়ান্স দ্বারা আমার কোম্পানীর উন্নত বিক্রয়ত্তোর সেবা এবং সারা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে প্রচুর পরিমান হাস্পাতাল/ক্লিনিক গড়ে ওঠা! আমাদের এই সাফল্যের কারনেই Wandong কোম্পানী আমাদের এই সৌযন্য সফর এর ব্যবস্থা করেছে গত চার বছর যাবত। ৪ টি বিজিনেস ক্লাশ এয়ার টিকেট সহ সাত দিনের ভ্রমনের যাবতীয় খরচ সবই স্পন্সর কোম্পানীই বহন করে। আমার কোম্পানীর জি এম (মার্কেটিং) এবং সিনিয়র সেলস এক্সিকিউটিভ জানুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে বেজিং ভ্রমন করে গিয়েছিলেন। এবার আমি আমার ছোট ছেলেকে নিয়ে এসেছি।

ভ্রমনের জন্য এই সময়টা বেছে নেবার মুল কারন-অনেক আগে থেকেই সিদ্ধান্ত ছিল-আমার ছেলের স্কুল ছুটি, "চায়না নিউ ইয়ার ফেস্টিভ্যাল" এবং বরফ ঢাকা বেইজিং/চায়না দেখবে। পুর্ব সিদ্ধান্ত মত আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মিঃ ডেনিয়েল সি(Daniel Shi)কে সুদুর নানটং থেকে বেজিং আসার জন্য অনুরোধ করি। এখানে উল্লেখ্য যে এই Wandong কোম্পানীর পরিচয় আমি পেয়েছিলাম আমার পুরনো ব্যবসায়ীক বন্ধু এই ডেনিয়েলের মাধ্যমেই। Wandong'র মালিক ঝু কং ফেং(F) আমার বন্ধু ডেনিয়েলেরও সিনিয়র ব্যাবসায়ীক বন্ধু। ঝু কং ফেং'র(Jhu Kong Feng) সাথে আমার অনেক কারনেই খুব একটা জমেনা-যেমনটি জমে মিঃ ওয়াং, মিঃ ডেনিয়েলের সাথে কিম্বা চায়নার অন্যান্য ব্যাবসায়ীক পার্টনারদের সাথে।

আমি যখনই বেইজিং আসি-ডেনিয়েল অথবা মিঃ ওয়াং সেই সুদুর নানটং/নানজিং থেকে বেইজিং/ সাংহাই চলে আসেন আমাকে সংগ দেবার জন্য। এবার ডেনিয়েল তাঁর স্ত্রী এবং তাদের ১১ বছরের পুত্র সন্তান সহ আমাদের সাথে যোগ দেবার জন্য বেইজিং আসায় মিজ ফেং খুব খুশী। মিজ ফেং'র খুশীর কারন পরে লিখব। ঢাক-কুনমিং রুট চালু হবার পরথেকে আমাদের ঢা-হংকং-বেইজিং রুটে তেমন একটা ভ্রমন করা হয়না। কারন ঢাকা-কুনমিং রুট অনেক শস্তা এবং অনেক সময় সাশ্রয়ী।

তাছারা ঐ রুটে জার্ণী করলে বেইজিং এ কোনো প্রকার কাস্টমস/ ইমিগ্রেশন ফরমালিটিজ করার প্রয়োজন হয়না-যা করতে হয়-তা সবই কুনমিং এ করতে হয়। বেজিং ইমিগ্রেশনে অনেক ঝামেলা। ইমিগ্রেশন অফিসার মুখখানা শক্ত করে প্রশ্ন করে-প্রথমতঃ আমি প্রতি বছর একাধিকবার কেনো চায়না আসি? আমি যথাযথ উত্তর দেই। আমার এলসি'র কাগজ পত্র সাথে কেনো রাখিনা?-ইত্যাদি। এবার আমার ছেলের পালা।

সাজিদকে প্রশ্ন করছে-"কিয়াং ওয়েন নিন মিং জি"(তোমার নাম কি)? -সাজিদ বলও-প্লীজ আমাকে ইংলিশে প্রশ্ন করুন। আমি আমি অফিসারকে বললাম আমার ছেলের নাম-(যেভাবে পাসপোর্টে লেখা আছে)। "নি সি ডি ইয়ি সিডাও বেইজিং মা"(তুমি কি এই প্রথম বেজিং এসেছো)? সাজিদের হয়ে আমিই আবার যখন রিপ্লাই দিচ্ছিলাম-তখন ইমিগ্রেশন অফিসার একটু বিরক্তি নিয়েই বললেন-"কিং ডাও জিয়া ইয়ি গে গুই টাই"- অর্থাৎ আমাকে পাশের রুমের চলে যেতে বলল-সাজিদকে রেখে। এবার সাজিদকে প্রশ্ন করলো-"উ মেন ডি লু যিং শি যেন মি আন পাইডি"(তোমার ট্রাভেল শেডিউল কি?) সাজিদ আবারো অফিসারকে ইংলিশে প্রশ্ন করতে অনুরোধ জানায়, তারপরেও ইমিগ্রেশন অফিসার ওকে চায়নীজ ভাষাতেই একেরপর একটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে! তখন সাজিদ বিশুদ্ধ বাংলায় কথাবলা শুরু করে.........! ওর বাংলা শুনে অফিসার অন্য একজন অফিসারকে কাছে ডাকলো... আমি জানালাম-সাজিদ চায়নীজ ভাষায় কথা বলতে পারেনা-হয় তুমি ওকে ইংলিশে প্রশ্ন কর, সে রিপ্লাই করতে পারবে। আর যদি তুমি চায়নীজ ভাষায় প্রশ্ন/ কথা বল-তাহলে আমাকেই ওর হয়ে প্রশ্নের রিপ্লাই করতে হবে।

হঠাত সাজিদ ইমিগ্রেশন অফিসারকে বলল-"Officer, you are looking very good and smart. But how can you perform your duty without being able to speck in English? (অফিসার, তুমি একজন স্মার্ট সুদর্শন অফিসার। কিন্তু ভালো ইংলিশ জানেননা-কি করে তুমি তোমার ডিউটি করো?)- সাজিদের এই ইংলিশ বাক্যটার অর্থ অফিসার খুব ভাল করেই বুঝতে পেরে একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়(অনেক চায়নীজরাই ইংলিশ ভালই বুঝতে পারে-কিন্তু বলতে পারেনা-এই অফিসারটিও তেমন একজন)! স্মার্ট ইমিগ্রেশন অফিসার ইংলিশে ভালো নয় বলেই আমার সাথে চায়নীজ কথা বলতে রাজী হলেন। ইমিগ্রেশন অফিসারের প্রশ্ন হলো-আমরা দুজন একসাথে এসেছি। আমার "শেং উ জিয়ান জিং"(মাল্টিপল বিজনেস ভিসা), সাজিদের ২০ দিনের "লু উ জিয়ান জিং"(টুরিস্ট ভিসা)। একারনে আমি ইচ্ছে করলে চীনে অনেক দিন থাকতে পারবো-কিন্তু সাজিদ কি ২০ দিন পার হলে একাকী দেশে চলে যেতে পারবে? আমি অবাক হলাম-এইটুকুন সময়ের ভিতর বেটার মাথায় এমন অদ্ভুত কিন্তু বাস্তব প্রশ্নটা কি করে মাথায় এলো ভেবে! আমি অফিসারকে আস্বস্থ্য করে বললাম-ভয় নেই ওর ২০ দিনের ভিসা থাকলেও ৭ দিনের বেশী তোমাদের দেশে আমাদের থাকা হবেনা-আমাদের রিটার্ণ টিকেট রি-কনফার্ম করা আছে টেন্থ ফেব্রুয়ারীর জন্য।

অফিসার সাজিদের কাঁধে হাত রেখে বললেন-"বিকে কি, মেই গুয়া জি"(সব ঠিক আছে, কস্ট দেবার জন্য মন খারাপ করনা)। "ই লু পিং আন"(হেপী জার্ণী)। আমি বললাম-জিয়ে জয় নি(ধন্যবাদ)। পাঠক, চীনা ভাষা বিশয় একটু বলছি-চীনের বর্ণমালায় ৪ শতাধিক বর্ণের সমাহার। তার মধ্যে ৭০ টি বর্ণ আছে-যা চায়নীজদের গৃহস্থালী কাজের এবং নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিষের সিম্বল।

যেমন দাও, কাস্তে, হাড়ি-পাতিল, ঘড়, গরু, শুকর ইত্যাদি। অনেক সময় ওদের একই শব্দের ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে শুধু মাত্র টোন/উচ্চারণের কারনে। কাজেই চীনা ভাষায় কথা বোঝার জন্য কথার "টোন" একটা গুরুত্বপুর্ণ বিশয়। আমরা বাইরে চলে এসেছি ইমিগ্রেশন-কাস্টমস পেরিয়ে। হঠাত মনে হলো এক পশলা তীব্র শীতল হাওয়া আমাদের চেপে ধরল! বাইরে প্রচন্ড শীত।

আজকের তাপমাত্রা মাইনাস ৫ ডিগ্রী সেঃ। শীতে জমে যাবার অবস্থা! তাকিয়ে দেখি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন মিজ ফেং তাঁর সেক্রেটারিকে সাথে নিয়ে। ২ জনেই মাথা বাও করে বললেন-"নি হাও"(হ্যালো), "নি হাই মা"(ক্যামন আছো), "বি কি কি জিয়ান সেং বেইজিং" (বেজিং'এ তোমাদের স্বাগতম)। আমি বললাম-"হাই হাউ জিয়ে জিয়ে"(ভালো আছি, তোমাদের অনেক ধন্যবাদ)। মিজ ফেং খুব আন্তরিকতার সাথে আমার হাত ধরে জিজ্ঞাসা করলেন-"মিত্তার কবির, সেন টি জেন মেং ইয়াং(মিঃ কবির, তোমার শরির এখন ক্যামন)? আমি এখন অনেক ভালো আছি শুনে মিজ ফেং খুব খুশী হলেন।

তিনি তার সেক্রেটারির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ইনি মিজ দুয়ো, আমার সেকেন্ড সেক্রেটারি। আমার আগের পরিচিত ফার্স্ট সেক্রেটারি চায়নীজ নিউ ইয়ার ভ্যাকেশনে আছে। মিজ দুয়োকে আমি আগে থেকে চিনিনা। আমি আমার ছেলের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিলাম।

আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি-আমার বন্ধু মিঃ ডেনিয়েলের জন্য। মিজ ফেং বিশয়টা বুঝে নিজ থেকেই বললেন-মিঃ ডেনিয়েল আরো ৪০ মিনিট পরের ফ্লাইটে নানজিং থেকে বেইজিং পৌছবেন। তোমরা শীতে খুব কস্ট পাচ্ছো। তোমাদের শীতের কাপড় বেইজিং'র শীতের জন্য যথেষ্ঠ নয়। চলো আমরা হোটেলে চলে যাই।

গাড়িতে উঠতে উঠতে আমাদের শরির শীতে হিমশীতল হয়ে গিয়েছিল। আমরা চলছি আমাদের জন্য নির্ধারিত হোটেলে। গাড়ির হিটার অপেন করা-কিন্তু শীতের তীব্রতা কম মনেহচ্ছেনা! বেইজিং শহরে যতই ঢুকছি-ততই সাইকেল আরোহিদের ভীড় বাড়ছে। পুরো চায়না জুরেই সাইকেল আরোহি খুব বেশী। বেইজিং শহরে সব থেকে বেশী দেখা যায় বাইসাইকেল।

শুনেছি এক সময় মাওসেতুং নিজেও সাইকেল চেপে, কিম্বা পাব্লিক বাস চেপে অফিসে যেতেন। পরের কিস্তির জন্য অপেক্ষা করুনঃ

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।