সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
জার্ণী টু চায়নাঃ(হংকং)-৯
মিজ সুকসুক সেই কখোন থেকেই ডিনার করার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পরেছে! আমরা একটু লেট করে ডিনার করতে অভস্থ্য। সেই ভাবে আমরা ইচ্ছাকরেই ডিনারের জন্য লেট করছি। হংকং- চীনে গেলেই আমি খাবার জিনিষটা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলি। অনেক ঘোরাঘুরি করে মিজ সুকসুক আমাদের এমন একটা হোটেলে নিয়ে গেলো যে হোটেলের সামনেই একুরিয়ামে বিভিন্ন প্রকার জীবন্ত সাপ, শামুক, ঝিনুক, অক্টোপাস সহ নানান বিদ্বঘুটে প্রাণী দেখতে পাই। হোটেলে ঢুকতেই এমন একটা দুর্গন্ধ পেয়েছিলাম-যাতে পেটের ভিতরের নাড়িভুড়ি পর্যন্ত বেড়িয়ে আসতে যাচ্ছিল।
তাড়াতারি ঐ হোটেল থেকে বেড়িয়ে অন্য একটা হোটেলে যাই। সেখানেও একই অবস্থা। আস্ত আস্ত বিভিন্ন সাইজের এক একটা সাপ, কোনটা অজগর, কোনটা অন্যকোন সাপ হাতে নিয়ে দেখাচ্ছে খদ্দেরদের পছন্দ করার জন্য। সিদ্ধান্ত হলো-আমরা বাপ-বেটা দুজন আমাদের হোটেলের ডাইনিং এ গিয়ে ডিনার করবো। স্টার হোটেলের খাবারের মান যেমন ভালো-দামও অত্যন্ত বেশী।
যেমন আমাদের হোটেলে একটা ডিমের মামলেট/অমলেট ৩৫০ টাকার বেশী, যা বাহিরের হোটেলে ৩০/৪০ টাকার সমান। বাহিরে যে সালাদের দাম ১০০ টাকা স্টার হোটেলে সেই সালাদের দাম কমপক্ষে ১০০০ টাকার সমান।
এখন শুধু মিজ সুকসুক একাই খাবে-যেহেতু এখন তার ডিনার টাইম। সুকসুক তার নিজের পছন্দে অনেকগুলো খাবার পছন্দ করলো। যেগুলো আমি মনে করতে পারছি তাহলো-ডগ ব্রেইন স্যুপ, পিগ লিভার, স্পেস ক্রাব, একটা বিভতস রকম কুতসিত সাপ।
অমন কুতসিত সাপ আমি পুর্বে দেখিনি। সাপ সম্পর্কে সুকসুক জানালো-ঐ সাপ মেকং নদীতেই শুধু পাওয়া যায়। ওটা খুব সুস্বাদু। মিজ সুকসুক সাপের রক্ত, সাপের স্যুপের অনেক উপকারিতার কথা বর্ণনা করলো। যখন বলল-"সাপের রক্ত খেলে চেহারা সুন্দর হয়"-আমি সুকসুককে একটু খোঁচা দিয়ে বললাম-এতো উপকারী খাবার খেয়ে কিম্বা সুন্দর হয়ে কি লাভ? তানাকাতো তোমাকে ছেরে চলে গিয়েছে! হঠাতই তার মন খারাপ হয়ে গেল।
নিজেকে একটু সামলিয়ে নিয়ে সুকসুক অনেক প্রকার খাবারের অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছে খাবার রেডি হবার জন্য। হোটেলের ভিতর একধরনের অচেনা অপরিচিত দুর্গন্ধ! আমি খাবারের সম্ভাব্য বিল সুকসুককের হাতে দিয়ে হোটেল থেকে বেড়িয়ে ছেলের সাথে বাইরে অপেক্ষা করছি। আমার ছেলে জিজ্ঞেস করছে-মিজ সুকসুক কি খাচ্ছেন? আমি একটি চায়নীজ প্রবাদ অনুবাদ করে শোনালামঃ-
যাহাদের দুইটি পাখা আছে-
তাহা সবই খায় চায়নীজরা।
কিন্তু উড়ো জাহাজ খায়না!
যাহাদের চারটি পা আছে-
তাহা সবই খায় চায়নীজরা।
কিন্তু চেয়ার-টেবিল খায়না!
প্রায় ৪০ মিনিট পর মিজ সুকসুক ডিনার শেষ করে বের হলো।
আমরা কালি হংকং ছেড়ে যাচ্ছি-তা সুকসুক মনে রেখেছে। আমাকে বললো-মিত্তার কবির, তুমি বলেছিলে তানাকার সাথে দেখা করবে-এখোন যাবে?
সাজিদ জানালো সে তানাকার বিষয় মোটেই আগ্রহী নয়-সে ওখানে যাবেনা। সাজিদকে হোটেলে পৌছে দিয়ে আমি আর সুকসুক চলছি তানাকার বাড়ী। ২০ মিনিটের মধ্যেই আমরা পৌছে যাই তানাকার বাড়ি। বাড়ি না বলে একটা কবুতরের খোপ বলাই যথার্থ হবে।
ওদের রুমের দড়জা খোলাই ছিল। এক্টা ছিপছিপে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতের কব্জিতে বিভিন্ন প্রকার মালা, ভিন্ন ভিন্ন রকমের চেইন, কানে, ঠোঁটে লিপিস্টিক, গলায়, সারা শরির জুড়ে অলংকারের কমতি নেই! লম্বা চুল, শরির থেকে একটা ভোটকা দুর্গন্ধ! কত দিন শাওয়ার করেনা আল্লাহ মালুম-লোকটার বাহির দেখে বোঝার কোনই উপায় নেই-ওটা পুরুষ না মহিলা। কারন তার শারিরে বাহ্যিক কোনই এভিডেন্স নেই নারী কিম্বা পুরুষের। তাকে থ্রলী চেকয়াপ নাকরে কেউ বলতে পারবেনা তানাকা পুং/ স্ত্রী লিংগের মানুষ! ওকে দেখেই আমার মনে একটা বিরক্তি ভাব চলে আসে।
মিজ সুকসুক পরিচয় করিয়ে দিল-মিঃ তানাকা... আমি মনে মনে চরম অভক্তি নিয়ে হাত মেলালাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তানাকার বয় ফ্রেন্ড/রুম মেট হাতে কিছু খাবার নিয়ে চলে আসে। তার সাথেও পরিচয় করে দেয়া হলো। এই শালার চেহারাও ঠিক তানাকার মতই। দুটোরই আচরন হিজরাদের মত।
তারা দুজন শরিরের শরির মিশিয়ে বসেছে। কথা বলার সময় দুজনে হাত/ শরির স্পর্শ করছে। তানাকার চেহারা দেখেই আমার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে- তারা দুজনই হারমোফ্রোডাইট, এমন মানুষ আমি অনেক দেখেছি থাইল্যান্ডের পাথাইয়া সী বীচ এলাকায়, দামী হোটেলে ঘুড় গুড় করতে। ওদেরকে বলে "লেডি বয়"।
এক শ্রেনীর বিকৃতমনা আমেরিকান-ইউরোপীয় পুরুষ-মহিলাদের কাছে "লেডিবয়" অত্যন্ত জনপ্রিয়। ওদের রেইট নাকি যেকোনো সুন্দরী নারীদের থেকেও বেশী! মিজ সুকসুকের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে-মিজ সুকসুক সুন্দরী নাহলেও কম আকর্ষনীয় নয়। তার মত একটা মেয়ে তানাকার মত একটা বান্দরকে কি কারনে বিয়ে করেছিল, তার জন্য কেনো মন খারাপ করছে-ইত্যাদি ভেবে! আমিতো মনে করি তানাকা চলে গিয়ে সুকসুককে বাঁচিয়েছে। ওরতো এখন কোন মাজারে সিন্নী দেয়া উচিত, কাংগালী ভোজের ব্যাবস্থা করা উচিত। নিদেন পক্ষে সুকরিয়া নামাজ আদায় করা উচিত!
ওখানে আমরা যতক্ষণ ছিলাম বলতেগেলে আমি দম বন্ধ করেছিলাম! ১৫/২০ মিনিটের মাথায় আমরা চলে আসার সময় সুকসুক কান্নায় ভেঙ্গে পরলো।
কেঁদেকেঁদে সুকসুক বারবার তানাকাকে বলছে-"পাম লাখ খুন...... পাম লাখ খুন"(থাই ভাষায়-আমি তোমাকে ভালোবাসি... আমি তোমাকে ভালোবাসি)! ওরা তিন জনেই ওদের ভাষায় কিচির মিচির করে কিসব কথা যেনো বলে বিদায় নিল।
আমি গাড়িতে এসে সুকসুককে বললাম-তোমার মত সুন্দরী মেয়ে মিঃ তানাকা বিয়ে করতে পেরেছিল-কারন ওর পুর্ব জনমে হয়ত কোন পুণ্য করে থাকবে। আমি অনেকটা বিরক্তি নিয়েই বললাম-তানাকা একটা অভাগা, নির্বোধ, হারমোফ্রোডাইট ইত্যাদি। আমি বললাম-তোমার চেহারায় এখন যে জেল্লা আছে তাতে অনায়াসে তুমি যেকোন রাজপুত্তুর বিয়ে করতে পারবে। তোমাকে দেখতে এখনো ২২/২৩ বছরের যুবতীর মত লাগে(আসলে সুকসুককে খুশী করার জন্য মিথ্যা কথা বলেছি)।
তুমি শুধু তানাকাকে মন থেকে দূর করে যে কোন সুদর্শন পুরুষের দিকে তাকাও-দেখবে তোমাকে বিয়ে করার জন্য লাইন পড়ে যাবে। তুমি নিজে আয়নায় তাকিয়ে দেখো-তুমি সত্যি কত্ত সুন্দর! তানাকা একেবারেই তোমার যোগ্য নয়-তাই সে চলে গিয়েছে-যা একান্তই সৃস্টি কর্তার ইচ্ছা। তুমি কথা দাও-তুমি আর কখনো তানাকাকে মনে করবেনা। তুমি নতুন একজন স্মার্ট শিক্ষিত চাকুরিজীবি ছেলে পছন্দ কর এবং বিয়ে করে সুখী হও। আমি ১০০% নিশ্চিত তুমি চাইলেই অনেকজন ভালো বন্ধু, একজন ভালো বর পেতে পারো-কারন আমি তোমার মাঝে সকল সৌন্দর্য দেখতে পাচ্ছি-যাকিছু একজন পুরুষ লাইক করে।
তুমি খুব সুন্দর একটা ছেলেকে বিয়ে করে তানাকাকে দেখিয়ে দাও-তোমার রুপের মাধুর্যে কত তানাকারা পাগলপারা।
আমার কথা মিজ সুকসুক'র মনে ধরেছে মনে হলো। সুকসুক চমতকার করে তার জাম-কালো রংয়ের দাতগুলো বের করে তৃপ্তির হাসি হাসলো! এই প্রথম দেখলাম মিজ সুকসুক ঠিক ৪ বছর পুর্বের কিশোরী মেয়ের মত খিল খিল করে হাসছে! আমি আরো বললাম- আমি চায়নাতে থাকা অবস্থায়ই যেনো জানতে পারি-তুমি একজন নতুন বন্ধু পেয়েছো......তোমাদের বিয়েতে আমাকে ইনভাইট করবেতো? সুকসুক মিস্টি হেসে জানালো- তাকে অনেকেই লাইক করে, প্রপোজ করে-কিন্তু সে এতোদিন কাউকে পাত্তা দিতোনা! সে এখন নিজেকে সম্পুর্ণ বদলে ফেলবে।
আমি সুকসুকের মুখের উজ্জলতা দেখে বুঝলাম-তার প্রেমে পরা/সংগী নির্বাচন করা এখোন শুধু সময়ের ব্যাপার। আজই সে কাউকে বলবে-"পাম লাখ খুন"!
পরের কিস্তির জন্য অপেক্ষা করুনঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।