আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্ণী টু চায়নাঃ(সাংহাই)-১৯

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
[জার্ণী টু চায়নাঃ(সাংহাই)-১৯ সাজিদের ক্যামেরায় সাংহাই সিটি- সকাল ৭ টার ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারে বেইজিং থেকে সাংহাই যাত্রা শুরু করে দেড় ঘন্টায় সাংহাই পৌঁছি। সাংহাই থেকে আমাদের কুনমিং'র ফ্লাইট বিকেল সারে পাঁচটায়। বেইজিং থেকেই আমরা সরাসরি কুনমিং যেতে পারতাম। কিন্তু সাংহাইতে আমার পুর্ব নির্ধারিত ব্যবসায়ীক কিছু কাজ আছে-যা শেষ করতে মাত্র ঘন্টা খানেক সময় লাগার কথা। পুর্ব প্রগ্রাম অনুযায়ী সাংহাইতে আমার বিজনেস এজেন্ট এর প্রটোকল অফিসার আমাদের নিতে গাড়ি নিয়ে এয়ারপোর্ট থাকার কথা।

পুডং এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে ম্যাগলেভ ট্রেন স্টেশন-(এই পথটুকু হেঁটে এবং এক্সেলেটরে যেতে হয়- সাংহাই চীনের সব চাইতে ব্যস্ত সিটি। এই সিটিতেতে দুটো এয়ারপোর্ট। একটার নাম পুডং(Pudong) এবং অন্যটার নাম হংকিও (Hongqio)। পুডং এয়ারপোর্ট অনেক বড়। এখান থেকেই বেশীর ভাগ ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট সেল হয়।

এয়ার পোর্ট থেকে বাই রোড ৩০ কিঃমিঃ দুরত্বের সাংহাই মেইন সিটিতে পৌঁছতে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে। কাল রাতে বেইজিং থেকেই আমি আমার প্রিন্সিপালকে জানিয়েছিলাম- আমার ছেলের ইচ্ছায়-তাকে নিয়ে বিশ্বের দ্রুতগামী ট্রেন ম্যাগ্লেভ(Maglev) মনোরেল চড়ে আমরা এয়ারপোর্ট থেকে সাংহাই সিটিতে তোমার অফিসে যেতে চাই। কাজেই তুমি এয়ারপোর্ট থেকে আমাদের মনোরেলে যাবার ব্যবস্থা করো। প্রটোকল অফিসার মিজ জয়েস আমাদের জন্য সে ব্যবস্থাই করে রেখেছেন। ম্যাগলেভ ট্রেন এর সীট- ম্যাগ্লেভ মনোরেল পৃথিবীর সব চাইতে দ্রুতগামী তিনটি ট্রেন সার্ভিসের অন্যতম।

জাপান এবং জার্মানীতেও এই ট্রেন সার্ভিস পরিচালিত হয়। ঐ দুটি দেশে এই ট্রেন সার্ভিসকে সম্ভবত বলা হয় বুলেট ট্রেন। চায়নায় শুধুই ম্যাগ্লেভ। ম্যাগ্লেভ মনোরেল পরিচালিত হয়-'সাংহাই ম্যাগ্লেভ ট্রান্সপোর্টেশন ডেভেলপমেন্ট কোং' এর তত্বাবধানে। চায়নার সকল রেল যোগাযোগ চীন সরকারের "চায়না রেল ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের" অধিনের হলেও 'ম্যাগ্লেভ" সম্পুর্ন আলাদা ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়।

স্থানীয়রা চীনা ভাষায় ম্যাগ্লেভকে বলে "হুও চি টি কুয়াই"(Huo Che Ti Kuai)। চায়নীজ ভাষায় "হুও চি" মানে ট্রেন/রেল গাড়ি এবং "টি কুয়াই" মানে খুব বেশী দ্রুতগামী, অর্থাৎ সুপার ফাস্ট(super fist)। পুডং থেকে সাংহাই মেইন সিটির দুরত্ব যদিও মাত্র ৩০.৫ কিঃ মিঃ। এই পথ বাইরোড যেতে অনেক সময় ট্রাফিক জ্যাম লেগে ১৫/২০ মিনিট বেশী সময় নষ্ট হয়। সময়ের প্রতি অতি সচেতন চীনারা এই সময় বাঁচাতে এবং চীনের অর্থনৈতিক ঐষর্য্য বিশ্ববাসীকে দেখাবার জন্য এই পথটুকুর জন্য দ্রুতগামী ম্যাগ্লেভ মনোরেল চালুর ব্যবস্থা করে।

২০০১ সালের মার্চ মাসে সাংহাই ম্যাগ্লেভ ট্রান্সপোর্টেশন ডেভেলপমেন্ট কোং এই ট্রেন সার্ভিসের নির্মান কাজ শুরু করে এবং ২০০৩ সালের নভেম্বর মাসের আনুষ্ঠানিক ভাবে পরীক্ষামুলক সার্ভিস উদবোধন করে। ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারী থেকে কমার্শিয়ালী সার্ভিস চালু করা হয়। ফ্লাইওভারের মত পাশাপাশি দুইটি নয়নাভিরাম রোড(ফ্লাইওভার) তৈরী করে এর লাইন স্থাপন করা হয়েছে। তবে মনোরেলের লাইন সাধারন ট্রেন লাইনের মত নয়। অত্যাধুনিক এবং বিলাশবহুল পাঁচটি কম্পার্ট্মেন্ট (বগী) নিয়ে এই ট্রেন।

ট্রেনের বগিগুলো ট্রেন লাইনের নীচ দিকেও আটকানো-যাতে কোন কারনে দুর্ঘটনাক্রমে ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে পরে না যায়। আমি বিশয়টা সম্ভবত ঠিক মত ক্লিয়ার করতে পারিনি। অর্থাৎ ট্রেন কখনো দুর্ঘটনাক্রমে লাইনচ্যুত হলেও উপড় থেকে ছিটকে নীচে পরে যাবেনা-বরং ঝুলে থাকার জন্য এই ব্যবস্থা! ম্যাগলেভ ট্রেনের সিটগুলো সব সামনের দিকে মুখ করে প্লেনের মত দুই সারিতে বসার ব্যবস্থা। এই ট্রেনের গতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৫০০ কিঃ মিঃ। তবে ৫০০ কিঃ মিঃ গতিতে চলার জন্য আরো লং ডিস্টাঞ্চ স্টেশন হতে হবে।

প্রতিটি কম্পার্ট্মেন্টে ডিজিটাল স্পীড মিটারে প্রতি মুহুর্তের গতি সকল যাত্রীরাই দেখতে পারেন। আমরা মাত্র ৭ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময়ে ৩০.৫ কিঃ মিঃ দুরত্ব অতিক্রম করে সাংহাই সিটিতে পৌঁছে যাই!তখন সর্বোচ্চ গতি দেখেছি ৩৪১.৫ কিঃ মিঃ। অবাক করা বিশয় হলো-এই ট্রেনে কোন ঝাকুনি নেই, কোন ঝক্কর ঝক্কর শব্দ নেই। শুধু মাত্র ট্রেন থামার সময় মৃদু এক্টুখানি ধাক্কা লাগে। যাত্রীরা সাধারনত ক্যারি অন ব্যাগ/লাগেজ সাথে করে নিতে পারেন।

সকাল ৬ টা পনের মিনিট থেকে রাত এগারটা পর্যন্ত প্রতি ১৫ মিনিট পর পর ট্রেন সাংহাই সিটির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। প্রতি দিন ৭৫০০ যাত্রী পরিবহন করে এই সার্ভিস। প্রতি জনের ভাড়া ৮০ ইউয়ান(আর এম বি)। এই ট্রেনের বেশীর ভাগ যাত্রীই সময় বাঁচানোর জন্য এমন এক্সেপ্নসিভ ট্রেনে ভ্রমন করে বলে আমার মনে হয়না। আমাদের মতই সবাই একটা রিক্রিয়েশন তথা নতুন অভিজ্ঞতা লাভের জন্যই এই ট্রেনে জার্নী করে।

তাই সব যাত্রীদেরই ছবি তোলার হিরিক পরেযায়। ম্যাগলেভ ট্রেন- ট্রেনের ভিতরের দৃশ্ব্য- আমার চিরাচরিত কৌতুহল মেটাতে ট্রেন সম্পর্কে আরো জানার জন্য আমি কথা বলি ট্রেনের টেকনিক্যাল ম্যানেজার/ প্রকৌশলী ঝুয়ান পিহ্যাং লী'র সাথে। আমি কিছু কিছু চায়নীজ ভাষা জানায় তিনি আমার সাথে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কথা বললেন। আমার সাথে, আমার ছেলের সাথে অনেকগুলো ছবি তুললেন। মিঃ লী জানালেন সম্পুর্ন চায়নীজ প্রযুক্তিতে এই ট্রেন নির্মান করা হয়েছে।

প্রতি কিঃ মিঃ নির্মান ব্যয় হয়েছে ২৪.৬ মিলিয়ন ডলার এবং সর্বমোট ব্যয় হয়েছিল ১.৩৩ বিলিয়ন ডলার। সাংহাই ম্যাগ্লেভ ট্রান্সপোর্টেশন ডেভেলপমেন্ট কোং এর তত্বাবধানে বর্তমানে সাংহাই সিটিতে আরো ১২ টি স্টেশনে সংযোগ কাজ সমাপ্তির পথে। তাছারাও সাংহাই থেকে অন্য ৩টি প্রভিন্স এবং সুদুর বেইজিং পর্যন্ত এই super fist ট্রেন সার্ভিস নির্মান পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে। সাংহাই ম্যাগ্লেভ ট্রান্সপোর্টেশন ডেভেলপমেন্ট কোং এবং ভারতীয় পাতাল রেল নিগম(ইন্ডিয়ান মেট্রো রেলওয়ে)'র সাথে জয়েন্টভেঞ্চারে দিল্লি-মুম্বাই এবং পাকিস্তানের লাহোর আল্লামা ইকবাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে লাহোর সিটি পর্যন্ত ম্যাগলেভ সার্ভিস প্রতিষ্ঠার কাজ চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সাজিদকে নিয়ে মিস জয়েস আমার হ্যান্ড ব্যাগ নিয়ে ট্রেনের উঠতে যাচ্ছে- প্লাটফর্মে ম্যাগলেভ ট্রেন আসার অপেক্ষায়- নীচের ছবিতে ট্রেনের স্পীড শো করছে- (ট্রেনের ভিতরে বসে বাহিরের যেসব ছবি আমরা তুলেছিলাম-সেই ছবিগুলো ভাল হয়নাই।

মিঃ লী সাজিদকে অনেকগুলো ম্যাগ্লেভ ট্রেনের পোস্টার গিফট দিয়েছিলেন-সেই পোস্টারের বেশ কয়েকটা ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। তবে ছবিগুলো সিরিয়াল মেনে এড করতে পারিনি-যা আমার ব্যার্থতা) পরের পর্বই এই সিরিজের শেষ পর্ব।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।