আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্ণী টু চায়নাঃ(হংকং)-৫

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

জার্ণী টু চায়নাঃ(হংকং)-৫ হংকং সিটিতে আমরা বাপ-বেটা ঘুরছি ভো-কাট্টা ঘুড়ির মত। নির্দিস্ট কোন যায়গা বা দ্রস্টব্য টার্গেট করে নয়। আমাদের সংগ দিচ্ছেন মিজ সুকসুক। কয়েক বছর পুর্বে যখন সুকসুককে দেখেছি তখন সে অনর্গল কথা বলত। প্রয়োজন অপ্রয়োজনে হেসে কুটি কুটি হতো।

কিন্তু এবার সেই হাসিখুশী মেয়েটি চুপচাপ, বিমর্ষ। আমি জানতে চাইলাম-তার এই পরিবর্তনের কারন কি? সু্কসুক যেনো আমাকে তার কথা বলার জন্যই সুযোগ খুঁজতেছিলো। গাড়ি থামালো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। বললো-চলো তোমাদের হালকা নাশ্তা এবং কফি/ লু চা(গ্রীণ টি) খাওয়াবো। পাঠক, চীনারাও কিন্তু আমাদের মত চা'কে চা বলে।

আমি কফিতে অভ্যস্ত নই-কিন্তু গত ২২/২৩ বছর যাবত গ্রীণ টিতে অভ্যস্থ্। আমরা বিলাশবহুল রেস্টুরেন্ট "হোয়াইট টাং কিং" -এ বসলাম। এই রেস্টুরেন্টের একটা স্পেশালিটি আছে। তাহলো-রেস্টুরেন্টের মধ্যখানে স্বচ্ছ কাঁচঘেরা কিচেন। আপনি যে খাবারের অর্ডার দিবেন-সেই খাবার প্রস্তুত প্রনালী আপনি স্বচক্ষে বসে বসে দেখতে পারবেন।

এমন একটা রেস্টুরেন্ট ইদানীং আমাদের গুলশানেও হয়েছে। আমার অস্থির ছেলে সু্কসুক'র কাহিনী শোনার বিশয় মোটেই আগ্রহী নয়। ছেলে বলল-আব্বু, তোমরা কথা বলো-আমি আশে পাশেই ঘুড়ে দেখছি এবং ছবি তুলছি। আমি তাকে সাবধান করে বললাম-বেশী দূরে যেওনা...। ছেলে বললো-"ভয় কি, এখানেতো ভাষার সমস্যা নেই।

এখানে সবাই ইংলিশ বলতে/বুঝতে পারে"। আসলেই হংকং এ ভাষা নিয়ে কোনই ঝামেলা নেই। বৃটিশরা চলে গেলেও এখানে পাকাপোক্ত করে রেখে গিয়েছে ইংরেজী ভাষা। মিজ সুকসুকের কথাঃ-মিজ সু্কসুক থাই মেয়ে। পুরো নাম সু্কসুক সুরাসাখ সাতুরিয়া।

হংকং থাকছে আজ ১৬ বছর যাবত। তার বর্তমান বয়স ৩৬। "জিং লি ঝি ইয়ান" মানে-সহকারি অফিস সেক্রেটারী কাম লিয়াজো অফিসার হিসাবে একটি বহুজাতিক কোম্পানীতে জব করে। এই অফিসেই জব করতো তানাকা নামক এক যুবক। তানাকা নাম শুনেই আমি বললাম-তানাকাতো পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই নাম হয়, তোমার উল্লেখিত তানাকা কি পুরুষ? সু্কসুক জানালো-হ্যা, আমার তানাকা পুরুষ।

তানাকার সাথে সু্কসুক'র প্রেম অতপর একান্তই সুকসুকের প্রেসারে বিয়ে। সুকসুক বিয়ের পুর্ব পর্যন্ত ভার্জিন ছিল। বিয়ের পর থেকেই তানাকার শারিরিক কিছু পরিবর্তন দেখা দেয়। তার চলাফেরা, আচার আচরণে মেয়েলী ভাবটা বেশী চলে আসে। স্বাভাবিক সেক্স করতে চায়না।

আজ দুই বছর যাবত তানাকা অন্য ছেলেতে আশক্ত। তারা লীভ টুগেদার করছে। সেই ছেলেটিও তানাকার মত...। আমি তানাকা'কে ভুলতে পারছিনা। অনেক কস্ট আমার।

কস্ট ভুলতে আমি ড্রাগ নিতে শুরু করি(ড্রাগ নেবার কথা শুনে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম-তার হাতে গাড়ির স্টীয়ারিং নিয়ে)! ড্রাগ নেবার বিশয়টা অফিসে জানাজানি হয়ে গেলে আমার অফিস আমাকে এখন কোন রেস্পন্সিবল কাজ দিচ্ছেনা। আমাকে চাকুরিচ্যুতও করছেনা-কিন্তু আমাকে ৫০০০ হংকং ডলার বেতনের যায়গায় শুধু মাত্র ১৫০০ হংকং ডলার পকেট মানি দিচ্ছে। আমাকে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে। আমি এখোন ড্রাগ নিচ্ছিনা...... সু্কসুক'র গলা ধরে এলো কস্টে। হয়ত কান্না করবে...... আমি জিজ্ঞেস করলাম-তানাকা(পুং)র বাড়ি কোথায়? কোথায় থাকে? "তানাকা জাপানী"-বলার সাথে সাথে আমি উচ্চ কন্ঠে বললাম-"সু্কসুক তুমিতো বিরাট কিছু, তোমার শশুর বাড়ি জাপান, তুমি জাপানী পুত্র বধু! এই সুখেইতো তুমি বাকীটা জীবন সুখে কাটিয়ে দিতে পারো।

বাদ দাও তোমার তানাকা(পুং)"! এবার সু্কসুক সত্যি সত্যিই কান্না শুরু করলো। আমি অসস্থিবোধ করছিলাম-আমার ছেলে দেখলে কি ভাববে ভেবে! সু্কসুক'র চিন্তা ভাবনা অন্য দিকে সরিয়ে নেবার জন্য জানতে চাইলাম-"তানাকা এখন কোথায়"? সু্কসুকঃ এই হংকংই থাকে এখান থেকে ২০ কিঃমিঃ দূর। আমিঃ আমাকে নিয়ে যাবে তানাকার কাছে? সু্কসুকঃ আচ্ছা। এখনি চলো। আমি বললাম-অন্য কোন সময় যাব।

আমার ছেলেকে নানিয়ে যাব। আমার মন ভালো নেই। ভালোবাসার কাংগাল সু্কসুক'র করুণ মুখখানা আমাকে খুব কস্ট দিচ্ছে। আমার মনে হচ্ছিল-যদি আমি এমন একটা যাদু দিয়ে সুকসুককে আদর ভালোবাসা দিয়ে তাঁর সব কস্ট ভুলিয়ে দিতে পারতাম...... আমরা চলছি হংকং দেখতে। সাজিদ ছবি তুলছে।

শুধু অপুর্ব সুন্দর স্থাপনা আর মল'র ছবিই নয়-নানান রকমের মানুষের ছবিও তুলছে। হংকং'কে আমার খুব আপন আপন মনে হচ্ছে। অনেক উন্নত দেশের প্রধান প্রধান সিটিতে যখন ঘুরি তখন নিজেকে গাইজীন(বিদেশী) বলে মনে হতো, নিজেকে খুব ছোট মনে হত। কিন্তু হংকং এ ঘুরে একটা মানষিক তৃপ্তি পাচ্ছি, প্রশান্তি পাচ্ছি!কারন হলো-চারিদিকে নজরে পরছে অসংখ্য পরিচিত জিনিস। যেমন শাড়ী পরা ভারতীয় মহিলা, সালওয়ার-কামিজ পড়া শিখ কিম্বা পাকিস্তানী সুন্দরী নারীরা, শেরওয়ানী পরা, মুখে দাড়ি ওয়ালা কিম্বা মাথায় টুপি পরা ভদ্রলোকেরা নিশচই আমার সমগোত্রীয়।

সংক্ষিপ্ত পোশাকে কিম্বা ভ্রমনের পোশাকে শ্বেতরা সবাই যেনো পরিচিত। আমাদের মতই সবাই এসেছে হংকং এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে কিম্বা হতে পারে ওরাও হংকং এর বাসিন্দা। এত মানুষের ভিতরে আলাদা করে নেয়া যায় অসংখ আবাচা, হেন্ড্রিক, এমেকা আজম্বোদের-যারা আফ্রিকা থেকে এসেছে। বিভিন্ন মানুষের প্রাচুর্য্যতা দেখেই বোঝা যায় হংকং এর কসমোপলিটান বৈশিস্ট্য। বন্দরের পাশে একটা বিখ্যাত হোটেল পেনিনসোলা(আমাদের চট্টগ্রামেও পেনিনসোলা নামের একটা উন্নত মানের হোটেল হয়েছে) আর তার বিপরীত দিকের স্পেস মিউজিয়াম দেখতে দেখতে ঘড়ির কাটায় রাত আটটা! আমরা ডিনার করার জন্য সাংরিলা(চায়নীজ সাংরিলা শব্দের অর্থ ভু-স্বর্গ) নামক একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম।

সব টেবিল খাদকদের দখলে। একটি মেয়ে এসে মাথা বো করে এক্টুখানি অপেক্ষা করতে বললো ওয়েটিং স্পেসে। ওয়েটিং স্পেসে কেউ ইচ্ছে করলে ইন্টারনেট/ লোকাল টেলিফোন ইউজ এবং শিশু কিশোরেরা ভিডিও গেম সহ নানান কিছু করতে পারে বিনে পয়সায়। আমাদের আগেও প্রায় জনা বিশের খাদক অপেক্ষা করছে...... পরের কিস্তির জন্য অপেক্ষা করুনঃ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।