সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
জার্ণী টু চায়নাঃ(হংকং)- ৪
অত্যন্ত চাকচিক্যময় ঝলমলে এক নগরীর নাম হংকং। নদীর পাড়ে, পাহাড়ের পাদদেশে আকাশ ছোঁয়া বিশাল বিশাল অসংখ্য দালানের দেশ হংকং-তা ছবি দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু স্বচক্ষে দৃশ্যমান হংকং দেখতে ক্যামন হয়-তা সত্যি লিখে বোঝানো খুব কঠিন। যতই শহরের ভিতরে ঢুকছি-ততই মনোমুগ্ধকর নগরীর সৌন্দর্যে অভিভুত হচ্ছি! হংকং নগরীর অপরুপা রুপ, এই রুপের এক মায়াবী আকর্ষন, সম্পদের জৌলুশতা সবকিছু মিলিয়ে বিশাল চীন সাম্রাজ্যের বিশেষ প্রশাসনিক মর্যাদা সম্পন্ন অংশ হংকং যেনো এক অপরুপা সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত কিশোরী-কিম্বা পরিপুর্ণ এক রমনী! তার রুপের বর্ণনা সত্যি অপরুপ। আমার ধারনা-চীন সরকার যদি হংকং কে আলাদা প্রশাসনিক মর্যাদা না দিতো তাহলে সত্যিই হংকং কে অমর্যাদা করা হতো।
গেলো বিংশ শতাব্ধীর শেষ রোমাঞ্চকর ঘটনা ছিলো এশিয়া থেকে বৃটিশ উপনিবেশবাদের শেষ পাত্তারি গোটানো এবং হংকং চীনের কাছে ফিরে যাওয়া। ভারতীয় উপমহাদেশের মত চীনেও বৃটিশ বেনিয়ারা বেনিয়াতন্ত্র থেকে রাজতন্ত্র কায়েম করেছিল। ১৮৪২ সনে বিখ্যাত আফিম যুদ্ধের পর নানজিং চুক্তির মাধ্যমে বৃটিশ রাজশক্তি হংকং বৃটিশ রাজত্বাধীন করে নেয়। পরবর্তীতে হংকং এর মত চীনের আর একটা অংশ কাউলুন দ্বীপ ১৮৬০ সালে বেইজিং চুক্তির মাধ্যমে বৃটিশ রাজত্বাধীন করে নেয়। চীনের দারিদ্রতার সুযোগে এসময়ে চীন সরকারের সাথে বৃটিশ রাজশক্তি জোর জবরদস্তি চুক্তি মোতাবেক হংকং, কাউলুন এবং এর পার্শবর্তী এলাকা ৯৯ বছরের জন্য বৃটেনের কাছে লীজ দেয়া হয়।
সেই চুক্তি ছিল একটা অসম চুক্তি। শক্তিশালী বৃটিশ রাজশক্তির অনুকুলে সেই চুক্তি করা হয়েছিল। তাই ১৯৪৮ সালে গণচীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে চীন সরকার সেই অসম চুক্তির বিরোধীতা করে আসছিল।
লীজ টার্মস শেষ হয়ে আসার পুর্বেই আশির দশকের শুরু থেকেই চীন এবং সাম্রাজ্যবাদ বৃটিশদের সাথে আলোচনা শুরু হয় হংকং-কাউলুন এবং এর পার্শবর্তী এলাকার ভবিষ্যত নিয়ে। হংকং অধিবাসীরা তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি এবং উতকর্ষতার কথা বিবেচনা করে সমাজতন্ত্রী চীনে যোগদিতে বরাবরই অসম্মতি জানিয়ে আসছিল।
শেষ পর্যন্ত অনেক দেন দরবার করার পর এভাবে সমাপ্তি টানা হল যে-হংকং চীনের কাছে ফিরে যাবে, তবে তাদের একটি "বিশেষ মর্যাদা" দেয়া হবে। সেই বিশেষ মর্যাদা হলো-হংকংকে বলা হবে "হংকং চায়না" এবং হংকং "স্পেশাল এডমিন্ট্রেটিভ রিজিওন" হিসাবে বিবেচিত হবে। এছাড়াও হংকং এর থাকবে বিশেষ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। তবে প্রতিরক্ষা এবং পররাস্ট্রনীতি থাকবে চীনের হাতে। হংকং বাসীরা খুব ভীত ছিল যে-তারা চীনের কাছে ফিরে গেলে তাদের নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা, অর্থনৈতিক এবং নাগরিক সুবিধাধীর মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো-বৃটিশদের অধীনেও থাকাকালীণ হংকং বাসীদের বৃটিশ নাগরিক গণ্য করা হতোনা। তাই চীনের কাছে হংকং'র হস্তান্তরের পুর্বে হংকংবাসীর দাবী ছিল বৃটিশ সরকার যেন হংকং বাসীদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব প্রদান করে। কিন্তু বৃটিশ জাতি কখনো অতবড় মহান কিম্বা ভুল কাজ করেনা। বৃটিশরা আইন পাশ করলো যে-হংকং'র সব চাইতে ধনী ব্যাবসায়ীদের বৃটেনে বসবাসের সুযোগ দেয়া যেতে পারে, কিন্তু নাগরিকত্ব নয়।
বৃটিশরা কী সভ্য জাতি-হংকংকে বৃটিশরা তাদের অংগরাজ্য মনে করবে অথচ হংকং' র অধিবাসীরা বৃটিশ নাগরিক হতে পারেবেনা! হংকং'র সকল বিত্তবান ব্যাবসায়ীরা বৃটেনে ব্যাবসা করতে পারবেন, ইনভেস্টমেন্ট করতে পারবেন-কিন্তু বৃটিশ নাগরিকত্ব পাবার যোগ্য হবেনা।
১৯৯৭ সনের ৩০ জুন হংকং কে আবার চীনের কাছে হস্তান্তর করে। বৃটিশরা এশিয়া থেকে তাদের শেষ উপনিবেশের যবনিকাপাত করতে বাধ্য হয়। কিন্তু বৃটিশরা হংকং ছেরে যাবার পুর্বেই হংকং বাসীদের ভিতর গণচীনের ভিতর থেকেও একটি আলাদা চীনের বীজ বপন করে যায়!
তারই ফলশ্রুতিতে পররাস্ট্র এবং প্রতিরক্ষা ব্যাতীত সকল সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা হংকং প্রশাসনেরই থেকে যায়। যেকোন কারনে যেকোন দেশের নাগরিকদের হংকং যেতে/আসতে হলে হংকং,র ভিসা নিতেই হবে। আবার হংকং বাসীদের চীন ভ্রমন করতেও ভিসার কাছাকাছি একটা হংকং-চায়না সিটিজেন সার্টিফিকেট(ন্যাশনাল আই ডি কার্ড) দেখিয়ে এয়ার টিকেট কিনতে হবে।
হংকং হয়ে চীন ভিজিট করলে অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মতই হংকং বাসীদেরও আলাদা ভিসা নিতেই হবে এবং সব ধরনের ভিজিটরসদেরই চায়নাতে কাস্টমস-ইমিগ্রেশন ফর্মালিটিজ কম্পলিট করতে হবে। বিশয়টা যেনো এক দেশের ভিতর আর একটা দেশ!
প্রথম দিন আমরা ডিনার করি হংকং এর বিখ্যাত এবং বিলাশ বহুল ভাষমান রেস্তোরায়-যার নাম Jumbo. এই রেস্টুরেন্টে রাতে একবার নাখেলে হংকং ভ্রমন জাস্ট বৃথা যাবে। কারন হংকং হারবরের সৌন্দর্য্য, হংকং-কাউলুনের ঐষর্য্য উপলব্ধি করার জন্য এটাই মোক্ষম যায়গা। হংকং অনেকগুলো নামকরা অভিজাত রেস্টুরেন্ট আছে যেমন-Vong, Va Bene, Young Kee, Zen Chn ইত্যাদি।
পরের কিস্তির জন্য অপেক্ষা করুনঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।