সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
জার্ণী টু চায়নাঃ(হংকং)-২
চার বছর পর আবার ড্রাগন এয়ার'এ আমার জার্ণী। ঢাকা হংকং রুটে ৭৯ সন থেকে শুরু করে এই এয়ার লাইন্স বেশ ব্যাবসায়ীক সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমি আগেই জেনেছিলাম ড্রাগন এয়ার'এ বাংলাদেশ বিমানের প্রাক্তন সিনিয়র পাইলট ক্যাপ্টেন সাঈদ জয়েন করেছেন-যার সাথে আমার অনেকদিনের পরিচয়। কয়েক মাস পুর্বে ড্রাগন এয়ার কর্তিপক্ষ বিভিন্ন কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের এবং তাঁদের কর্পোরেট ক্লায়ান্টদের নিয়ে বিজনেস ডেভলপমেন্ট পার্টির আয়োজন করেছিল হোটেল রেডিসনে। ক্যাপ্টেন সাঈদ এবং বাংলাদেশে ড্রাগন এয়ারের জি এস এ লংকা-বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মাহাবুবুল আনাম(মাহাবুব আনাম, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট)আমন্ত্রনে আমি এবং আমার কোম্পানীর অন্য ২ জন পরিচালক অংশ নিয়ে কর্তিপক্ষের বিভিন্ন আলোচনায় জানতে পারলাম-ড্রাগন এয়ার'র সবকটা উড়োজাহাজ নতুন প্রজন্মের।
ইতোমধ্যেই ১৬ টি উড়োজাহাজ নিজস্ব মালিকানায় এবং ১৪ টি লং টার্মস লীজে চালিয়েও শুধুমাত্র প্রফেশনালিজমের কারনে একটা ভালো অবস্থানে চলে এসেছে। ক্যাপ্টেন সাঈদ জানালেন-মার্চ ২০০৯ থেকে ড্রাগন এয়ারের নাম পরিবর্তিত হয়ে ক্যাথে-প্যাসিফিক ড্রাগন এয়ার হবে। কারন মার্চ মাস থেকে ক্যাথে প্যসাসিফিক এয়ার লাইন্স এবং ড্রাগন এয়ার একত্রিভুত হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই হংকং এয়ার ক্যাথে প্যাসিফিক এর সাথে মার্জ করেছে। এই তিনটি এয়ার লাইন্সের সমন্বয়ে ক্যাথে প্যাসেফিক এয়ার লাইন্স পৃথিবীর ৪র্থ বৃহত্তম এয়ার লাইনে পরিনত হবে।
এদের মোট এয়ারক্রাপ্টের সংখ্যা যথাক্রমে- ক্যাথে প্যাসেফিক ১৪০ টি, হংকং এয়ার ৫২ টি এবং ড্রাগন এয়ার ৩০ টি= ২২২ টি! বর্তমানে ড্রাগন এয়ারের ঢাকা-হংকং রুটে সপ্তাহে ৫ দিন ফ্লাইট পরিচালনা করে। একত্রিভুত হবার পর প্রতি দিন ঢাকা-হংকং ক্যাথে-ড্রাগন এয়ারের ফ্লাইট পরিচালিত হবে। বর্তমান বৈশ্বয়ীক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পরেছে এয়ার লাইন্স ব্যাবসাতেও। তাই এখোন অনেক বড় বড় এয়ার লাইন্স খরচ সংকুলান এবং ব্যাবসা টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্নতর ব্যাবস্থা নিতে বাধ্য হচ্ছে।
ড্রাগন এয়ারের মার্কেটিং পলিসি আমার খুব ভালো লেগেছে।
৩/৪ মাস পুর্বে ক্যাপ্টেন সাঈদ ব্যক্তিগত ভাবে ড্রাগন এয়ারের হয়ে আমাকে একটা চিঠি দিয়েছিলেন-এই এয়ার লাইন্সে তাঁর জয়েন করার বিশয়ে এবং আমি সহ আমার কোম্পানীর এবং পরিচিত জনেরা যারা রুটে বিমান ভ্রমন করবেন-তারা যেনো তাঁদের আতিথিয়তা গ্রহন করেন-সেই অনুরোধ জানিয়ে!ক্যাপ্টেন সাঈদের মত অন্যান্য সকল পর্যায়ের অফিসিয়ালগনই অমন করে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ করেন-তাদের সার্ভিস নেবার জন্য। এবারের ড্রাগন এয়ারে ভ্রমন ক্যাপ্টেন সাঈদের সেই সুন্দর চিঠির ফলশ্রুতি। আমার ছেলে উড়োজাহাজের ককপিটে বসে কিছুটা সময় কাটাতে চায়-তা ক্যাপ্টেন সাঈদকে বলেছিলাম। ফ্লাই করার কয়েকদিন পুর্বেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম-যেদিন ক্যাপ্টেন সাঈদ ফ্লাইট পরিচালনা করবেন-সেই দিনই আমার ছেলেকে নিয়ে জার্ণী করব। ক্যাপ্টেন সাঈদ এই এয়ারক্রাফটের পাইলট, তিনি আমার ছেলের ইচ্ছে পুর্ণ করেছিলেন।
ককপিট থেকে বেড়িয়ে ক্যাপ্টেন সাঈদ মাঝে মাঝে নিজেই যাত্রীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন, যাত্রীদের কথা শুনছেন-যা সকলের প্রশংসা পেয়েছে। ফ্লাইট পরিচালনা টীমের সকলেরই আন্তরিকতা সকল যাত্রীদের মুগ্ধ করেছে।
এই ফ্লাইটের বেশীরভাগ যাত্রী ব্যাবসায়ী। কিছু টুরিস্টও আছেন। আমার সীট পরেছে তিন জনের সারিতে।
আমার ছেলের পাশে বসেছেন একজন কুচকুচে কালো কিন্তু অত্যন্ত রুপ সচেতন শ্রীলংকান মহিলা। যার বয়স ষাট উর্ধ। তিনি কতক্ষণ পর পরই তার ব্যাগ থেকে ছোট্ট আয়না বের করে লিপিস্টিক সহ অন্যান্য প্রসাধনী লাগাচ্ছিলেন! সাজিদের সাথে তার বেশ ভাব জমেছে। ওরা বিরামহীন কথা বলে চলছে। জানতে পারলাম-তার নাম কৃপাল ফার্নেডো(শুধু নাম শুনে বোঝার উপায় নেই-নামধারী পুরুষ না মহিলা)।
হংকং এ তাদের পারিবারিক রেস্টূরেন্ট ব্যাবসা। তিনি সাজিদের অনেকগুলো ছবি তুলে নিলেন একক এবং যৌথ ভাবে। আমাদেরকে তার নেম কার্ড দিলেন খুব আন্তরিকতার সাথে। এই ফ্লাইটে অনেকজন আফ্রিকা অঞ্চলের যাত্রী। একজন "মিঃ খেমা আবাচা" নামের বিশালদেহী(দেখতে জনাথন সুইপ্টের সেই গালিভার'র মত)নাইজেরিয়ান যাত্রী বেশ কয়েকবার আমার সাথে যেচে কথা বললেন।
আমাকে তার বিগ সাইজের ফোল্ডিং নেম কার্ড দিলেন এবং আমার সাথে হ্যান্ড শেক করলেন। আমার হাতে হাত মিলানোর সময় মনে হল আমি কোন মানুষের হাত ধরিনি-যেনো একটা ট্রাকের টায়ার ধরেছি! অমন শক্ত আর মোটা হাত আমি জীবনে দেখিনি। আমি নেম কার্ডে দেখলাম তাতে তার লন্ডন, দুবাই, সিংগাপুর এবং হংকং অফিসের ঠিকানা দেয়া আছে। আমি কি করি, হংকং গিয়ে কোথায় থাকব-ইত্যাদি জানতে চাইলেন মিঃ খেমা। আমি কৌশলে তার বেশ কিছু অপ্রসাংগীক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছিলাম।
আমি অনেকগুলো কারনে নাইজেরিয়ানদের অপছন্দ করি। '৯৮ সনে হজ্বের সময় দেখেছি ওরা দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে। তবে দলবদ্ধ হয়ে চলার সময় ওরা হেটে যায়না, কিছুটা দৌড়ে চলে। চলার সময় দুই হাত আড়াআড়ি ভাবে বুকের কাছে ছড়িয়ে দিয়ে বিশেষ একটা স্টাইলে দুলে দুলে এবং গন্ডারের মত খুব দ্রুত "ভোশ! ভোশ!!" করে একধরনের শব্ধ করে। অনেকটা রাশান, প্রাক্তন পুর্ব জার্মানী, পোল্যান্ডের সৈন্যদের মত মুভিং প্যারেড স্টাইলে চলে।
আমিসহ আরো কয়েকজন ওদের কনুইর গুতোয় মাটিতে পরে যাই, তখন আমাদেরকে পায়ে মাড়িয়েই ঐ নাইজেরিয়ানগুলো ভোশ! ভোশ!! শব্ধ করে চলে গিয়েছিল!
সারে তিন ঘন্টায় আমরা পৌছে যাই হংকং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট(HKIA)। HKIA অত্যাধুনিক এবং বিশ্বের মাত্র কয়েকটা অত্যাধুনিক এয়ারপোর্টের সমতুল্য করে পুণঃনির্মান করে ১৯৯৮ সালে উদ্ববোধন করা হয়। পুর্বে এই এয়ারপোর্টের নাম ছিল কাই টাক এয়ারপোর্ট। এই এয়ারপোর্ট সমগ্র চীন, পুর্ব এশিয়া এবং দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার মেইন গেটওয়ে বললে ভুল হবেনা। এই এয়ারপোর্ট প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে এ পর্যন্ত তিন বার সারা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সার্ভিস এয়ারপোর্ট হবার গৌরব লাভ করেছে।
HKIA বিশ্বের অন্যতম ব্যাস্ততম এবং ২য় বৃহততম বিজনেস এয়ারপোর্ট। সন্দেহজনক কারনে বাংলাদেশী সবুজ পাসপোর্টধারীদের মোটামুটি হয়রাণীর শিকার হতে হয় এখানকার ইমিগ্রেশনে। আমার পাশেই লাইনে দাড়িয়েছেন মিঃ খেমা আবাচা। তিনি জান্তে চাইলেন-আমি কোথায় থাকবো? তাঁর জন্য অপেক্ষমান গাড়িতে লিফট নেবো কিনা? আমি ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম-আমার জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছে।
জানুয়ারী মাসে হংকং'র আবহাওয়া আমাদের দেশের জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী মাসের চাইতে কিছুটা বেশী ঠান্ডা।
অর্থাৎ ১১-১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আজ তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চমতকার আবহাওয়া। আমাদের জন্য এয়ারপোর্টের বাইরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল আমার মাদার বিজনেস কোম্পানীর হংকং অফিসের পক্ষে মিজ সুকসুক। পুরো নাম সুখসুখ সাতুরিয়া।
সুকসুক থাই নাগরিক-যার সাথে হংকং'এ লাস্ট ৪ বছর আগেও কয়েকবার দেখা হয়েছে। ওদের পরিবার সম্পর্কেও অল্প বিস্তর জানা হয়েছিল। আমার এখনো মনে আছে-সুকসুকের পিতার নাম সুরাসাক সাতুরিয়া। ওর আরেকজন বোনের নাম পইপই। এই ৪ বছরে সুকসুক অনেক মুটিয়ে গিয়েছে এবং অত্যাধিক চুরুট পানে এবড়োথেবড়ো বড় বড় দাঁতগুলো আধা পাকা জাম রঙ হয়ে গিয়েছে।
আগের মত সেই চঞ্চলতাও এখোন আর নেই। এয়ারপোর্ট থেকে হংকং সিটির দুরত্ব ৩১ কিলোমিটার। মিজ সুকসুক আমাদের নিয়ে সোজা চলে যায় আমাদের জন্য নির্দিস্ট হোটেলে।
(আপডেটঃ আমি আগেই লিখেছিলাম-এই ভ্রমন সিরিজ গত বছরের লেখা। বর্তমানে হংকং এয়ার লাইন্স, ড্রাগন এয়ার এবং ক্যাথে পায়সিফিক এয়ার লাইন্স এক্ত্রিভুত হয়েগিয়েছে।
এখন সপ্তাহের প্রতি দিনই ঢাকা-হংকং ফ্লাইট আছে। এছারাও ওরা ঢাকা-কাঠমুন্ডু ফ্লাইট চালু করেছে সপ্তাহে ৫ দিন। )
পরের কিস্তির জন্য অপেক্ষা করুনঃ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।