শ্রদ্ধা আর মমতাই তোমাকে জয়ী করতে পারে; তুমি তোমার জ্ঞান প্রয়োগ কর।
দিবি ন কেতুরধি ধায়ি হর্যতো বিব্যচদ্বজ্রো হরিতো ন রংহ্যা।
তুদদহিং হরিশিপ্রো য আয়সঃ সহস্রশোকা অভবদ্ধরিম্ভরঃ। ।
"আকাশে সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল কিরণ স্থাপিত হলো, সে যেন আপন বেগে সমস্ত দিক পরিব্যাপ্ত করল।
সুগঠন হনুবিশিষ্ট সোমরস পানকারী ইন্দ্র অয়োময় বজ্র দ্বারা বৃত্রকে নিধন করার কালে অপরিসীম দীপ্তি প্রাপ্ত হলেন। "
—ঋগ্বেদ সংহিতা, মণ্ডল ১০, সূক্ত ৯৬, ঋক্ ৪
আর্যদের ধর্মগ্রন্থ ঋগ্বেদ সংহিতায় সর্বাধিক উল্লেখিত ধাতুটি হচ্ছে সুবর্ণ; এরপরই আসে রহস্যময় ধাতু অয়সের নাম, বেশ অনেকবার, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে, কিন্তু দ্ব্যর্থহীন কোনো নিদর্শন ছাড়াই যাতে বোঝা যেতে পারত সেটি কী ছিল।
অয়স কখনো এসেছে দেবরাজ ইন্দ্রের বজ্রের কঠোরতায়, কখনো বা সোমরস পানে হৃষ্ট ইন্দ্রের নিজেরই অয়োবর্ম পরিহিত রূপে। এসেছে এটি সেসব দুর্গের উপাদানে যা নির্মাণে যা করত দস্যুরা, দৃশ্যগোচর হয়েছে তা ইন্দ্র ও সোমের অয়োনির্মিত বাসগৃহে। এমনকি মিত্র ও বরণেরও ছিল অয়োস্তম্ভবিশিষ্ট রথ, অগ্নি ও মারুতের ছিল অয়োময় দন্তরাজি, অশ্ব ও সূর্যের ছিল হিরণসুদৃঢ় অয়োহনু।
উরুর বর্ণনায় ছিল অয়সের কথা, ছিল তা যজ্ঞাশ্বের পদ-নির্দেশক হিসেবে, চঞ্চু, তরবারি, সুঁচালো ডগা, শর, পরশু, কুম্ভ কিংবা ছোরার ধাতব উপাদানে।
কিন্তু এসব বর্ণনা থেকে সুনির্দিষ্টভাবে পরিস্ফূট হয় না অয়সের মানে। এটি হতে পারে তাম্র, ব্রোঞ্জ বা লৌহ, কিংবা তিনটেই। যজ্ঞাশ্বের পদ যদি নির্দেশ করে তার নাল, তাহলে অয়সের পক্ষে লৌহ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, কারণ অশ্বের নাল সচরাচর হয়ে থাকে লৌহনির্মিত। কিন্তু সমস্যা বাঁধে আমরা যখন দৃষ্টিপাত করি ইন্দ্রের কঠোর বজ্রের দিকে, যা স্বর্ণাভ সুবর্ণদীপ্ত, এবং ইন্দ্রের হস্তে হরিদবর্ণীয়।
আর অস্তগামী সূর্যের কিরণে দীপ্ত, অগ্নি ও মারুতের রথের যে অয়োস্তম্ভ, তা নিশ্চয়ই ছিল লোহিত বর্ণের, এবং এর ফলে অয়স হয়ে থাকবে লোহিতুষ্ণ কোনো ধাতু, সন্দেহাতীতভাবে লৌহ নয়। এছাড়া শর, পরশু, কুম্ভ সবই নির্মিত হতে পারে তামা, ব্রোঞ্জ বা লৌহ থেকে।
তবে ঋগ্বেদ পরবর্তী দুটো গ্রন্থ, অথর্ব বেদ এবং যজুর বেদে অয়সকে কৃষ্ণ অয়ো এবং লোহিত অয়ো'তে বিভক্ত করা নিঃসন্দেহে কৌতূহলোদ্দীপক; এতে প্রতীয়মান হয় অয়স বিভিন্ন ধাতুর একটি সাধারণ পরিচায়ক নাম, কেবলমাত্র লৌহ নয়।
সংস্কৃতের অয়স কখন, কীভাবে বাংলায় লৌহ হয়ে উঠল, সে ব্যাপারে হয়তো চলবে আরো অনুসন্ধান এবং বিতর্ক! তবে ঋগ্বেদের অয়স দ্ব্যর্থহীনভাবে কোনোদিন লৌহ প্রমাণিত হলে, উপমহাদেশের ইতিহাস সন্দেহাতীতভাবে নতুন করে লিখতে হবে—শব্দের ইতিহাস থেকে সে এক রোমাঞ্চকর, বিতর্কিত মানব ইতিহাসের কথা!
অয়স থেকে উদ্ভূত কিছু শব্দ
অয়স: লৌহ
অয়স্কঠিন: লৌহদৃঢ়
অয়স্কর্ষণী: চৌম্বকীয়, চুম্বকীয় শক্তি
অয়স্কংস, অয়স্কুম্ভ: লৌহপাত্র, বাত্যাচুল্লি
অয়স্কান্ত: চুম্বক
অয়স্কার: লৌহকার, কর্মকার
অয়স্কুশা: আংশিক লৌহময় রজ্জু
অয়স্ক্বতি: চিকিৎসশাস্ত্রে লৌহের প্রয়োগ
অয়স্তাপ: লৌহ উত্তপ্তকারী
অয়োকায়: লৌহশরীর বিশিষ্ট
অয়োঘন: লোহার মুগুড়; হাতুড়ি
অয়োদংষ্ট্রা: লৌহদন্তের অধিকারী
অয়োময়: লৌহনির্মিত, লৌহের ন্যায় কঠোর
অয়োমল: মরিচা
অয়োমুখ: যে শরের মুখ বা ডগা লোহার তৈরী
অয়োহনু: লৌহচোয়াল
তথ্যসূত্র:
১। http://en.wikipedia.org/wiki/Rigveda
২।
Iron in Early Indian Literature, by Dilip K Chakrabarti
৩। A Sanskrit-English dictionary: etymological and philologically arranged, by Monier Monier-Williams, Ernst Leumann, Carl Cappe
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।