জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে সরকার এবং বিরোধী দলের সংলাপ হতে পারে সহসাই। দু-এক দিনের মধ্যেই অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসে সংলাপের পর্দা উন্মুক্ত করতে পারে দুই দল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে পৃথক চিঠিতে সংলাপের মাধ্যমে দুই পক্ষকে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছেন। চিঠিতে জন কেরি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংকট সমাধানে সরকার ও বিরোধী দল এখনো সমঝোতায় না আসায় যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। তারা আশা করেন অচিরেই দুই পক্ষ সংলাপে বসে সমঝোতায় আসবে এবং সবার অংশগ্রহণে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন টেলিফোনে দুই নেত্রীকে প্রায় একই কথা বলেছিলেন। সেই ফোনের পর জন কেরির চিঠি দুই পক্ষের জন্য আরেক দফা চাপ।
এদিকে ঢাকার পশ্চিমা ও গণতান্ত্রিক দেশের কূটনীতিকরাও সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপে বসে পথ বের করতে সরকারকে চাপ দিচ্ছেন। একই সঙ্গে বিরোধী দলকেও নির্বাচনে অংশ নিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছেন। সূত্র জানায়, তাদের একটিই দাবি সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, তারা সংলাপে বসতে প্রস্তুত। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্তজন হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, বিরোধী দলের সঙ্গে সরকারের সহসাই সংলাপের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তবে অনানুষ্ঠানিক সংলাপের পর সংসদে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হতে পারে। কাজী জাফর উল্লাহর সঙ্গে কূটনীতিকরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, রবিবার দলের দায়িত্বশীল এক নেতা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা এখন সবার প্রত্যাশা। একটি উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি তো সংলাপ চেয়েছি। উদাত্ত আহ্বান জানালাম। কিন্তু বিরোধী দলের নেতা তাতে সাড়া না দিয়ে উল্টো আলটিমেটাম দিলেন।
সংলাপের পথ বন্ধ করলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবুও সংলাপ হতে পারে। ১২ তারিখ সংসদ বসছে তারা এসে আলোচনা করুক। দলের ওই নেতা তখন বলেন, আগের কথা বাদ দিয়ে হলেও বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি সবার দৃষ্টি ও প্রশ্নকে সামনে নিয়ে সংলাপটা হতে পারে। সূত্র জানায়, এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক।
সূত্র জানায়, সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। ১২ তারিখ সংসদ বসার আগেই বুধবার দুই পক্ষের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হতে পারে। তারপর সেটি সংসদে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় গড়াতে পারে। এদিকে সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চলমান পরিস্থিতির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে বন্ধুপ্রতিম বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ভারত সফরকালে সেখানকার দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে আসেন।
রবিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরেন আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ। দেশে ফিরেই সোমবার সকালে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ এমপি দিলি্ল যান সেখানকার ওপর মহলের আমন্ত্রণে। সূত্র জানায়, ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু প্রণব মুখার্জির আগ্রহেই তোফায়েল আহমেদের এই দিলি্ল সফর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতেই তিনি গেছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়েই কথাবার্তা হবে বলে জানান দলের দায়িত্বশীলরা।
এদিকে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সংবিধান থেকে একচুল না নড়ার সিদ্ধান্তে শেখ হাসিনার জোট সরকার অনড়। এমনকি বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই আসতে হবে। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচনকে তাদের প্রভাবমুক্ত রাখার সিদ্ধান্তেও অটল থাকবেন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সর্বাত্দক সহযোগিতা দেওয়া, নির্বাচন কমিশনের হাতে নির্বাচনকালীন প্রশাসনের দায়িত্ব হস্তান্তর, নির্বাচন কমিশন আলোচনার ভিত্তিতে পুনর্গঠন এমনকি সংসদ ভেঙে দিতেও রাজি হতে পারেন শেখ হাসিনা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারে বিরোধী দলের মন্ত্রী রাখার বিষয়টি বিবেচনা করবেন না।
সরকারি মহলের ঊধর্্বতন ওই ব্যক্তি আরও জানান, এক কথায় শেখ হাসিনা সংবিধানের বাইরে যেমন যাবেন না তেমনি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান। এদিকে দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, কূটনীতিক মহলসহ দলের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী বিএনপি হাইকমান্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে। তাদের কথা একটাই আলোচনায় বসে সংবিধানের আওতায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের রূপরেখা নির্ধারণ করে নির্বাচনে যোগদান করা। কিন্তু বিএনপির একটি বড় অংশই মনে করেন, শেখ হাসিনার পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে নির্বাচনে যাওয়া হবে বড় ভুল। আত্দঘাতী।
কিন্তু পরামর্শকদের যুক্তি, রুটিনওয়ার্কের দায়িত্ব থাকা একটি সরকার গণরায় উল্টে দিতে পারবে না। কারণ গণতান্ত্রিক দুনিয়ার দৃষ্টি আর পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতেই হবে নির্বাচন। অনেকেই বলছেন শেষ পর্যন্ত সংবিধান রাজনীতি ও নির্বাচনকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় সেটিই দেখার বিষয়। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে রবিবার জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের সঙ্গে বৈঠক করেছে। তার সঙ্গে ছিলেন কাজী ফিরোজ রশীদ।
প্রতিনিধি দল নির্বাচনের পরিবেশ, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন করেছে। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের সম্ভাবনাও জানতে চেয়েছেন। তারা জানান, নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক হিসেবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করবেন। সোমবার প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছে। সব দল ও ইসির সঙ্গে তারা বৈঠক করবেন।
এর আগে ঢাকার ১৬ দেশের কূটনীতিক ও দাতাসংস্থার প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে খুঁটিনাটি অনেক কিছুই জানতে চেয়েছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব মহলই চান সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা এবং সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।