হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিকে নিয়ে চলছে টানাটানি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অংশ নেওয়া এবং না নেওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ টানাটানি শুরু করেছে। শাসক দল আওয়ামী লীগ যে কোনো মূল্যে জাতীয় পার্টিকে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়াতে চায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগকে একঘরে করতে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দুই দলের টানাহেঁচড়ায় সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে অনড়। কারণ গত পাঁচ বছরে অপমান-অপদস্থের জবাব দিতে চান নির্বাচনে অংশ না নিয়ে।
জানা যায়, সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এরশাদসহ দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এদিকে দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী বিএনপিবিহীন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষে। তারা মনে করছেন,নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিন দিন ধরে দলের নেতা-কর্মীরা সাবেক রাষ্ট্রপতির প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে যাচ্ছেন। তারা বিএনপিবিহীন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার জন্য পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। গতকাল এরশাদ তার বাড়িতে আগত নেতা-কর্মীদের বলেছেন, তোমরা আমার সন্তানের মতো, তোমাদের কথা দিচ্ছি, আমার দলের নেতা-কর্মী ও দেশের মানুষের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে যাব না। প্রয়োজনে জেলে যাব, তার পরও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে কোনো পাতানো নির্বাচনে যাব না। জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা বলছেন, মাঠে বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও আওয়ামী লীগও তাদের ছাড় দেবে না। যেভাবে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে যা করেছিল, একই অবস্থা এবারও হতে পারে। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলই জাতীয় পার্টিকে পেতে চাচ্ছে। কিন্তু স্যার (এরশাদ) চাচ্ছেন দেশবাসীকে। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান পার্টির চেয়ারম্যান গোটা জাতিকে বহুবার পরিষ্কার করেছেন। তিনি বলেছেন, একক নির্বাচনের কথা। এখনো মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিচ্ছেন না কেন- জানতে চাইলে বলেন, এ ঘোষণা দেওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিএনপি ছাড়া জাতীয় পার্টি অংশ নেবে কি না- জানতে চাইলে বলেন, সব দলের অংশগ্রহণসাপেক্ষেই জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে। জানা যায়, জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এইচ এম এরশাদের কদর বাড়ছে প্রধান দুটি দলের কাছে। আওয়ামী লীগ চায় বিএনপি নির্বাচনে না এলে এরশাদ এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিক। আর বিএনপি চায় মহাজোট থেকে ছোটাতে। আগামী দিনের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতেই এরশাদকে নিয়ে আজ টানাহেঁচড়া শুরু হয়েছে। কিন্তু সাবেক এই রাষ্ট্রপতিকে মহাজোট সরকার মূল্যায়ন না করায় বেঁকে বসেছেন তিনি। পার্টির নেতা-কর্মীরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে যে জোট এরশাদকে দলে ভেড়াতে পারবে ক্ষমতারোহণের ক্ষেত্রে তাদের পাল্লাই ভারী হবে। কারণ '৯১-পরবর্তী সব নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি বরাবরই ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। মোট কথা এরশাদ এবারও তুরুপের তাস। কেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন- জানতে চাইলে কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, জাতীয় পার্টিকে মহাজোটের ৬০টি আসন ও আনুপাতিক হারে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার শর্ত ছিল। শর্ত রাখেনি। নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ৪৮টি আসন দেওয়া হলেও ১৮টিতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেয়। নির্বাচনের পর স্যারের (এরশাদ) ছেড়ে দেওয়া কুড়িগ্রামের আসনটি উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছিনিয়ে নেয়। সুনামগঞ্জ-৪ আসনে জাপার এমপি মমতাজ ইকবালের মৃত্যুতে কর্মীরা চেয়েছিলেন উপনির্বাচনে এটি জাতীয় পার্টি পাবে। আওয়ামী লীগ সেখানেও সৌজন্যতা দেখাল না। মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির একজন মাত্র ঠাঁই পেলেন। পাঁচ বছরে স্যার একটিমাত্র অনুরোধ করেছিলেন অ্যাডভোকেট শেখ সিরাজুল ইসলামকে বিচারপতি করতে। রাখেনি। খুনের মামলা থেকে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেলেন। সাত হাজার রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার হলো। স্যারের (এরশাদ) বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলার একটিও নিষ্পত্তি হলো না। জাতীয় পার্টির কাউকে একটি রাষ্ট্রদূত বা হাইকমিশনার করে বাইরেও পাঠানো হলো না। জেলা পরিষদগুলোয় আওয়ামী লীগ দলীয় লোকদের বসিয়ে দিল। জাতীয় পার্টির একজন লোককেও জেলা পরিষদ প্রশাসক করা হলো না। সব কিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জাতীয় পার্টি কেন নির্বাচনে যাবে না। বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির কী সম্পর্ক- জানতে চাইলে প্রেসিডিয়াম সদস্যরা বলেন, বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোনো সম্পর্কই নেই। বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগ অনায়াসে ক্ষমতায় চলে আসবে। স্যার আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় বসানোর সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার হতে চান না। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিনয়ের সঙ্গে জানান, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি কিছুই বলবেন না। আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদও কথা বলতে অসম্মতি প্রকাশ করেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।