রাজধানী ঢাকাকে এক সময় বলা হতো মসজিদের নগরী। একের পর এক গার্মেন্ট স্থাপন সে পরিচিতিকে পাল্টে দিয়েছে। এখন যদি কেউ ঢাকাকে গার্মেন্টনগরী বলে অভিহিত করেন তবে তা হবে বাস্তবতার সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। রাজধানীতে এ মুহূর্তে এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে গার্মেন্ট নেই। রামপুরা, বাসাবো, বনানী, উত্তরা, তেজগাঁও, মিরপুর, শ্যামলী, যাত্রাবাড়ী, গুলশান, বাড্ডা, ইস্কাটন, মৌচাক, মালিবাগ, শংকর, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য গার্মেন্ট। ব্যবসা বৃদ্ধি পাওয়ায় কোনো কোনো উদ্যোক্তা রাজধানীর বাইরে কারখানা স্থাপন করলেও রাজধানীর কারখানাটি সরাননি। রাজধানীতে একের পর এক গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠার ফলে বাড়তি জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে। রাজধানীর গার্মেন্টগুলোতে অন্তত ১৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত। এদের একাংশ পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানীতে অবস্থান করছে। ফলে গড়ে ৩০ লাখ মানুষের বোঝা বহন করতে হচ্ছে রাজধানীকে। নানা স্থানজুড়ে অসংখ্য কারখানা থাকায় গার্মেন্ট পণ্য পরিবহনের গাড়ি রাজধানীর সড়কগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। আবাসন সমস্যাসহ রাজধানীর গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের জন্যও দায়ী গার্মেন্টশিল্প কেন্দ্রীভূত হওয়ার ঘটনা। রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতেও তা ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করছে। রাজধানী থেকে গার্মেন্টশিল্প অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হলেও এ শিল্পের মালিকরা সেদিকে নজর দিতেও রাজি নন। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা বলছেন, তারা রাজধানীতে থাকতে চান না। সরকারি সহায়তা পেলে তারা রাজধানী থেকে কারখানা সরিয়ে নিতেও রাজি। সরকার মুন্সীগঞ্জের বাউনিয়াতে গার্মেন্টশিল্পের জন্য জমির ব্যবস্থা করলেও এ জমির দাম বেশি ধরা হয়েছে এমন অভিযোগও তুলেছেন তারা। গার্মেন্ট মালিকরা জমি ক্রয়ে সহজ শর্তে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ সহায়তা চেয়েছেন। ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী রাজধানীর অধিকাংশ কারখানাই পুরনো। সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর সরকারের পক্ষ থেকে রাজধানীর ৩৫০০ ভবন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু কারখানা ত্রুটিপূর্ণ। পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এসব গার্মেন্ট সরিয়ে নেওয়া দরকার। সময় বেঁধে নিয়ে গার্মেন্টশিল্পকে পুরোপুরিভাবে ঢাকার বাইরে নেওয়ার কথা ভাবতে হবে। রাজধানীর বাইরে গার্মেন্ট পল্লী সৃষ্টি করে সেখানে স্বাস্থ্যসম্মত কারখানা ও শ্রমিকদের আবাসনের সুযোগ সৃষ্টিতে উদ্যোগ নিতে হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।