আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনড় অবস্থানে বিএনপি সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা

আগামীকাল ২৯ ডিসেম্বরের বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দেয়নি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল ডিএমপির পক্ষ থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, নাশকতার আশঙ্কায় নয়াপল্টনে গণজমায়েতের অনুমতি দেওয়া হবে না। এদিকে বিএনপি যে কোনো মূল্যে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে অনড় অবস্থান নিয়েছে। সারা দেশ থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা এরই মধ্যে বাস, লঞ্চ, নৌকা, ট্রেন, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন উপায়ে ঢাকা আসতে শুরু করেছেন। তবে মহাসড়কের পথে পথে পুলিশ অবস্থান নিয়ে তাদের যানবাহনে তল্লাশি ও সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করছে। পুলিশের এমন বাধাবিপত্তি পেরিয়ে যারা ঢাকায় ঢুকতে পারছেন, তারা অবস্থান নিচ্ছেন আত্দীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও দলীয় নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়িতে। আগামীকালের এ সমাবেশে জামায়াত আলাদাভাবে ভোরেই যোগ দেবে। পল্টনে বড় ধরনের মিছিল নিয়ে অথবা আলাদাভাবে নানা কৌশলে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে ১৮-দলীয় জোট নেতাদের।

জানা গেছে, 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মকাণ্ডের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রস্তুতি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন সবচেয়ে বেশি। রাজধানীতে এখন তাদের শক্ত অবস্থান। প্রবেশপথগুলোয় পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প বসিয়ে চলছে তল্লাশি ও নজরদারি চলছে। গত রাত থেকেই গোটা রাজধানী ও আশপাশ এলাকার চারদিক ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয়।গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিজয়নগর মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। বিজিবির বেশ কয়েকটি গাড়িও বিএনপি কার্যালয়ের অদূরে রাখা হয়েছে। বরাবরের মতো গতকালও কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল অবরুদ্ধ। নয়াপল্টনের আশপাশে কাউকেই দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ। সমাবেশের জন্য মঞ্চ করার প্রস্তুতিও দেখা যায়নি। অনুমতি না পেলেও আজ বিকাল থেকে নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

প্রস্তুত বিএনপি : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন জোটের নেতা-কর্মীরা। বিএনপির দাবি, গতকাল পর্যন্ত রাজধানীর প্রবেশমুখ দিয়ে লক্ষাধিক নেতা-কর্মী প্রবেশ করেছেন। গতকাল এক ভিডিওবার্তায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নয়াপল্টনে সমবেত হয়ে কর্মসূচি সফল করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত সমাবেশ করতে না পারলে বিকল্প ব্যবস্থারও চিন্তাভাবনা চলছে। বেগম জিয়া নিজেই সংবাদ সম্মেলন করে ১ জানুয়ারি থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত অসহযোগ কিংবা গণকারফিউ কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারেন।

তিন দিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসা ও কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দলের নেতা-কর্মীরা বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারছেন না। জানা গেছে, আগামীকালের সমাবেশে যোগ দেবেন বেগম জিয়া। তবে দলের কাছে খবর রয়েছে, বেগম জিয়াকে সমাবেশে যোগ দিতে বাধা দিতে পারে পুলিশ। প্রয়োজনে তাকে গ্রেফতারও করা হতে পারে। এদিকে সমাবেশ সফল করতে গোপনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুতি সভা করেছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো। একইভাবে জামায়াতসহ জোটের শরিক দলগুলোও পৃথকভাবে প্রস্তুতি সভা করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান অভিযোগ করেন, ১৮ দলের গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আসতে না দিতে সরকার গণপরিবহন বন্ধ করছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। ঢাকায় মানুষ আসতে দিচ্ছে না। এভাবে গোটা দেশকে তারা অবরুদ্ধ করে ফেলছে।

পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে, বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে দলে দলে রওনা হচ্ছেন ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা। আগামীকাল তাদের ঢাকায় প্রবেশ করতে না দেওয়ার আশঙ্কায় আগেভাগেই তারা ঢাকার ভেতর অবস্থান নিচ্ছেন। পুলিশের সূত্র জানায়, রাজধানীর এলাকা ধরে ধরে ব্লক দিয়ে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। বিএনপি-জামায়াতের নেতা ও 'বিপজ্জনক' কর্মীদের নামের তালিকা নিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বাসাবাড়ি ছাড়াও তাদের আত্দীয়স্বজনদের বাসায়। এ ছাড়া রাজধানীর সব বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের দেহ আর মালামাল খুলে চলছে পুলিশ ও র্যাবের তল্লাশি। কোনো কোনো স্থানে যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে পুলিশ জেরা করছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানের ছোট-বড় আবাসিক হোটেল পুলিশের নির্দেশে বোর্ডারশূন্য করা হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের আগে এসব হোটেলে কোনো বোর্ডার রাখার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ সূত্র জানায়, বিএনপিকে গণজমায়েতের অনুমতি না দেওয়ার পরও দলটি ঘোষণা দিয়েছে তারা যে কোনো মূল্যেই সমাবেশ করবে। সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা করা দরকার, পুলিশ তা-ই করবে। এ ধরনের নির্দেশনা রয়েছে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর। পুলিশ পুরো বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছে। এদিকে ঢাকা মহানগর ও আশপাশের জেলা নেতাদের সঙ্গে বেগম জিয়া নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। ফোনে কথা বলেছেন। নেতা-কর্মীদের নিয়ে যার যার অবস্থান থেকে জাতীয় পতাকা হাতে নয়াপল্টনের দিকে মার্চ করতে নির্দেশ দেন তিনি। তবে যেখানে বাধা আসবে সেখানেই বসে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বাধা দিলে বাধবে লড়াই। যেখানে বাধা সেখানে অবস্থান। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসতে বাধা দেওয়া না হলেও গতকাল থেকে নেতা-কর্মীদের নানাভাবে ঢাকায় আসতে বাধার সৃষ্টি করা হয়। এরই মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিতে মালিকদের মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনেক জেলায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাস চলাচল।

অনুমতি মিলল না গণজমায়েতের : নাগরিক নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ২৯ ডিসেম্বরের বিএনপির গণজমায়েতের অনুমতি দেয়নি ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশ। দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেলের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান গণমাধ্যমের কাছে বলেন, গণজমায়েত হলে জননিরাপত্তা বিঘি্নত হতে পারে। সে কারণে এ অনুমতি দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া একতরফা নির্বাচন বাতিলের দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে গণজমায়েতের অনুমতি চাওয়া হয়নি। তবে বুধবার বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল নয়াপল্টনে মাইক ব্যবহারের অনুমতি ও বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সহায়তা চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছিল।

পুলিশের অভিযান : আসন্ন নির্বাচনকে অবৈধ অস্ত্রমুক্ত রাখতে পেশাদার সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের ধরতে পুলিশের গ্রেফতার অভিযান চলছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও মূলত এ অভিযান ঢাকা অভিযাত্রা কর্মসূচিকে ঘিরেই। পুলিশের একটি সূত্র এ তথ্য দিয়ে বলেছে, পুলিশের গ্রেফতার অভিযান আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু করে গতকাল ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক অভিযান চালায় পুলিশ। এ ছাড়া বেলা ১১টায় ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক বজলুল রশিদ আন্জুর বাসায় তল্লাশি চালানো হয়। তার পরিবারের অভিযোগ, বজলুল রশিদকে না পেয়ে বাসার বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর ও তছনছ করে রেখে যায় পুলিশ। এতে পরিবারটির বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা মহনগর (উত্তর) যুবদলের সভাপতি মামুন হাসানের বাসায়ও ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। পরিবারের অভিযোগ, এ সময় তারা মামুনকে বাসায় না পেয়ে তার ভাবী ও বোনসহ আরও একজন মহিলা সদস্যকে আটক করে নিয়ে যায়।

এ ছাড়া, বৃহস্পতিবার রাত ২টায় রাজধানীর কল্যাণপুরের সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার, স্থানীয় বিএনপি নেতা শামীম পারভেজের বাসায় ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়েছে। পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে মামলা আছে কি না তা যাচাই করা হবে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশকিছু তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী রয়েছে। তিনি জানান, কাফরুল থেকে অস্ত্র, মিরপুর থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ব্যানার পাওয়া গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২৯ ডিসেম্বর ১৮-দলীয় জোটের 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল আটক এসব ব্যক্তির।

বিএনপির সংবাদ সম্মেলন : গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, মহানগর পুলিশ সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। তবে আমরা এখনো ডিএমপির কাছ থেকে লিখিত জবাব পাইনি। আমরা আশা করছি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সর্বাত্দক সহযোগিতা করবে।

মঈন খান বলেন, সমাবেশ করতে না দিলে এটা প্রমাণিত হবে যে সরকার ভিন্নমতকে অবরুদ্ধ করে রাখতে চায়। এভাবে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে তারা বন্ধ করে রাখতে পারবে না। সংবাদ সম্মেলনে সহ-দফতর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি ও শামীমুর রহমান শামীম উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুলের বিবৃতি : গতকাল এক বিবৃতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদ ও আওয়ামী লীগ নেতারা ধমকের সুরে কথা বলছেন। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ দাম্ভিকতা, সীমাহীন আস্ফালন, অগণতান্ত্রিক আচরণ জাতিকে এক চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে যথেচ্ছ ব্যবহারের মাধ্যমে যৌথবাহিনী দিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে বিরোধী দল নিধনে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। বিরোধী নেতা-কর্মী ছাড়াও তাদের পরিবার-পরিজনকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবদুস সালাম জানান, গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের অধিকার রক্ষায় রাজধানীবাসী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত 'গণতন্ত্রের অভিযাত্রা' সফল করতে প্রস্তুত। যে কোনো মূল্যে এ কর্মসূচি সফল করা হবে বলে জানান তিনি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.