চার ধাপে অনুষ্ঠিত শেষের দুই ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগে বিব্রত দলের নীতিনির্ধারকরা। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্র্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও দলের অভিজ্ঞ নেতারা নির্বাচনকে দেখছেন ভিন্ন দৃষ্টিতে। ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ নির্বাচনে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ প্রায় দ্বিগুণ উপজেলায় জয়ী হলেও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেশ কয়েকটি উপজেলায় দুপুরের আগেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে ভোট কারচুপি ও ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগ প্রশ্নবিদ্ধ করেছে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকেও।
রবিবারের নির্বাচনে বেশ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট দখলের উৎসব নিয়ে অভিযোগ তুলেছে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপেদষ্টা এইচ টি ইমাম বিএনপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ২৩ মার্চের নির্বাচন আগের চেয়েও সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা এইচ টি ইমামের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন। তবে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ঘিরে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তাতে দলের অভিজ্ঞ নেতারা রীতিমতো ক্ষুব্ধ ও বিব্রত। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার থিংক ট্যাংক হিসেবে খ্যাত দলের কজন অভিজ্ঞ নেতা সামনের নির্বাচনে এ ধরনের বিতর্ক এড়াতে চান।
দলের একশ্রেণীর অতি উৎসাহী মহলের বিতর্কিত ভূমিকার কারণেই সরকার ও দলের ভাবমূূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞ নেতারা মনে করছেন। উপজেলা নির্বাচনকে নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা না করলেও দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ভবিষ্যতের জন্য এসব বিতর্ককে 'আত্দঘাতী' বলেই মনে করছেন।
সূত্রমতে, কেন্দ্রের দিকনির্দেশনা উপেক্ষা করে অতি উৎসাহী একটি মহলের তৎপরতা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। দলের পরীক্ষিত এসব নেতা মনে করছেন, স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপির চেয়ে পেছনে থাকলেও ক্ষমতার রাজনীতিতে কোনো সমস্যা নয়। তবে নির্বাচনকে ঘিরে দল ও সরকার বিতর্কিত হলে প্রতিপক্ষ বিএনপি তার সুযোগ নিতে পারে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা বিএনপিকে এ ধরনের সুযোগ দিতে চান না। দলীয় সূত্রমতে, ধারাবাহিক ৫ পর্বের নির্বাচনের শেষ ধাপে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে বিতর্ক এড়াতে আওয়ামী লীগের অভিজ্ঞ নেতারা কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের সঙ্গেও এ নিয়ে দলের সিনিয়র নেতারা একান্তে কথা বলছেন। দলের মাঠপর্যায়ের নেতাদেরও সতর্ক করা হচ্ছে। পাশাপাশি অতীতের অভিজ্ঞতায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নিরসনে কেন্দ্র থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এক্ষেত্রে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ২৩ মার্চের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন্দলে প্রার্থী পরাজয়ের বিশ্লেষণ হচ্ছে দলে। নেত্রকোনার মদন উপজেলায় দলীয় কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাইদুর রহমান বগি কেবল পরাজিতই নয়, ভোটের পরিসংখ্যানে তার অবস্থান ছিল তৃতীয়। গত রবিবার এ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা শেরপুরের নলিতাবাড়িতে দলীয় কোন্দলে বিভক্ত দলের দুই প্রার্থী মিলে ভোট পেয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার। বিএনপি প্রার্থী মোখলেছুর রহমান রিপন মাত্র ৩৩ হাজার ২১৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নলিতাবাড়িতে।
এ ধরনের ঘটনা এড়াতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা কাজ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন যেখানে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে তাই আমরা চাই না উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে কোনো ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হোক। এ ব্যাপারে তৃণমূল নেতাদেরকেও কেন্দ্র থেকে সতর্ক করা হয়েছে। তারপরও যে বিতর্ক উঠেছে তা হয়তো অতি উৎসাহী একটি মহলের কারণেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।