এসো নীপবনে হেরমেস
বাণিজ্যে লক্ষ্মি বসতি বলে একটা কথা আছে। সনাতন ধর্মের লোকদের কাছে তাই বাণিজ্যের ভগবান লক্ষ্মি। আর রোমানদের কাছে বাণিজ্যের ভগবান হলো মারকারী (Mercury)। ইনি আবার হেরমেস (Hermes) নামেও পরিচিত। হেরমেস একাধারে বাণিজ্য, ভ্রমন এবং চোরদের ও ভগবান।
বিষয়টা কেমন হয়ে গেলো না? বাণিজ্যের ভগবান আর চোরের ভগবান এক। তবে কি চুরি আর বাণিজ্য একে অপরের পরিপূরক?
কথা হচ্ছিল আমার সহকর্মীর সাথে। আমরা দু'জনেই চাকরি করি। কি কথা বলতে বলতে তিনি বলছিলেন- 'আল্লাহ পাকের চাইলে আল্লাহ পাক দেন। কিন্তু দেয়ার রাস্তাটাতো খোলা রাখতে হবে।
আপনি যদি চাকরি করেন তবে আল্লাহ পাক ইচ্ছা করলেই বেশি করে দিবেন কিভাবে?'
লাখ টাকার প্রশ্ন। ব্যবসা ছাড়া আসলে বড়লোক অথবা বেশি অর্থের মালিক যে অর্থে আমরা ধনী বলি, তা হওয়া সম্ভব নয়। তাই বড়লোক হতে চাইলে ব্যবসা করার বিকল্প ব্যবসাই। এটা পরীক্ষায় পাসের জন্য পড়ার বিকল্প যেমন পড়া অনেকটা ঠিক তেমন।
আমার সহকর্মী যে প্রশ্ন রেখেছেন তার বিপরীতে একটা কেস হিস্টোরি শোনালেন।
সেটা বেশ চমকপ্রদ। তার মুখের জবানিতেই শোনা যাক-
'একজন লোককে চিনি ধরুন তার নাম গফুর (ছদ্মনাম)। এই লোকটা সাধারন লেখা পড়াতে মাষ্টার্স দিয়েছে তবে কাজ কর্ম কিছু করত না। তাইলে করত কি? করত জামাত শিবির। জামাতের মিটিং-মিছিলে থাকাই তার কাজ।
এক সময় বাবা অসুস্থ হয়ে গেলে, বড় ছেলে হিসাবে তাকেই সংসারের বোঝা কাঁধে নিতে হবে শুধু সেই কারনে একটা কিছু করা দরকার বোধ করলেন। কিন্তু তিনি কোনো ভালো-প্রতিষ্ঠিত অফিসে চাকরি করবেন না। তাইলে কোথায় চাকরি করবেন? চাকরি করবেন- সাধারন কোনো দোকানে, এক মালিকাধীন প্রতিষ্ঠানে। তবে শর্ত আছে। শর্ত হলো যে, অন্যরা যদি ৫০০০ পায় তাকে ৩০০০ দিলেও চলবে তবে, মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।
যাই হোক এক কাপড়ের দোকানে চাকরি নিলেন। সেখানে দুই মাস যেতেনা যেতেই তাকে বিদায় নিতে হলো। সমস্যা হলো- ক্রেতাদের সাথে বিভিন্ন কথা হয় এরপর বিভিন্ন দলের লোক আসে মালিকের কাছে, সে এমন কথা বললো কেনো? এই নিয়ে একটা গ্যাঞ্জাম হয়, আবার জামাতের লোকজন দোকানে আসতে থাকে, এটাও ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে এই ভেবে তাকে অন্য পথ দেখতে বলেন।
সেই গফুর এবার কি করে? এর মধ্যে তাদের জামাতী ভাইরা যে আছে, তাদের একজন তাকে একটা পরামর্শ দেয়, আটা সাপ্লাইয়ের। দোকানে দোকানে আটা সাপ্লাই দেয়া।
এতে প্রতি বস্তায় ৮-১০ টাকা থাকে। প্রথম প্রথম বেশ কিছু দিন করার পর বেড়াতে গেলেন রাঙামাটি, তার এক আত্মীয়ের কাছে সে আবার সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। সেখানে আবিস্কার করলেন- সেনাবাহিনীতে দুই ধরনের আটা দেয়, একটা খুব ভালো আর একটা একটু নিম্নমানের। নিম্নমানেরটা তারা কম দামে বিক্রি করে অথবা নষ্ট করে ফেলে। নিম্নমানের হলেও খাওয়া যায়।
এটা বিক্রি সম্ভব, তবে গরীব লোকদের কাছে। ট্রায়াল হিসাবে পাঁচ-দশ বস্তা আটা নিয়ে বিক্রি করলেন। এটা বেশ জনপ্রিয়ো হলো দুইটা কারনে। এক, এই আটা একটু সস্তা। দুই, এই আটাটা একটু নোনা।
এতে অতিরিক্ত লবন লাগতো না। তাছাড়া এটা খেতেও কিছু লাগতো এমনি খাওয়া যায়। আস্তে আস্তে এমন হলো যে, লোকজন দোকানে যেয়ে লোনা আটা চাইতো। এখন সে বস্তায় বস্তায় আটা আনা শুরু করলো। কিন্তু এতো টাকা পাবে কোথায়? এক ব্যাংকে ধরনা ধরে ব্যর্থ হয়ে দারস্থ হলেন আরেক ব্যাংকে।
সেই ব্যাংকের হেড অফিস প্রপোজাল ফেরত পাঠালে, ম্যানেজার নিজে গ্যারান্ট হয়ে লোন পাশ করিয়ে দিলেন। লোন পাশ হলো ১,০০,০০০/- টাকা। তিনি সেই লোনা আটা কিনতেন ৩০০ করে আর বাজারে আটার দর ছিলো ৭০০-৭৫০ করে। সেই লোনা আটা একটু বেশি লোনা ছিলো। তাই, এক বস্তা লোনা আটার সাথে হাতে আরেক বস্তা লোনা আটা মিশিয়ে বিক্রি করতেন বাজার দরেই।
লাভের হিসাবটা বুঝে নিন। এরপর আটা আনতে থাকলেন ট্রাকে ট্রাকে। হাতে আটা মিশানো সম্ভব না, কিনে নিলেন একটা গম ভাঙ্গানোর যন্ত্র। সেই যন্ত্রে তিনি ভালো আটা আর লোনা আটা মিশাতেন। কয়েক বছরের ব্যবসায় ফুলে ফেপে এমন অবস্থা যে, আমি আসার আগে সেই ব্যাংকে তার লিমিট ছিলো ২,৫০,০০,০০০/- টাকা।
তাকে অন্য ব্যাংক আরো বেশি দিতে চায়, কিন্তু জোর করেই আগের ব্যাংক তাকে রেখে দেয়। গত সপ্তাহে জানলাম, সে আছে আরেকটা ব্যাংকে যারা তাকে ৪,০০,০০,০০০/- টাকা লিমিট দিয়ে নিয়ে গেছে। এখন সে তার ব্যবসা কয়েকটা ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। এক একটা, এক এক ভাই দেখে। বাড়ি বানিয়েছে কি বিশাল করে! তবে তাদের জমি ছিলো আগে থেকেই সেগুলো বেশ কাজে দিয়েছে।
এখন বাসায় বসে বসেই ব্যবসা করে, এদিক সেদিক ঘুরে। এখন তার বাবা প্রতি বছর হজ্বে যায়। বলে তোমাদের এতো টাকা পয়সা হয়েছে আমি প্রতি বছর যাবো। তোমরা টাকা না দিলে, জমি বিক্রি করে যাবো। বাধ্য হয়ে ছেলেরা বাবাকে হজ্বে পাঠায়।
'
এই কেস হিস্ট্রি থেকে আমরা কি শিখলাম? প্রিয়ো ব্লগার ভাই ও বোনেরা এই পোস্টটা হঠাৎ কোনো চিন্তা ভাবনা ছাড়াই দেয়া। সত্যি ঘটনা থেকে নেয়া। আপনারা আপনাদের সুচিন্তিত মতামত দিলে খুশি হবো।
(ঘটনাচক্রে ভদ্রলোক জামাতী, এবং একসময় যাকে আমরা বলি ভ্যাগাবন্ড, সে রকমই ছিলেন। জামাতী বা যুদ্ধাপরাধীদের সাফাই গাইছি এরকম মনে করলে কষ্ট পাবো।
আমি আমার সহকর্মীর মুখের কথা যথাসাধ্য অবিকৃত রাখার চেষ্টা করেছি মাত্র। ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।