আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অখ্যাত আমার বিখ্যাত শিক্ষকেরা - ১০

আগের পর্ব - Click This Link নোয়াখালী সরকারী কলেজ এক বছর বিরতি দিয়ে ১৯৮৩ সালে নোয়াখালী সরকারী কলেজে পাস কোর্সে ভর্তি হই। বোকামী করে ১৯৮২ সালে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'ক' ইউনিটে দরখাস্ত করেছিলাম। সে বারই প্রথম ইউনিট পদ্ধতি চালু হয়। আমরা তখন শুনেছিলাম আর্টস আর কমার্সকে ভর্তির সুযোগ প্রদান, পরীক্ষা বিষয়ক শিক্ষক শিক্ষার্থী উভয় পক্ষের কাজ কমিয়ে আনা এরকম কিছু যুক্তিতে ইউনিট প্রথা চালু হয়। এখন যেমন সব বিভাগেই প্রচুর ভালো ছাত্রছাত্রী আছে।

আমাদের কালে সব ভালো ছাত্ররা বিজ্ঞান, এর পরের গ্রুপ বানিজ্য আর শেষ গ্রুপ মানবিক ভিাগে ভর্তি হতো। এর ব্যতিক্রম ছিলো কম। ফলে দেখা যেতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগে বিজ্ঞান বিভাগের ( বিশেষত: তখনকার বিবেচনায় তথাকথিত ভালো সাবজেক্টে) ছাত্র ছাত্রীরাই ভর্তি হয়ে যেতো। আর্টস কমার্স চান্সই পেতো না। তার বাস্তব একটি প্রমান পেয়েছিলাম সাংবাকিতায় মাস্টার্স করার সময়।

সেখানে তখনো বিষয়ভিত্তিক ভর্তি ছিলো। প্রিলিমিনারীতে আমরা যে ৩০ জন ভর্তি হয়েছিলাম তাদের সবাই কমপক্ষে একটি পরীক্ষা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করা। আগের তিন পরীক্ষার সব কয়টি আর্টস বা কমার্স বা আর্টস কমার্সের মিশ্রন এমন কেউ আমাদের সাথে চান্স পায়নি। অনার্সে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ২ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৩ তারিখে রেজাল্ট জানতে গিয়ে শুনি ৩ সপ্তাহ পরে ২৩ ফ্রেব্রুয়ারী রেজাল্ট দিবে। কিন্তু ১৩ ও ১৪ ফ্রেব্রুয়ারী এরশোদ বিরোধী প্রথম ছাত্র আন্দোলনে সেলিম, দেলোয়ার, দীপালী সাহাসহ কয়েকজন ছাত্র/ছাত্রী শহীদ হলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়।

আমরা বাড়ী চলে যাই। তখনো বুদ্ধি করে বিকল্প ভাবলে বছরটা নষ্ট হতো না। বিশ্ববিদ্যালয় খোলে ৩ মাস পর। ঠিক তখনই আমি অসুস্থ হয়ে যাই। গলায় ছোট একটা অপারেশন হয়।

ফলে যথাসময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারিনি। সেবার নিয়ম ছিলো ফল প্রকাশের পাঁচ দিনের মধ্যে ডিন অফিস থেকে ফরম নিয়ে ৫টি পছন্দের বিষয় লিখে জমা দিতে হবে। সে ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে মেধা তালিকা করে। আমি এসেছি ১৫ দিন পরে। ফলে আমার রেজাল্ট বাতিল হয়ে গেলো।

ভর্তি পরীক্ষায় টিকেও ভর্তি হতে পারলাম না। অনেক কাকুতি মিনতি করেও কাজ হলো না। ততদিনে আর কোথাও ভর্তি হবার সুযোগ ছিলো না। গেলো একটা বছর। গ্রামের স্কুলে অস্থায়ী মাস্টারী আর টিউশনী করে বছরটা গেলো।

পরের বছর রাগ করে ( অক্ষমের যেটা প্রধান সম্বল) আর বিশ্ববিদ্যালয়মুখো হলাম না। সোজা ভর্তি হলাম পাস কোর্সে। নোয়াখালী কলেজ তখন ছিলো ডিগ্রী কলেজ। ছিলো পুরাতন ভবনে। তখন ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ছিলেন আবদুল জলিল স্যার।

ব্যবস্থাপনার শিক্ষক হিসাবে কিংবদন্তী। খুব উঁচু মানের একটি বই প্রকাশ করেছিলেন ব্যবস্থাপনার ওপর। পরে তিনি নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর নেন। স্যার এখন বেঁচে নেই। স্যারের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।

আমাদের ছিলো তিন শ' নম্বর বাংলা আর এক শ' নম্বর ইংরেজী বাধ্যতামূলক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর অর্থনীতি নিলাম। সেই কালে এই দুটি বিষয় কেউ একত্রে নিতে সাহস পেতো না। আমার ব্যাচের একশ জনের মধ্যে শুধু আমারই ছিলো এই কম্বিনেশন। ফলে এই দুই বিভাগের তিন জন দুর্দান্ত শিক্ষকের ছাত্র হবার গৌরব লাভ করি- মোস্তাফিজুর রহমান রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অসাধারণ শিক্ষক ছিলেন তিনি।

তখন ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীঢ প্রধান। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসে নতুন ও কঠিন এ বিষয়টি আত্মস্থ করে ফেলি স্যারের সৌজন্যে। সবগুলো থিয়োরী তিনি পানির মতো করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। কলেজ লাইব্রেরীতে ছিলো না এমন বেশ কয়েকটি বই স্যারের নিজের সংগ্রহে ছিলো। স্যার নিজের বই বাসায় ডেকে নিয়ে আমাকে দিয়েছেন নোট তৈরী করার জন্য।

শুধু এটুকু বলতে পারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও তাঁর মানের শিক্ষক খুব বেশী ছিলো না। সংস্কৃতিমনা মুক্তবুদ্ধির মানুষ ছিলেন তিনি। স্যার পরে লক্ষ্মীপুর ও কবিরহাট সরকারী কলেজেরে অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। বর্তমানে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার পদে আছেন। (ব্লগার প্রণব আচার্য্য জানালেন গত সপ্তাহে স্যার মারা গেছেন।

স্যারের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। ) আতাউর রহমান আতাউর রহমান স্যার ছিলেন অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান। মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সাহস আর আত্মবিশ্বাসের জাগ্রত প্রতিমূর্তি। অসম্ভব ভালো পড়াতেন।

বাংলা বই রেখে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ স্যামুয়েলসনের কিংবদন্তী গ্রন্থ ''ইকোনোমিকস'' বই থেকে পড়াতেন। স্যারের কথা হলো আজে বাজ বই পড়ে সময় নষ্ট করার মানে নেই। তিনি পরে রামগঞ্জ সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। অর্থনীতি ছাড়াও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির নানা বিষয়ে তাঁর ছিলো সীমাহীন পাণ্ডিত্য। এখন কোথায় আছেন জানি না।

যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন এই দোয়া করি। ইউসুফ ফারুক তিনি ছিলেন অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক। বাংলা বই থেকে পড়ালেও স্যামুয়েলসনের সংজ্ঞাগুলোও পড়াতেন। সহজ করে অর্থনীতির মতো গুরুগম্ভীর বিষয়টি পড়াতে পারতেন। স্যার পরে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হন।

২০০৭ সালের শুরুতে (যতদূর মনে পড়) টেক্সট বুক বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে অবসর নেন। রফিক উল্যা তখন ছিলেন বাংলা বিভাগের প্রভাষক। প্রমোশন বিলম্বে হতাশায় ডুবেছিলেন। তারপরও ক্লাসে ফাঁকি দেননি। সাহিত্যের ওপর দারুন দখল ছিলো।

পড়াতেনও ভালো। রসিক মানুষ ছিলেন। পরে নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে অবসর নেন। (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.