আগের পর্ব -
Click This Link
বাংলা বিভাগের অন্য স্যার/ম্যাডামদের কথা
তখন বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন কাজী নূরুল ইসলাম স্যার। কবি হিসেবে স্যারের খ্যাতি ছিলো। বাংলায় তখন অনার্স ও মাস্টার্স ছিলো। তিনি ওদিকেই থাকতেন। ফজলুল হক স্যার পড়াতেন শ্রীকান্ত উপন্যাস।
খুব মজার লোক। হাসি তামাসায় মাতিয়ে রাখতেন। ফজলে রাব্বী স্যার পড়াতেন কবিতা। রাশভারী লোক। খুব ভাব নিয়ে থাকতেন।
হাবীবা বেগমও কবিতা পড়াতেন। বোরিং লাগতো তাঁর ক্লাস। এ ছাড়া ছিলেন -
শান্তি রঞ্জন ভৌমিক
ভৌমিক স্যার পড়াতেন রক্তাক্ত প্রান্তর নাটক। খুব সুন্দর করে পয়েন্টে পয়েন্টে বুঝিয়ে পড়াতেন। সমস্যা ছিলো স্যার কথা বলতেন আস্তে।
পেছনে বসলে কিছু শোনা যেতো না। তাই অনেকে ক্লাসে হৈ চৈ করতো। এ নিয়ে স্যারকে কিছু বললে বলতেন এর চেয়ে জোরে তাঁর পক্ষে কথা বলা সম্ভব নয়।
পরে জানলাম স্যার অলঙ্কার শাস্ত্রের ওপর খুব কাজের একখানা বই লিখেছেন। এখনো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাঁর বইটি পড়ে।
ইংরেজী বিভাগ
ইংরেজী বিভাগের বেশ ক'জন স্যার ম্যাডামের নাম এখন আর মনে নেই। আবদুল মান্নান স্যারের কথা মনে আছে তাঁর ভালো পড়ানো আর নৈতিক উচ্চতার জন্য। আমাদের এইচএসসি পরীক্ষার সিট আমাদের কলেজেই পড়েছিলো। লে.জে.হো.মো. এরশাদের মার্শাল ল' আসে ১৯৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী আর আমাদের পরীক্ষা শুরু হয় ১৮ মার্চ যতদূর মনে আছে। ফলে পরিবেশ ছিলো বেশ গরম।
আমাদের এক সহপাঠী ৬ মাস প্রাইভেট পড়েছিলো মান্নান স্যারের কাছে। কিন্তু ছোট একটা নকলের জন্য মান্নান স্যারই তাকে বহিষ্কার করেছিলেন।
মফিজ চৌধুরী বলে একজন ছিলেন। তাঁর লেখা একটা ইংরেজী ব্যাকরণ বই তখন বাজারে পাওয়া যেতো।
লায়লা নূর
ইংরেজী বিভাগের সত্যিকারের তারকা ছিলেন লায়লা নূর ম্যাডাম।
ধবধবে ফর্সা আর অনেক ছেলের চেয়ে দীর্ঘ দেহী ছিলেন তিনি। মাথা ভর্তি কালো চুল। কিন্তু বয়কাট। ক্লাসে এসে পড়াতে শুরু করলেন চোস্ত ইংরেজীতে। কয়েক জন বললো, ম্যাডাম এর বাংলা অর্থ কি ? আস্তে করে বললেন, ভিক্টোরিয়া কলেজে আসতে বলেছে কে ? ইংরেজীর প্রশ্ন এবং উত্তর সবই ইংরেজীতে হবে।
এখানে বাংলা দিয়ে কি করবে ? ক্লাসে কখনো বাংলা বলতে শুনিনি। তিনি আমাদেরকে কলেজ লাইব্রেরী থেকে ডিকেন্স, টমাস হার্ডি, হেমিংওয়ের ইংরেজী উপন্যাস পড়তে উৎসাহিত করেছিলেন। সাহিত্য পাতায় তাঁর লেখা গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ বের হতো।
গণিত বিভাগ
বিজ্ঞান শাখায় তারকা বেশী ছিলো গণিত বিভাগে। আলী মোর্শেদ স্যার ত্রিকোনোমিতি পড়াতেন।
কিন্তু প্রায়ই চলে যেতেন তাবলীগে। সুশীল পোদ্দার স্যার ত্রিকোনোমিতির বাকীটা শেষ করেন। পরে পড়িয়েছেন স্থিতিবিদ্যা। খোদা বক্স স্যার পড়িয়েছেন গতিবিদ্যা। এঁরা সবাই ছিলেন গণিতের নামকরা অধ্যাপক।
আরো ছিলেন-
আলী হোসেন মজুমদার
মজুমদার স্যার জ্যামিতি পড়াতেন। খুব সুন্দর পড়াতেন। তিনি জ্যামিতির বই লিখেছিলেন। দীর্ঘদিন তাঁর বইটি পাঠ্য ছিলো।
কে.কে. রায়
গণিত বিভাগের প্রধান ছিলেন কে.কে. রায় ( ক্ষীতিন্দ্র কুমার রায়)।
তাঁর লেকা বীজ গণিতের একখানা উচ্চমার্গের বই ছিলো। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্র ছিলেন। এমএসসিতে যৌথভাবে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সাথের জনের চাকুরী হয় কলকাতা বিশ্বদ্যিালয়ে। তাঁর হয়নি।
সে জন্য অভিমান করে ভিক্টোরিয়া কলেজে যোগ দেন। তাঁর স্ত্রী ড. জয়তী রায় ছিলেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক। ছুটিতে বাংলাদেশে আসতেন।
কে কে রায়ের ক্লাস সাধারণ ছাত্রদের জন্য বিপজ্জনক ছিলো। তিনি বোর্ডের ওপরে এক লাইনে অংক করতেন।
ওপরে প্রথম লাইন লিখে মুছে দিতেন। পরের লাইন ওখানেই লিখতেন। সেটা মুছে পরের লাইন ওখানেই। অর্থাৎ সব লাইর এক জায়গায়। দ্রুত তুলে নিতে না পারলে উপায় ছিলো ন।
কেউ কিছু বললে বলতেন, তোমার জন্য ভিক্টোরয়িা কলেজ না। বড়ুরা বা চিওড়া কলেজে যাও। ২/৩ ডিজিটের গুন ভাগ মুখে মুখে করে ফেলতেন। অঙ্ক করাবার আগে বলে দিতেন অঙ্কটি বাংলাদেশী লেখক ভারতীয় কার বই থেকে কাট পেস্ট করেছেন।
স্যারের কাছে আমি প্রাইভেট পড়েছি।
কি কারণে যেন বেশ স্নেহ করতেন আমাকে। কিন্তু নীতিবোধে বলীয়ান ছিলেন। ১৯৮৫ সালে( আমার পরীক্ষার তিন বছর পর) বলেছিলেন আমাদের প্রশ্ন তিনি করেছিলেন।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।