আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অখ্যাত আমার বিখ্যাত শিক্ষকেরা - ২

আগের পর্ব- Click This Link রুহুল আমিন স্যার ১৯৭৩ সালের আগস্ট মাসে গ্রামের স্কুল ছেড়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা সদর চৌমুহনী চলে আসি বাবার কর্মস্থলে। ভর্তি হলাম চৌমুহনী পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেই স্কুলটি প্রাথমিক বৃত্তির জন্য বিখ্যাত। চৌমুহনীর ২/৩টি স্কুলের মধ্যে বৃত্তি পাওয়া নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতা চলতো। আমি ক্লাস ফোরে ভর্তি হলাম।

তখন শুধু বার্ষিক পরীক্ষার ভিত্তিতে ফলাফল চূড়ান্ত হতো। গ্রামের স্কুল থেকে এসে শহরের নামী স্কুলে ফার্স্ট হয়ে আমিও চমকে গেলাম। ফলে প্রাথমিক বৃত্তির জন্য অন্যদের সাথে আমিও নির্বাচিত হয়ে গেলাম। বৃত্তির ছাত্র/ছাত্রীদের আলাদা করে করা হলো খ শাখা। বাকীরা রইলো ক শাখায়।

বৃত্তির জন্য পড়াতেন রুহুল আমিন স্যার। মাঝে মাঝে হেড স্যার (জনাব আবদুল হালিম ) আসতেন। আর আসতেন আবুল কাশেম স্যার। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আমরা রুহুল আমিন স্যারের কাছে পড়তাম। তিনি বৃত্তির বিষয়গুলো পড়াতেন।

বাংলা রচনা আমাদের পড়ালেন ৫০টি। সব ধরনের রচনাই তাতে ছিলো। কি করে দারুন রচনা লিখতে হয় তার তালিম দিয়ে দিলেন তিনি। বাকী জীবনে আর কোন রচনা মুখস্ত করতে হয়নি। নিজেই রচনা লেখা শিখে গেলাম।

পরের জীবনে ২০/২২ পৃষ্ঠা রচনা লিখেছি তার সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। প্রচণ্ড চাপে রাখতেন স্যার। খেলাধুলার পাট চুকে গেলো। এই কোচিংয়ের জন্য আমরা মাসে ২০ টাকা করে দিতাম। এ রকম ছাত্রঅন্তপ্রাণ শিক্ষক আমার জীবনে খুব কম পেয়েছি।

তাঁর পরিবারের লোকজন যে কোথায় আছে সে খবরই স্যারের মনে থাকতো না। বৃত্তির সব বই একবার শেষ করে আরো ৫ বার রিভিশন করিয়েছেন। এ থেকেই বুঝবেন কি চাপে তিনি রাখতেন। যে যে অঙ্ক ফাইভের সিলেবাসের সাথে মিলতো সে ধরনের অঙ্ক সিক্স সেভেনের বই থেকেও করিয়েছেন। ১৯৭৪ সাল ছিলো আমাদের বৃত্তির বছর।

বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলো। কিন্ত সি পানির ভেতরও আমাদের ছুটি নেই। রুহুল আমিন স্যার আর হেডস্যার মিলে নৌকার ব্যবস্খা করলেন। সবাইকে স্কুলে আনা হতো নৌকায়। আমাদের ক্লাস রুমে সিট বেঞ্চ সাজিয়ে তার ওপর আমাদের বসার জন্য বেঞ্চ দেয়া হলো।

বিকালে আবার সবার বাড়ীর পথে নৌকা ভ্রমন শুরু হতো। শেষ পর্যন্ত সেটাও পারা গেলো না। তখন আমাদের বাসায় স্কুল থেকে বেঞ্চ এনে ক্লাস শুরু হলো। পরীক্ষার শেস দিকে আমার জ্বর হলো। জ্বর এলো তখনকার বহুল আলোচিত চুলকানী আর খোশ পাঁচড়ার ব্যথায়।

রুহুল আমিন স্যার দমলেন না। আমার এক সহপাঠীকে হারিকেন হাতে তার বাড়ী থেকে সাথে করে আনতেন। সে বসে বসে পড়তো। আমি শুয়ে শুয়ে শুনতাম। পড়া শেষে স্যার সাথে করে ওকে ওর বাড়িতে নিয়ে যেতেন।

এভাবে চললো ১০/১২ দিন। পরীক্ষার সময়ও আমার হালকা জ্বর ছিলো। তারপরও বৃত্তি ঠিকই পেয়ে গেলাম। এই কৃতিত্ব মূলত: রুহুল আমিন স্যারের। হেড স্যার ছিলেন নেপথ্যে।

রুহুল আমিন স্যার অবসর নিয়েছেন। বেঁচে আছেন এখনো। প্রাক্তন ছাত্ররা গিয়ে সালাম দিয়ে দাঁড়ালে সরল হাসিতে ভরে ওঠে স্যারের মুখ। ''হিরো'' বলতে যা বোঝায় রুহুল আমিন স্যার এর চেয়ে কম কিছু কি ? (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.