আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অখ্যাত আমার বিখ্যাত শিক্ষকেরা - ৫

আগের পর্ব - Click This Link হরেন্দ্র স্যার আমাদের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন হরেন্দ্র লাল মজুমদার। সবাই বলতেন হরেন্দ্র বিএসসি। আমাদের কালে বিএসসি স্যারদের খুব দাপট ছিলো। তিনি আমাদের নৈর্বাচৈনিক গণিত করাতেন। যেটা এখন উচ্চতর গণিত নামে পরিচিত।

তিনি বলেছেন, অঙ্কের বিষয়ে যেন একটা নিয়ম নিয়ে গোঁ ধরে না থাকি। কারণ যে কোন অঙ্ক কমপক্ষে দুই রকমে করা যায়। উদাহরণ দিলেন, ২+২=৪। এটাই আবার ওপরে নীচে লিখে যোগ করা যায়। ক্লাসে মাঝে মাঝে একই অঙ্ক দুতিন ভাবে করে দেখাতেন।

উৎসাহিত হয়ে স্যারকে বললাম, আমরা কি সব নিয়মই শিখবো ? স্যার বললেন, তবে একটা গল্প শোন। একদিন বনের ধারে এক শিয়াল পণ্ডিত খুব গর্ব করে নিজের বুদ্ধির নানা ফিরিস্তি দিচ্ছে এক বিড়ালকে। শিয়াল বললো, তুই গাছে উঠতে পারিস শুধু একটি নিয়মে। আমি এই গাছে উঠতে পারবো নানা নিয়মে। গল্পের ফাঁকে এক বিশাল শিকারী কুকুর ঘেউ ঘেউ করে ছুটে এলো।

কুকুরের আওয়াজ পেয়েই বিড়াল এক লাফে গাছে মগডালে উঠে প্রাণ বাঁচালো। শিয়াল পণ্ডিত ভাব দেখানোর জন্য কোন কৌশলে পালাবে তা নিয়ে ভাবতে বসলো। ভাবতে ভাবতে কুকুর এসে ঘাড় মটকে দিলো। গল্পটা শেষ করে হাসতে হাসতে বললেন, কি বুঝলি ? বললাম, যেটা শিখবো সেটা ভালো করে শিখতে হবে। কারণ পরীক্ষার সময় সময় কম।

এক দৌড়ে গাছে ওঠা শেষ না করলে শেয়ালের দশা হবে। নির্মল হাসিতে ভরে গেলো স্যারের মুখ। এমনই দারু ন ছিলো এই স্যারের পড়বার কৌশল। অঙ্কের শিক্ষক হিসাবে স্যারের খ্যাতি ছিলো কিংবদন্তীতুল্য। জানি না স্যার এখন কোথায় আছেন ? স্যারের যে বয়সে আমি তাঁর ছাত্র ছিলাম সে হিসাবে স্যারের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ।

হীরা লাল সাহা আরেক বিএসসি ছিলেন হীরা লাল সাহা। খুব মজার মানুষ। রসায়ন আর জীববিজ্ঞান পড়াতেন। খুব সহজ করে তুলতে পারতেন জটিল বিষয়কে। খুব বুদ্ধিদীপ্ত মন্তব্য করতেন যার আসল মানে বুঝেছি বড়ো হয়ে।

স্যার প্রায়ই বলতেন, কারো রুচি, কারো হালুয়া লুচি। জাগতিক লোভ আর মানসিক উচ্চতার পার্থক্যের মধ্যে যে ব্যক্তির আসল মান লুকিয়ে থাকে সেটা আমরা বুঝতেও পারি না। শিল্প সাহিত্যের বিষয়েও স্যারের জ্ঞান ছিলো উচ্চমার্গের। রাজিয়া খাতুন চৌধুরানীর ''চাষা'' কবিতা অঅমাদের পাঠ্য ছিলো না। প্রথম কয়েক লাইন ভাবসম্প্রসারনের জন্যপড়ানো হতো।

ক্লসে ঢুকে একজনের খাতায় প্রথম দুলাইন দেখে জিজ্ঞেস করলেন, দধীচি কি ইহার চেয়ে সাধক ছিলেন বড়ো ? এর মানে কি ? আমরা বলতে পারলাম না। স্যার বললেন, কে পড়িয়েছে ? আজিজ ? ( আমাদের বাংলার স্যার আজিজুর রহমান)। কি পড়ালো সে ? এই বলে মহাভারত ও অগ্নিপুরান হতে দধীচির উপাখ্যান বর্ণনা করে বোঝালেন দধীচির ত্যাগ আসলে কি ছিলো ? দধীচি দেবতাদের উপকারের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেন। দধীচির অস্থি দিয়ে বজ্র তৈরী করে দেবরাজ ইন্দ্র কিভাবে বৃত্রদের প্রাণ সংহার করেন তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে বোঝালেন কেন চাষীদের ত্যাগকে কবি এর চেয়ে বেশী বলেছেন। এর মাধ্যমে সহজেই কৃষকের ত্যাগের পরিমান বুঝিয়েছেন।

বাংলার স্যারের চেয়ে ভালো বাংলা পড়ালেন হীরা লাল বিএসসি ! স্যার আজ বেঁচে নেই। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। সুভাষ চন্দ্র শীল ইনিও বিএসসি। সাধারণ গণিত করাতেন। খুবই সুদর্শন ও সত্যিকারের সুভাষ।

বিএসসি সুলভ রাগ বা অহমিকা কোনটাই ছিলো না তাঁর। খুব সুন্দর করে অঙ্ক বুঝিয়ে দিতেন। ফুটবলের রমরমা যুগে তিনি ছিলেন ক্রিকেট ভক্ত। তাঁর কাছেই সুনীল গাভাস্কার, অংশুমান গায়কোয়াড়, সৈয়দ কিরমানী, পতৌদীর নবাব, ইমরান খান, জহীর আব্বাস, হানিফ মোহাম্মদ, ডেনিস লিলি, চ্যাপেল ব্রাদার্স, ক্লাইভ লয়েড, ডেরেক ওয়ালকট, গ্যারি সোবার্স, কলিন কাউড্রে এই সব ক্রিকেটারদের কথা প্রথম শুনি। স্যারের কাছেই ক্রিকেটের প্রাথমিক ধারনা পেয়ে যাই সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকেই।

পরে কিশোর বাংলা পত্রিকায় ''খেলার রাজা ক্রিকেট রাজার খেলা ক্রিকেট'' নামে ধারাবাহিক লেখাটি পড়ে ক্রিকেটের আসল বৃত্তান্ত জানতে পারি। স্যার এখনো বেঁচে আছেন। (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.