আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অখ্যাত আমার বিখ্যাত শিক্ষকেরা - ৩

আগের পর্ব - Click This Link হেড স্যার চৌমুহনী পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হেড স্যার ছিলেন জনাব আবদুল হালিম। সহজ সরল দিলখোলা মানুষ। পাজামা পাঞ্জাবী আর বগলে বারোমাস একটা ছাতা, পায়ে চপ্পল - এটা ছিলো তাঁর ট্রেডমার্ক চেহারা। সব সময় শশব্যস্ত। মাঝে মাঝে ক্লাসে আসতেন।

খুব মজা করে পড়াতেন। অন্য হেডস্যারদের মতো রাশভারী ছিলেন না। কিন্তু স্কুল চালাতেন দারুন দক্ষতায়। কোন ক্লাস কোন স্যার মিস করার সাহস পেতেন না। প্রায়ই সবার অগোচরে ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসে থাকতেন।

স্যারের সবচেয়ে বড়ো গুন ছিলো স্কুলের জন্য ভালো ছাত্রছাত্রী সংগ্রহের চেষ্টা। অভিভাবকের বাড়ী চলে যেতেন। বলতেন, আপনার ছেলে/মেয়েকে আমার স্কুলে দিন। আমি ওর জীবন গড়ে দেবো। তাঁর জন্যই আমি তাঁর স্কুলে ভর্তি হয়েছি।

আমরা যখন বাসায় উঠি স্যার সেটা দেখেছেন। আমাদের দেখেই আমার বাবার অফিসে হাজির হয়ে বলেছেন আপনার ছেলেদের আমার স্কুলে দিন। সম্মতি পাবার আগ পর্যন্ত অফিসে বসে রইলেন। আমার বাবা রাজী হবার পর তিনি আফিস ছেড়েছেন। স্কুল তো সরকারী ছিলো।

ছাত্র কমবেশী বা রেজাল্ট ভালো মন্দের সাথে তাঁর বেতন তো জড়িত ছিলো না। বরং ছাত্রছাত্রী বেশী হলে দায়িত্ব ও খাটনী বেশী হতো। তখন তাঁদের অন্য কোন ধান্দাতো দেখিনি। ভালো ছাত্রদের বাড়ী গিয়ে হাজির হতেন সন্ধ্যার পর বিনা নোটিশে। ছাত্ররা ঠিকমতো পড়ছে কিনা সেটা নিশ্চিত করার জন্যই চালাতেন এমন আকস্মিক অভিযান।

দেশের ছেলে মেয়েদের মানুষ করার এক জন্মান্ধ মোহে ডুবে ছিলেন স্যার। এর জন্য কোন প্রতিদান কখনো দাবী করেননি। জানি না স্যার বেঁচে আছেন কিনা ? তখনই বেশ বয়স্ক ছিলেন। যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন স্যার। আবুল কাশেম স্যার রুহুল আমিন স্যার ছাড়া আমাদের ক্লাস নিতেন কাশেম স্যার।

তরুন, সুদর্শন। পড়াতেনও ভালো। কাশেম স্যারের খ্যাতি ছিলো উচ্চ শিক্ষিত বলে। কারণ তখন প্রায় সব স্যার ছিলেন এসএসসি পাশ। হেড স্যার ছিলেন এইচএসসি পাশ।

কাশেম স্যার বিএ পাশ। সেই কালের বিচারে প্রাইমারী স্কুলের জন্য বিশাল ব্যাপার। আমাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। সেটার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ছিলো। স্যারের কিছু কাজ করে দিতে হতো।

১৯৭৪ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম আদম শুমারী হয়। কাসেম স্যার সেই কাজের ভার পেয়েছিলেন। স্যার আমাকে সাথে নিয়ে যেতেন আদম শুমারীর কাছে। স্যার তথ্য নিতেন আমি শুনে শুনে সেটা ফরমে লিখে নিতাম। স্যার পরীক্ষার খাতা দেখে স্কুলে নিয়ে আসতেন।

নম্বর যোগ করে প্রথম পৃষ্ঠায় মোট নম্বর লেখার কাজও আমাকে করতে হয়েছে। কাশেম স্যার বেশী দিন শিক্ষকতায় থাকেন নি। তিনি সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার হয়ে চলে গিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ারা সময় স্যারের সাথে একদিন বাসে দেখা হয়েছিলো। তিনি তখন প্রমোশন পেয়ে থানা শিক্ষা অফিসার হয়ে গেছেন।

এরপর আর দেখা হয়নি। জানি না স্যার কোথায় আছেন। আমি এ দু'টি প্রাইমারী স্কুলেই পড়েছিলাম। এ দুই স্কুলের তেরো চৌদ্দ জন শিক্ষক ছিলেন আমার। এ পাঁচ জনের বাইরে একজনের কথা বলতে পারি।

সেটা শিক্ষক হিসাবে নয় আমার চাচা হিসাবে। বাকীদের নাম বা চেহারা আমার মনে নেই। আমার ক্ষেত্রে একটা অদ্ভুত বিষয় ঘটেছে। যে সব শিক্ষক আমাদের নিষ্ঠার সাথে পড়িয়েছেন তাঁদের কথা এবং তাঁদের চেহারা আমার এখনো মনে আছে। যারা গতানুগতিক চাকরী হিসাবে ক্লাসে পড়িয়েছেন তাঁদের নাম বা চেহারা কোনটাই আমার মনে নেই।

অদ্ভুতভাবে আমার স্মৃতি থেকে তাঁরা হারিয়ে গেছেন। (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.