অক্সফোর্ড যাত্রা
আজ ১৫ এপ্রিল। গত রাতে টিভি প্রোগাম থেকে ফিরে আর ঘুমানো হয় নি। ঘুমোতে গেছি ফজরের নামাজের পরে। সে জন্য ঘুম থেকে উঠতে উঠতে দুপুর ১টা হয়ে গেছে। এদিকে মোবাইল ছিল সাইলেন্ট মোডে।
জেগে উঠে দেখলাম ২৮টি রিং। প্রায় সবগুলোই করেছে তাহসীন ও নাঈম ভাই। অক্সফোর্ড থেকে। মনে পড়লো আজ আমাদের অক্সফোর্ড দিবস।
কলব্যাক করলাম তাহসীনকে।
তাহসীন একজন রোমান্টিক কবি। দেশে থাকতে অনেক কবিতা লিখতো। যুক্তরাজ্যে গিয়ে কবিতাকে ছুট্টি দিয়েছে। বললো, কখন আসছেন?
আমি বললাম, দেখি। ভিক্টোরিয়া ষ্টেশন থেকে আসতে হবে তো?
সে বললো, দেখি বললে তো হবে না।
আমি ও নাঈম ভাই আজ ছুটি নিয়ে রেখেছি আপনাকে নিয়ে ঘুরবো বলে।
আমি বললাম, ঠিক করো নি। আমি তো তোমাদের বলিনি আমাকে নিয়ে সারাদিন ঘুরতে হবে। আমি শুধু অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়টি ঘুরে দেখতে চাই।
তাজুল ভাইকে ফোন করলাম।
বললাম, অক্সফোর্ড যেতে চাচ্ছি। ভিক্টোরিয়া স্টেশন থেকে ট্রেন বা বাস চেপে চলে যাবো। তাহসীন, নাঈমরা রিসিভ করবে। ভিক্টোরিয়াটা জানি কোন্ দিকে?
তাজুল ভাই হাসলেন। বললেন, আপনি কি ভাবছেন ব্রিটেনের রাস্তাঘাট সবকিছু আপনার জানা হয়েগেছে? কোথায় যেতে গিয়ে কোথায় চলে যাবেন, পরে তো আবার আমাকেই খুঁজে বের করতে বেরুতে হবে।
হয়ত দেখা যাবে উত্তরে যাবেন, চেপে বসে আছেন দক্ষিণগামী বাসে। তারচে’ ৫টায় তৈরি হোন, গাড়ি নিয়েই চলে যাবো।
বিকেল ৫টায় পেকহাম থেকে অক্সফোর্ড-এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলাম আমরা। আমি ও তাজুল ভাই। সাথে আছে ইউসুফ ও নেজাম।
এগিয়ে চললাম লন্ডন কিং কলেজ হাসপাতালের সামনে দিয়ে। এই হাসপাতালের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো, আমাদের রাশেদ খান মেনন সাহেব কোনো এক সময় যখন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, তখন এই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
একটু সামনে গিয়ে পেলাম অভাল আন্ডার গ্রাউন্ড। এই সেই গ্রাউন্ড, সেভেন সেভেনের পর ব্রিটেনে যখন অঘোষিত কারফিউ চলছে, তখন মুসলমান সন্ত্রাসী ভেবে এখানে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছিলো এক যুবককে। মারার পর অবশ্য জানা গিয়েছিলো ছেলেটি সন্ত্রাসী নয়।
মুসলমানও নয়। সাধারণ এক যুবক।
রাস্তায় মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম উজান-ভাটিতে। এই উজান-ভাটি মানে সার্ভিস সেন্টার। দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্য বিশ্রাম ও খাবার দাবারের ব্যবস্থা।
চমৎকার ব্যবস্থা। নামাজ আদায় করলাম। আমার অজু ছিলো। তাজুল ভাই আমাকে কম্পাস বের করে দিয়ে বললেন, আপনি নামাজ পড়ে ফেলুন। আমরা অজু করে আসি।
আমি কম্পাসের সাহায্যে দিক নির্ণয় করে ইতমিনানের সাথে নামাজ আদায় করলাম। সালাম ফেরানোর পর তাজুল ভাই হাসতে হাসতে বললেন, আরে! আপনি তো ক্বিবলাকে পেছনে রেখেই নামাজ পড়ছেন!
আমি বললাম, জ্বি না স্যার। দিক ঠিক আছে। আমি কম্পাস ফিট করে পশ্চিম দিকেই নামাজ পড়েছি। এই দেখুন।
আমি তাকে কম্পাসের কাটা দেখালাম।
তিনি বললেন, পশ্চিম দিকে নামাজ পড়তে আপনাকে কে বলেছে? আপনি তো নামাজ পড়বেন কিবলার দিকে। এখান থেকে ক্বিবলা কি পশ্চিম দিকে নাকি?
তখন আমার খেয়াল হলো লন্ডন থেকে কা’বা শরীফের অবস্থান তো উত্তর পূর্ব দিকে। বললাম, সমস্যা নেই তাজুল ভাই। নামাজ হয়ে যাবে।
আমি তো চিন্তা-ফিকির করে দিক ঠিক করেই নামাজ পড়েছি। আর আল্লাহ তো সবদিকেই আছেন।
নামাজ শেষে কফি খেয়ে আমরা আবার যাত্রা করলাম। লন্ডন সিটি থেকে অক্সফোর্ডের দূরত্ব ৭০ মাইলের মতো। এখন আমরা যেখানে আছি এখান থেকে ৩৪ মাইল।
প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে মটরওয়ে ধরে আমরা এগিয়ে চললাম অক্সফোর্ডের দিকে। রাত ৯টা ৩০ মিনিটে আমরা গিয়ে পৌছলাম অক্সফোর্ড এর রোজহিল এলাকায়। মাওলানা আসগর হোসাইন সাহেবের বাসায়।
চা নাস্তার বিশাল আয়োজন ছিল। ছিলো দেশি স্বাদের পিঠাও।
নাস্তার ফাঁকে ফাঁকে কথার আসর জমে উঠলো। তাহসীন-নাঈমের শশুর মাওঃ আসগর হুসাইন সাহেব অনেক বিষয় নিয়ে খোলামেলা ভাষায় কথা বললেন। দীর্ঘদিন সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেছেন। কথাবার্তায় পরিস্কার হলো ইসলামী রাজনীতির উপর তিনি এখন পুরোদমে নাখোশ।
আমি ও তাজুল ভাই মওকা পেয়ে স্পর্শকাতর অনেক প্রশ্ন করলাম তাকে।
বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতি, উলামায়ে কেরাম, কওমী মাদরাসা সবকিছু নিয়ে। তিনি খুশিমনে এবং খোলামেলাভাবেই কথা বললেন। প্রসঙ্গের প্রয়োজন থাকায় আলাপচারিতা আর বর্ণনায় গেলাম না।
রাত ১১টায় হেভি খাওয়া-দাওয়া হলো চাচার বাসায়। খেয়ে-দেয়ে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমরা।
আর দেরি করলে আসল কাজটি আর করা হবে না। আমাদের আজকের টার্গেট তো অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দর্শন। নাঈম ভাই ও তাহসীন আমাদের নিয়ে চললো অক্সফোর্ড বিশ্ব বিদ্যালয় অভিমুখে।
...ক্রমশ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।