আফতাব আলী সাহেবের বাসায় দুপুরের খাওয়া দাওয়া হলো। বিদায় নিয়ে আবারো পথে নামলাম আমরা। তাজুল ভাই বললেন, চলেন, ‘চ্যানেল এস’ এর অফিস থেকে ঘুরে আসি।
ফরেষ্টগেট থেকে আমরা যাচ্ছি ‘চ্যানেল এস’-এর অফিসে। রাস্তার দু’ধারেই অনেকগুলো বাঙালি দোকান চোখে পড়লো।
ফরেষ্টগেট পুলিশ ষ্টেশনের একদম কাছেই একটি দোকানের সাইনবোর্ড আকর্ষণ করলো আমাকে। কারণ দোকানের নাম ‘বন্দর বাজার’। ফরেষ্টগেট অভার গ্রাউন্ডের একটু সামনেই রয়েছে বালাগঞ্জের মাওলানা গোলাম কিবরিয়া সাহেবের মাদ্রাসা, জামেয়া দারুস সুন্নাহ।
দুপুর ৩টা ২০ মিনিট। আমরা গিয়ে হাজির হলাম ব্রিটেনের বাংলা টেলিভিশন ‘চ্যানেল এস’ এর অফিসে।
রিসিপশনে গিয়ে তাজুল ভাই বললেন, আমরা মাহি ভাই’র সাথে দেখা করতে এসেছি।
রিসিপশনিষ্ট বললো, অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এসেছেন?
তাজুল ভাই বললেন, না।
তাহলে তো দেখা হবার সম্ভাবনা কম। আপনাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে আসা উচিৎ ছিলো।
তাজুল ভাই বললেন, আপনি গিয়ে বলুন তাজুল ইসলাম এসেছেন।
সে বললো, বলতে পারি। তবে লাভ হবে বলে মনে হয় না। বলেই সে থরথর করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো। ২ মিনিট পর ফিরে এসে জানালো, স্যার সাদাদের সঙ্গে মিটিং করছেন। আপনারা বসে অপেক্ষা করতে পারেন।
ভাগ্য ভাল হলে দেখা হয়ে যেতে পারে।
আমরা ভাল ভাগ্যের অপেক্ষা করবো কিনা ভাবছি, এরই মধ্যে জলিল সাহেব চলে এলেন। চ্যানেল ‘এস’ এর প্রতিষ্ঠাতা জনাব মাহি ফেরদৌস জলিল। এসেই বললেন, আরে তাজুল ভাই যে! কখন এলেন?
তাজুল ভাই বললেন, এইতো, এই মাত্র। আপনি বোধ’য় মিটিং-এ ছিলেন।
স্যরি ফর ডিস্টার্ব।
তিনি বললেন, সমস্যা নেই। তবে আজ খুব বেশি সময় হয়ত দিতে পারবো না।
তাজুল ভাই বললেন, খুব বেশি সময় নেব না মাহি ভাই। আমাদেরও ব্যস্ততা আছে।
তারপর আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন একজন লেখক হিসেবে। আমি আমার দু’টি বই দিলাম তাকে। বললাম, ছোট্ট একটি প্রশ্ন করতে চাই আপনাকে। যদি কিছু মনে না করেন।
তিনি বললেন, নো প্রভলেম।
আমি বললাম ‘চ্যানেল এস’ এর মানে কি? আমরা কি ধরে নিতে পারি ‘এস’ ফর সিলেট?
হাসলেন তিনি। বললেন, অনেক কিছু চিন্তা করে চ্যানেলের নাম ‘এস’ রেখেছি। ‘এস’ ফর সেভেন। সাত দিন, সাত আসমান, সাত জমিন, সাত তারকা, আরো অনেক কিছু আছে।
অবশ্য মাহি ভাই’র বাড়ি সিলেট মৌলভীবাজারে।
আর তিনি তার চ্যানেলে সিলেটি ভাষাই ব্যবহার করেন বেশি। সুতরাং সিলেটের প্রতি তার একটা বিশেষ আকর্ষণ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং ‘এস’ মানে সিলেট, আমরা বলতেই পারি।
আমি মাহি ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, এত প্রফেশন থাকতে আপনি এই লাইনে এলেন কেন? আপনার ভিশন কী ছিল?
তিনি বললেন, নলেজ শেয়ারের সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে টিভি মিডিয়া। আমি টেলিভিশনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির জন্য কিছু করতে চাই।
বললাম, কতটুকু সফল হয়েছেন বলে মনে করছেন?
গর্বিত ভঙ্গিতে বললেন, দেখুন, সবকিছু আল্লাহর হুকুমে হয়। আমি আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থাশীল। যখন যাই চেয়েছি তার কাছে, পেয়েছি আমি। ২০০৪ সাল থেকে আমার চ্যানেল টপ পজিশনে আছে। সিলেট, মৌলভীবাজার মিলিয়ে ৫০০ স্টাপ কাজ করেন চ্যানেল ‘এস’ এর সাথে।
চেষ্টা করছি চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে।
১ ঘন্টা ৩০ মিনিট জমিয়ে আড্ডা হলো মাহি ভাই’র সাথে। অনেক বিষয়ে খোলামেলা কথা বললেন। ম্যাক্সিমাম কথাই বললেন অফ দ্যা রেকর্ড। আমাকে অনুরোধ জানালেন, এ কথাগুলো ফ্রেংকলি বলছি।
এগুলো লিখবেন না প্লিজ। সঙ্গত কারণেই হযরত শাহজালাল’র ইতিহাস, মাজারের কাণ্ডকীর্তি, ব্রিটেনে কিছু আলেমের ফান্ডরাইজিং সংক্রান্ত অস্বচ্ছতার গল্প ইত্যাদি বিষয়ে মাহি ভাই’র কথাগুলো এড়িয়ে যেতে হচ্ছে। আমি সেদিকে যাচ্ছি না। বিদায় নিয়ে চলে এলাম আমরা।
মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম এশাআতুল ইসলাম ফোর স্কয়ার মসজিদে।
নামাজের পরে বসা হলো ব্রিটিশ হজ্ব এসোসিয়েশনের সেক্রেটারী এবং আদর্শ বালাগঞ্জ ওসমানীনগর উপজেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনাব মোঃ গোলাম রব্বানীর সাথে। বালাগঞ্জের বোয়ালজুরের মানুষ। অফিস ব্রিকলেনে। তিনি বনফুলের গরম জিলেপী খাওয়ালেন।
সেখান থেকে বেরিয়ে ঢু মারলাম লন্ডনের সবচে’ বড় এবং ঐতিহ্যবাহী বাংলা বই’র দোকান সঙ্গিতা লিমিটেডে।
দেখলাম আমাদের হুমায়ূন আহমেদ সাহেব উল্লেখযোগ্য থাড়িয়াগুলো দখল করে বসে আছেন। , তাই কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে বেরিয়ে এলাম।
পাশেই আছে আরেকটি বইয়ের দোকান। মীরা প্লাস। সেখান থেকে একটি পান মুখে দিলাম।
একটি পান ৭৫ পেন্স। বাংলাদেশি টাকায় ৮০ টাকা। আমি বললাম, দামটা একটু বেশি হয়ে গেল না?
মালিক বললেন, আপনি কোথায় থাকেন?
বললাম, আমি মাত্র ক’দিনের মেহমান। আমার বাড়ি সিলেট বালাগঞ্জে।
দোকানী বললেন, আমি গোলাপগঞ্জের।
আপনি কী করেন?
বললাম, লেখালেখি।
সম্ভবত একজন লেখকের প্রতি তার মমতা জেগে উঠলো। তিনি আমার কাছ থেকে ২৫ পেন্স কম রাখলেন। ৫০ পেন্স। তাও তো ৫৩ টাকার মত।
মন মানবে কী করে!
সেখান থেকে আমরা সরাসরি চলে গেলাম হোয়াইট চ্যাপেল রেনেসাঁ সাহিত্য মজলিসের নির্ধারিত প্রোগ্রামে।
...চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।