অবশেষে দিনের শেষে
বৃটিশ এ্যাম্বেসি থেকে আমি ভিসা পাই ২৯শে অক্টোবর ২০০৯। ভিসার মেয়াদ ৬ মাস। আমি যাত্রা করলাম ২১শে মার্চ ২০১০ইং। এর মানে ৬ মাসের মধ্যে পৌনে ৫ মাস আমি আমার দেশেই ভিজিট করে ফেলেছি। ঢাকা থেকে ফ্লাইট ২১ তারিখ ভোর ৫টায়।
সিলেট থেকে বের হতে হলো ২০ তারিখ বিকেলে। আমার সাথে খালিক চাজি। খালিক চাজি মানে মাওলানা আব্দুল খালিক। কোনো একদিন তিনি খালিক ভাই-ই ছিলেন। ডারউইন সাহেবের বিবর্কোতনবাদের সূতটি এখানে কাজ করেছে।
খালিক ভাই থেকে খালিক খালিক চাচা। খালিক চাচা থেকে খালিক চাচাজি। চাচাজি থেকে চাজি। কারণ ছাড়াই খালিক ভাই একদিন হয়ে যানখালিক চাজি! । সেই থেকে শুরু।
এখন তিনি মোটামুটি গণচাচায় পরিণত হয়েছেন।
একদিন ফোনে কথা বলছিলাম আম্মার সাথে। চাচা আমার পাশে। আম্মাকে বললাম, নাও, চাচার সাথে কথা বলো, অবশ্য তোমার ‘ভইনপুতই’ লাগে।
আম্মা বিস্মিত! এটা কেমন কথা? তোর চাচা হলে আমি তার খালা হই কী করে রে!
বললাম, ওসব তোমার বুঝার দরকার নেই মা।
আমি তাকে চাচা ডাকি, সেটা কোনো সমস্যা না। তুমি তার খালাই লাগো।
এই হলেন আমাদের খালিক চাজি।
সিলেট থেকে ঢাকার বাসের টিকেটটা চাচাই করলেন। রাত ১০টায় ঢাকা পৌছলাম।
সরাসরি চলে গেলাম মাওলানা মুশতাক সাহেবের বাসায়। মুশতাক ভাই আছেন কমপ্লিট বেড রেষ্টে। সপ্তাহখানেক হলো ছোটখাটো একটা অপারেশনের ভেতর দিয়ে এসেছেন। বাসায় রাতের খাবার খেলাম। মুশতাক ভাই আমাকে চলাফেরা সংক্রান্ত গাইড লাইন দিলেন।
কীভাবে চলতে হবে, কীভাবে চলা ঠিক হবেনা-ইত্যাদি।
রাত ১২টায় দেখা করলাম বাংলাদেশ মাওঃ নেজাম উদ্দিন সাহেবের সাথে। তিনি আমার একজন প্রিয় উস্তাদও। একাধিকবার যুক্তরাজ্য সফরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। আমি দিক নির্দেশনা চাইলাম।
তিনি বললেন, তুমি নিজেই তোমার দিক খুঁজে নিতে পারবে। আমি শুধু এটুকুই বলবো, ওখানে লোকের সময় নেই আবার প্রচুর সময় আছে। এই সময়টুকু তারা কাজে লাগায় পরস্পর দোষারোপ’র কাজে। গীবত করে করে। তুমি শুধু শুনেই যাবে।
খেয়াল রাখবে কারো কথার সাথে তোমারও কোনো কথা যাতে যুক্ত না হয়। তুমি থাকবে তোমার মতো।
হুজুরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে এলাম পল্টনে, মুশতাক ভাই’র বাসায়। রাত সাড়ে ১২টা বেজে গেছে। মুন্না এবং সাধু গাড়ি করে নিয়ে চললো আমাদের।
বিমান বন্দরের পাশে উত্তরায় অপেক্ষা করছে আশিক ভাই। ২০ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম ওখানে।
মুন্না ও সাধুর সাথে আমার সম্পর্কের সম্বোধনটা একটু আজিব! সাধু হলো মুশতাক ভাই’র ভাগনে। এই ‘সাধু’ সন্যাসীর সাথেরটা না। ছোটবেলা থেকে ওকে আদর করে সাধু ডাকা হয়।
ভাল নাম ইমরান আহমদ। অবশ্য এখন সে মুরব্বীর কাতারে চলে এসেছে। রীতিমত দু দু’টি কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা সে। আমি তাকে ভাগনে ডাকি। সঙ্গতকারণেই তার বাবাকে ডাকি দুলাভাই।
অথচ সে আমাকে রশীদ ভাই-ই ডাকে!
মুন্নাও যেহেতু মুশতাক ভাইকে মামা ডাকে, সেই সুবাদে তাকেও মাঝে মধ্যে ভাগনা বলি। অথচ মুন্নার আম্মাকে আমি মুখ ভরে খালাই ডাকি।
উত্তরায় আশিক ভাই’র ওখানে রীতিমত একটি আড্ডা জমে উঠলো। আশিক ভাই মহিউদ্দিন ভাই সহ আরো কয়েকজন জড়ো হয়ে আছেন। চা নাস্তা ও ঠান্ডার আয়োজন করাই ছিলো।
ঘন্টা দেড়েক জমিয়ে আড্ডা হলো ওখানে। রাত ২টা মতন বেজে গেছে। ফ্লাইট ৫টায়। ২/৩ ঘন্টা আগেই এয়ারপোর্টে রিপোর্ট করতে হবে। সুতরাং আর দেরি করা ঠিক হবে না।
সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ছুটে চললাম এয়ারপোর্টের দিকে। মুন্না সাধু এবং খালিক চাজি সহ ৫ মিনিটেই গিয়ে হাজির হলাম ঢাকা বিমান বন্দরের সামনে। সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ধিরে ধিরে প্রবেশ করলাম সদ্য সাবেক জিয়া, বর্তমান হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের অভ্যন্তরে।
... চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।