আন্ নূর ইসলামিক স্কুল
দুপুর ১২টা। গেলাম তাজুল ভাই’র প্রতিষ্ঠান আন নূর ইসলামিক স্কুল পরিদর্শনে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রী আছে। নাইজেরিয়া, উগান্ডা, পাকিস্তান, গাম্বিয়া, মরিশাস, সোমালিয়া, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের ছেলে মেয়ে। এদেরকে পড়ানোও একটা ব্যাপার।
ইন্টারন্যাশনাল মগজের দরকার।
নাইজেরিয়া ও আফ্রিকার দু’টি ছেলেকে অনেক কাবিল মনে হলো। দুষ্টুমী সাবজেক্টে। কাউকে চিমটি দিচ্ছে তো কাউকে ভেংচি কাটছে। কখনো পা লম্বা করে সামনে বাড়িয়ে বসে আছে।
এদেরকে চমৎকার দক্ষতায় কন্ট্রোল করছেন তাজুল ভাই। সাহায্য করছে আশরাফ। জামেয়া মাদানিয়ার হিসাব বিভাগের প্রধান সুয়েজ আফজল খান সাহেবের ছেলে আশরাফ খান।
ব্রিটেনে ছাত্রের গায়ে হাত তোলার তো প্রশ্নই আসে না। যত দুষ্টুমিই করুক, কড়া করে ধমক পর্যন্ত দেয়া যাবে না।
বুঝিয়ে সুজিয়ে আদর দিয়ে তাকে লাইনে আনতে হবে। লাইনে আনছেনও।
আমাদের দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মক্তবগুলোতে যারা ছোট্ট শিশুদের পিটিয়ে লাল করে ফেলেন, লাল ডাউন, নীল ডাউনসহ শাস্তির নিত্যনতুন কৌশল প্রয়োগ করেন, অমানবিক প্রক্রিয়ায় শাস্তি দেন আর বলেন, বাচ্চাদের বেত ছাড়া কন্ট্রোল করা যায় না, তাদেরকে যুক্তরাজ্যের এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে যদি একবার ভিজিট করিয়ে দেখানো যেত, তাহলে তারা বুঝতেন শিক্ষাটা কার বেশি দরকার। ছাত্রদের? নাকি শিক্ষা দেয়ার কৌশল শিক্ষা, শিক্ষকদের?
দুপুর একটায় হাটতে বের হলাম পেকহাম রোডে। দেখলাম একটি মেয়ে, বয়স ১৪/১৫ হবে, ভিক্ষে করছে।
অত্যন্ত নজর কাড়া মায়াবী চেহারার এই মেয়েটির গায়ের কাপড়-চোপড় যথেষ্ট শালীন ও মার্জিত। লং ম্যাক্সি পরা। মাথায় স্কার্ফ। সিগনালে গাড়ি থামলেই সে কাছে গিয়ে হাত পাতছে। দূরে থেকেই তার অজান্তে একটি ছবি তুলে ফেললাম আমি।
পেটে কিছু ক্ষিধে অনুভূত হলো। পাশের দোকানে গিয়ে বললাম, একটি কলা দিন।
দোকানী ভাবলো, আমি বুঝি কলা সাহায্য চাইছি। আমার হাতে একটি কলা ধরিয়ে দিলো। আমি যখন কলার দাম রাখার জন্য ৫ পাউন্ডের নোট এগিয়ে দিলাম, তখন সে বললো, লাগবে না।
বিব্রত হলাম আমি! এই ব্যাটা আমাকে দেখছি ফকিরই ভেবেছে। বললাম, লাগবে না মানে কি? কলার দাম নেবেন না কেন? আমি তো আপনার কাছে সাহায্য চাই নি।
কথা বলছি দোকানীর সাথে। গোজরাটি মুসলমানের দোকান। হঠাৎ আমাকে কিছু বলার ও বুঝার সুযোগ না দিয়েই পাশে থাকা কালো এক বৃদ্ধা মহিলা আমার হাতে ২ পাউন্ডের একটি কয়েন গুজে দিয়ে দিল।
আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই চলে গেল হন হন করে।
আমি থ বনে গেলাম। আচ্ছা মুসিবতে পড়া গেছে। কলার দাম ৫০ পেন্স দিয়ে ভাবতে লাগলাম এই দুই পাউন্ড এখন কী করবো? ফেলে দেয়া তো অন্যায়। কিন্তু করবোটা কী?
ভিক্ষে করা মেয়েটি তখন সামনে এসে দাঁড়ালো।
হাত পেতে বললো, একটু সাহায্য করেন না প্লিজ? পরিস্কার হিন্দিতেই বললো। ভাবলাম ইন্ডিয়ান বা পাকিস্তানী মেয়ে। নাম জিজ্ঞেস করলাম। বললো, নাহিনা।
দেখা গেল আমার অনুমান সত্যি না।
সে কসভোর মেয়ে। ইহুদীদের দ্বারা নির্যাতিত তার ফ্যামিলি। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। থাকে ইন্ডিয়ান ফ্যামিলির সাথে। সেজন্যই বোধ’য় হিন্দিটা শিখে ফেলেছে।
বললাম, কাজ না করে ভিক্ষে করছো কেন মেয়ে?
বললো, ভাই, এদেশের মানুষের নজর ভাল না। মেয়েদের ওরা ভোগের সামগ্রী মনে করে। এক জায়গায় কাজ করতাম। দেখা গেল আমার কাজের চে’ শরীরের দিকেই তাদের নজর বেশি। কাজ ছেড়ে দিয়েছি।
আমি অই দুই পাউন্ডের সাথে আরো এক পাউন্ড ধরিয়ে দিলাম মেয়েটির হাতে। মনে মনে বললাম, যার মাল তার যাকাত।
সে স্ব-কৃতজ্ঞ সালাম জানিয়ে চলে গেল।
বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার খেলাম। তাজুল ভাই আমার জন্য একটি ল্যাপটপ কিনে এনেছেন।
গত দিন দেখেছেন কাগজ কলম নিয়ে বসে একটি আর্টিক্যাল লিখছি ইউরোবাংলা পত্রিকার জন্য, যা আজ ছাপা হয়েছে। বললেন, আপনি একুশ শতকের লেখক। আপনি লিখবেন কম্পিউটারে, কাগজ কলমে নয়।
তাকে আমি আর বুঝিয়ে বলতে পারলাম না কাগজ কলমে লিখলে যে মুডে লেখা যায়, যে তৃপ্তি মিলে, যন্ত্রের লেখায় সেটা পাওয়া যায় না।
ওয়েস সাহেবের উপর দায়িত্ব পড়লো আমার ল্যাপটপে প্রোগ্রাম সেটিং করে দেয়ার।
সফট্ওয়ার ইন্সটল করে দেয়ার। আগেই একবার বলেছি এই ভদ্রলোক আবার মহাব্যস্ত। ক্লাস থাকলে কলেজে যান। শুক্র ও শনি দুই দিন কাজ করেন সেন্সবাড়ি সুপার মার্কেটে। দুই দিন মানে দুই রাত।
এবং কাজের পরের দুই দিন যথারীতি ঘুম দেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। বাকী সময় কাটান হয় বন্ধু বান্ধবের সাথে ঘুরে নয়তো ইন্টারনেটে।
আজ থেকে শুরু হয়েছে ব্রিটিশ এয়ারওয়াইজের কেবিন ক্রুদের ৪ দিনের দ্বিতীয় দফা ধর্মঘট। সবগুলো ব্রিটিশ বিমান বন্ধ রয়েছে। আর এই ধর্মঘটের কারণে প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে ৭০ লাখ পাউন্ড!
ব্রিটেনের বিরোধীদল (বর্তমান সরকারী দল) কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডেভিট ক্যামেরন (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) এই ধর্মঘটের জন্য দায়ি করছেন (সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া) প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনকে।
এদিকে ১৬ বছরের মধ্যে এই প্রথম রেল ধর্মঘটেরও ডাক দেয়া হয়েছে। একদিকে কেবিন ক্রু-দের অসন্তোষ, অন্যদিকে আসন্ন রেল ধর্মঘট, আবার ৬ মে সাধারণ নির্বাচন। সব মিলিয়ে বেচারা গর্ডন ব্রাউন পড়েছেন বিব্রতকর অবস্থায়।
...চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।