তিন কন্যার সাক্ষাৎকার
রাতে বসলাম তাজুল ভাই’র তিন মেয়ে সাবিহা ইসলাম নওশীন, সায়মা ইসলাম মাহজাবিন এবং নাশিতা ইসলাম নওরীনকে নিয়ে। উদ্দেশ্য, তাদের কাছ থেকে তাদের শিক্ষাব্যবস্থা সম্বন্ধে জানা। তাদের চোখে ইংল্যান্ডের কালচারকে দেখা।
বড় মেয়ে সাবিহা, বয়স ১১। সে পড়ে Harris girls Acadamy তে।
এটির অবস্থান East dulwich । দ্বিতীয় মেয়ে সায়মা এবং তৃতীয় কন্যা নাশিতা। এরা দুজনে পড়ে জনডন (Jhon dohon) প্রাইমারী স্কুলে।
প্রথমেই সাবিহার কাছে জানতে চাইলাম, তোমার স্কুলে ছাত্র সংখ্যা কত?
সে জবাব দেবার আগেই নাশিতা, সবেমাত্র স্কুলের সিঁড়ি ডিঙাতে শিখছে, বললো, আগে আমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। আমার ইন্টারভ্যূ আগে নিতে হবে।
আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে। তুমিই বলো।
সে বললো, তার আগে বলুন, আপনাকে কী ডাকতে হবে? মামা নাকি চাচা? তিনজনই এতে সায় দিলো।
তাদের এই প্রশ্ন করার পেছনে কারণ হলো, তারা লক্ষ্য করছে তাদের মা’কে আমি আপা সম্বোধন করছি। সুতরাং মামা।
কিন্তু প্যাঁচ খেয়ে যাচ্ছে তখন, যখন দেখছে তাদের বাবাকে আবার দুলাভাই না বলে তাজুল ভাই বলছি!
তাদের প্রশ্নটি জটিল। বলটি আমি তাদের কোর্টেই ঠেলে দিলাম। বললাম, তোমরাই ঠিক করো, আমাকে কী ডাকতে চাও?
তারা কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করলো। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বড়রা যেভাবে কপালে ভাজ ফেলে ঠোট কামড়ে চিন্তা করে, অনেকটা সেভাবেই চিন্তা করতে লাগলো তিন কন্যা। তারপর তারা ঐক্যমত্তের ভিত্তিতে জানালো, মামা।
আমি বললাম, ঠিক আছে। নাশিতাকে বললাম, নাশু, তোমার সাথে অনেক লম্বা ইন্টারভ্যু হবে তো। তাই তোমাকে নিয়ে পরে একা বসছি। ওদের সাথে আগে কথা বলে নিই।
সে মাথা কাত করে সায় দিলো।
সাবিহা আমাকে জানালো, তাদের স্কুলে ৯০০ মেয়ে পড়ে। শিক্ষক ৯০ জন। আলাদা আলাদা সেকশন আছে। তাদের সেকশনে তারা ২৯ জন আছে এক সাথে।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কি স্কুল ভালো লাগে?
সে বললো, অফকোর্স।
কেন?
কারণ ওখানে পড়ালেখার পাশাপাশি সাইন্স প্রাক্টিস আছে, ড্রামা আছে। শিক্ষকরা হেল্পফুল। বকা দেয় না।
আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, কোন্ দেশ তোমার বেশি ভাল লাগে? ইংল্যান্ড না বাংলাদেশ?
আমার উদ্দেশ্য দেখি সে কী বলে? তার জন্মভূমি তো ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ তো তার জন্মভূমি না।
অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে সে বললো, দু’টোই। সে পার পেয়ে যেতে চাইলো। আমিও ছাড় দিতে রাজি হলাম না। বললাম, দু’টোর মধ্যে কম্পেয়ার করতে বললে তুমি কোনটি কে অগ্রাধিকার দেবে? কোনটি তোমার কাছে বেশি প্রিয়?
এবারও তাকে ধরা গেল না। হাত ফস্কে বেরিয়ে গেল।
বললো, দেখুন মামা, দু'টি দেশতো আলাদা, দুটি'রই ভাল দিক আছে মন্দ দিকও আছে। যেমন, ইংল্যান্ডকে আমার ভাল লাগে কারণ এখানে ডিসিপ্লেন আছে। নিরাপত্তা আছে। হিউম্যান রাইটস আছে। আবার বাংলাদেশে প্রচুর জায়গা আছে।
বাসা বাড়িতে স্পেস বেশি। ইচ্ছেমতো নড়াচড়া করা যায় যেটা এদেশে সম্ভব হয় না। মানুষের মাঝে আন্তরিকতাও বেশি। তবে বাংলাদেশের রিক্সা ব্যাপারটি আমার বিরক্ত লাগে।
তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
এই প্রশ্নটি তাকে করার পর সে বললো, আমি অনেক টাকা আর্ন করতে চাই।
তারপর সেই টাকা বাংলাদেশের সেইসব অঞ্চলের নীডি মানুষের মাঝে বিতরণ করতে চাই যারা দু’বেলা খেতে পারে না।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাকে যদি একদিনের জন্য ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তোমার প্রথম কাজ কী হবে?
সে জবাব দিলো, প্রথমেই সেই সকল মানুষকে হত্যা করে ফেলবো যারা মুসলমানকে ঘৃণা করে। কষ্ট দেয়। যারা বিশ্বের নিরীহ মুসলমানদের শিশুকে মেরে ফেলে।
আমি বললাম, তোমাকে শেষ প্রশ্ন সাবিহা, তুমি তো মুসলিম, মাথায় স্কার্ফ পরে স্কুলে যাচ্ছো।
আচ্ছা সংখ্যালঘু বা মুসলমান হিসেবে স্কুলে তোমাকে অন্য চোখে দেখা হয় কিনা? অর্থাৎ কখনো কি তোমার মনে হয় মুসলমান মেয়ে বলে তোমাকে হেয় করা হচ্ছে বা তাচ্ছিল্যের চোখে দেখা হচ্ছে?
সে বললো, অফকোর্স নট। অবশ্যই না। তারপর সে উঠে গিয়ে তার স্কুলের প্রসপেক্টাস এনে দেখালো আমাকে। সেখানে পরিষ্কার লেখা আছে The Acadamy has no religious offilation and will admit student of any or no faith;
এবারে সায়মার পালা। সায়মাকে বললাম, তোমার বয়স কত সায়মা?
সে বললো, এইট।
তোমার ক্লাসে, তোমার সেকশনে ছাত্র কত?
সে বললো, টুয়েন্টি ফোর।
তোমার ক্লাসের নাম কি?
Bean red 3
স্কুলের পরিবেশ কেমন?
এক্সেলেন্ট!
কী হতে চাও তুমি?
আমি একজন ডক্টর কাম লেখক হতে চাই।
কেন? ডাক্তার কেন?
যারা পয়সার অভাবে চিকিৎসা পায় না, তাদেরকে ফ্রি চিকিৎসা দেবো?
আর লেখক?
সে মুছকি মুছকি হাসতে লাগলো। কথাটি সে আমাকে খুশি করার জন্যই বলেছে। বাচ্চাদের সিক্সথ সেন্স প্রবল হয়।
কথার মধ্যেখানেই ইন্টারফেয়ার করলো নাশিতা। সে বললো, মামা, ও আমাকে কপি করছে। আসলে আমি তাকে কাল বলেছি আমি মামার মতো লেখক হবো। সে আমারটা বলে দিয়েছে। চিট করেছে।
আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে। এসো এবার তোমার পালা।
সে কাছে এসে আয়োজন করে বসলো।
বললাম, স্কুল তোমার ভাল লাগে কেন?
সে বললো, স্কুল তো ভাল লাগারই জায়গা। টিচাররা আদর করে।
তারপর আমি জিজ্ঞেস করার আগেই আমাকে বললো, মামা এবার আমাকে কোশ্চেন করো, আমি বড় হয়ে কী হতে চাই?
আমি হেসে ফেললাম। ছোট বাচ্চাদের কৌতূহল একটু বেশিই হয়। বললাম, ঠিক আছে বলো?
সে বললো, প্রশ্ন করো?
বললাম, আচ্ছা নাশু, তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?
সে বললো, অনেক টাকা আর্ন করতে চাই। আর রাইটার হতে চাই।
কী করবে টাকা দিয়ে?
তোমার বই পাবলিশিং করবো আর গরীব মানুষকে খাওয়াবো।
আর লেখক হয়ে? কী লিখবে?
সুন্দর সুন্দর গল্প। হাসির গল্প।
সে আরো অনেক বক্তৃতা দিতে প্রস্তুত ছিলো। আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, নাশু, আজ আর না, তোমার ইন্টারভ্যূ প্রতিদিনই নেয়া হবে।
সে বলল, ঠিক আছে।
...চলবে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।