আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিলেতের হাওয়া (১১)



অক্সফোর্ড সার্কাস আজ ২৪ মার্চ ২০১০। সকালে নাস্তা করেই বেরিয়ে পড়লাম। সাথে ইউসুফ ও ওয়েস। গাড়ি ছাড়া বের হলাম। বাসে চড়ার ব্যাপারটিও জানা দরকার।

সেদেশে বাসগুলো খুবই উন্নতমানের। গোটা লন্ডন শহরের যেখানেই যেতে চান আপনি, বাসে যেতে পারবেন। প্রতিটি বাসের নাম্বার আছে। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো, আপনার গন্তব্যের বাসের নাম্বারটি শুধু জেনে রাখা, ব্যস। বাস ভাড়া, যেখানেই যান, এক পাউন্ড ৩০ পেন্স।

ভাড়া পরিশোধ করতে হয় কার্ডে। ট্রাভেল কার্ড করে নিতে হয়। মেয়র অব লন্ডন অফিস থেকে ইস্যু হয় এই কার্ড। এগুলোকে বলা হয় ওয়েষ্টার কার্ড (Oyester card)। মোড়ে মোড়ে রয়েছে কার্ড-এর এজেন্সি।

যে কোনো একটা থেকে ৫ পাউন্ড দিয়ে কার্ড করা যাবে। বাসে উঠার আগেই কার্ডে পয়সা রিচার্জ করে নিতে হয়। পয়সা ছাড়া বাসে উঠলে এবং নগদ পরিশোধ করলে দ্বিগুন ভাড়া দিতে হয়। আবার ৩ বার ভ্রমণ করার জন্য ৩ পাউন্ড ৯০ পেন্স রিচার্জ করে ফেললে এটা হয়ে গেল ওয়ানডে কার্ড। সাধারণ হিসেব মতো আপনার তিনবার ভ্রমণ করার কথা।

কিন্তু আপনি পরবর্তী ২৪ ঘন্টা যতবারই ভ্রমণ করুন, আপনাকে আর পয়সা দিতে হবে না। আপনার কার্ড গ্রীণ সিগনাল অব্যাহত রাখবে। ও হ্যাঁ, কার্ড ব্যবহারের নিয়মটি বলা হয় নি। প্রতিটি গাড়িতেই ড্রাইভিং সিটের পাশে মেশিন বসানো থাকে। আপনি বাসে চেপেই মেশিনে আপনার কার্ড টাচ করাবেন।

আপনার কার্ডে পয়সা থাকলে সবুজ বাতি জ্বলবে। পয়সা না থাকলে লাল। আমাকে ৫ পাউন্ড দিয়ে কার্ড কিনতে হলো না। দক্ষিণাধিকার সূত্রে আপা’র কাছ থেকে ফ্রি কার্ড পেয়ে গেলাম আমি। পেকহাম থেকে ৩৪৩নং বাসে চেপে আমরা চলে গেলাম লন্ডন ব্রিজে।

লন্ডন ব্রিজের একদম কাছেই ওয়েস সাহেবের কলেজ। লন্ডন কলেজ অব এডভান্স ষ্টাডিজ। লন্ডন ব্রিজ ঘুরে বেড়ালাম কিছুক্ষণ। ব্রিজ থেকে আমাকে বেশি আকর্ষণ করলো ব্রিজের পাড়। টেমসের পাড়কে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পর্যটকদের জন্য।

টেমসের বাধানো পাড় দিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। সাদা এবং ধুসর রংয়ের টাইলস বা মার্বেল পাথরে নদীর পাড়কে এত সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে যে, শুধু হাটতেই ইচ্ছে করে। হাজার হাজার মানুষ হাটছে। হাটছি আমরা। ক্লান্ত সুখের ভিন্নরকম অনুভূতি নিয়ে আমরা ঘুরছি।

নদীতে স্পিডবোট ছুটাছুটি করছে। অগুলো পুলিশের গাড়ি। টহল দিচ্ছে তারা। ভ্রাম্যমান, ভাসমান, দু’ধরনের রেষ্টুরেন্টই আছে। রিনরিনে বৃষ্টি পড়ছে।

চা-কফির পরিবর্তে আমরা বৃষ্টি খাচ্ছি। খেতে মন্দ লাগছে না। আর মনে মনে হিসেব মেলাতে চেষ্টা করছি, এই সৌন্দর্য্যরে পেছনে কত বিলিয়ন পাউন্ড খরছ করা হয়ে থাকতে পারে! দুপুরে ফিরে এলাম বাসায়। খেয়ে-ধেয়ে বিশ্রাম নিলাম। সন্ধ্যা ৮টা ৩০ মিনিটে আবার বের হলাম।

এবারের উদ্দেশ্য ইংলিশ কালচারের সাথে একটু পরিচিত হওয়া। ওয়েস সাহেব আমাদের নিয়ে চললেন অক্সফোর্ড সার্কাসের দিকে। ওয়েস আমাদের আমির। আমির সাহেবের সাথে আমি ও ইউসুফ। ১২নং বাস চেপে যাত্রা করলাম আমরা।

বাইরে তখন বৃষ্টি হচ্ছে মূষলধারে। ৩০ মিনিটে আমরা গিয়ে পৌছলাম অক্সফোর্ড সার্কাসে। অক্সফোর্ড সার্কাস লন্ডনের গোলশান বনানী আর কি। অক্সফোর্ড সার্কাসে ওয়ার্ল্ডের নামিদামি ব্রান্ডের কাপড়-চোপড় ও জিনিষপত্র পাওয়া যায়। পয়সাওয়ালা লোক কেনাকাটা করার জন্য ওখানে যায়।

অক্সফোর্ড সার্কাসের অন্যতম আরো একটি বৈশিষ্ট্য হলো ক্লাব ও বারের ছড়াছড়ি। তাদের ভাষায় পাব্। রিলাক্স ও এনজয়ের আদর্শ স্থান। পয়সাঅলারা পয়সার চাপ কমাতে ওখানে যায়। পয়সা আপনার বেশি হয়ে গেছে।

কমাতে পারছেন না। ওখানে চলে যান, নিশ্চিত ফায়দা পাবেন। আমরা অবশ্য কেনাকাটা করি নি কিছু। অত টাকা আমাদের নেই। তবে জিনিষপত্রের দাম দেখতে তো পয়সা লাগে না।

জুতার মার্কেট দেখলাম। গ্লাসের ভেতরে রাখা জুতাগুলোর মধ্যে কোনো কোনো জুতা মোবারকের দাম হাজার পাউন্ড পর্যন্ত। এক হাজার মানে এক লক্ষ ৭ হাজার টাকা। এমন জুতা পায়ে দিলে তো মাথাই গরম হয়ে যাবার কথা। ক্লাব ও বারগুলো লোকে লোকারণ্য।

তারুণ্যের জয়জয়কার। নেশার জলে মিউজিকের তালে ওরা নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে পুরোদমে। টাস টাস শব্দে কান ঝালাপালা হবার মতো অবস্থা। বাইরে থেকেই আমরা অবলোকন করছি। ভেতরের অবস্থা কত ভয়াবহ আল্লাই জানে।

ভেতরে ঢুকতে পারলে আরো কিছু তথ্য যোগাড় করা যেতো। সেটা সম্ভব না তিন কারণে। প্রথমত: পাস লাগে। দ্বিতীয়ত: টাকা। তৃতীয়ত: ইচ্ছে।

পাস, টাকা, ইচ্ছা কোনোটাই আমাদের নেই। ফিরে আসার সময় লক্ষ্য করলাম ওয়েস্ট মিনিষ্টার পার্লামেন্ট ভবনের সামনে কয়েকটি ঝুপড়ি। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে বেদেরা যেভাবে নৌকার মতো ঘর বানিয়ে বাস করে, অনেকটা সেরকম। অদ্ভুদ লাগলো আমার কাছে। আমির সাহেবকে জিজ্ঞেস করে জানলাম এরা রিফিউজি।

অধিকারের দাবিতে এখানে এসে শুয়ে আছে। প্রতিবাদের অভিনব পদ্ধতি। বাংলাদেশের বিরোধীদলের সাংসদরা এই পদ্ধতিটি বিবেচনায় আনতে পারেন। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা কাঁথা-বালিশ নিয়ে পার্লামেন্টের সামনে শুয়ে থাকতে পারেন। অবশ্য ফুলটাইম এসি-তে অভ্যস্ত নেতারা খোলা আকাশের নিচে কতক্ষণ থাকতে পারবেন, সেটাও একটা কথা।

...চলবে

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।